জিপিএ-৫ পেলেই মিষ্টি, সৎ কাজের জন্য নেই উচ্ছ্বাস: আহমাদুল্লাহ

সামাজিক সাহায্য সংস্থা আস-সুন্নাহ ফাউন্ডেশনের চেয়ারম্যান শায়খ আহমাদুল্লাহ বলেছেন, খুব কম মা-বাবাই আছেন, সন্তানের সৎ কাজকে যারা উচ্ছ্বাস ভরা হৃদয়ে অভিনন্দিত করেন। বিপদের মুখেও ছেলে সত্য কথা বলেছে, অন্যায়ের প্রতিবাদ করেছে, সুযোগ থাকার পরও ঘুষ নেয়নি-- এই আনন্দে বাবা-মা কখনো মিষ্টি বিতরণ করেছেন, বাংলাদেশের ইতিহাসে এমন ঘটনা হয়ত একবারও ঘটেনি। অথচ জিপিএ-৫ পেলে মিষ্টির বন্যা বইয়ে দেব-- এমন ঘোষণা আমরা অহরহ শুনছি।

সোমবার (১৪ জুলাই) নিজের ভেরিফায়েড ফেসবুক পেজে এক পোস্টে তিনি এসব কথা লেখেন।

তিনি আরও লেখেন, প্রতি বছর এসএসসি পরীক্ষার রেজাল্টকে কেন্দ্র করে যে লাগামহীন উন্মাদনা দেখা যাচ্ছে, তা আমাদেরকে শঙ্কিত ও ব্যথিত করছে। পরীক্ষায় ভালো ফল করা নিঃসন্দেহে আনন্দের ঘটনা। কিন্তু সেই আনন্দের উদযাপন নির্দিষ্ট মাত্রার ভেতর হওয়াই শোভনীয়।

আস-সুন্নাহ ফাউন্ডেশনের চেয়ারম্যান লেখেন, এদেশের মিডিয়াগুলোও এই পরীক্ষাকে ঘিরে যেভাবে সংবাদ কাভারেজ দেয়, অন্য কোনো দেশে এর নজির আছে বলে আমাদের জানা নেই। এই অতি উন্মাদনার কারণেই পরীক্ষায় যারা ভালো করতে পারে না, তাদের ভেতর অপরাধবোধ তৈরি হয়, তারা ডিপ্রেশনে চলে যায়। এক পর্যায়ে অনেকে আত্মহত্যার মতো ভয়ংকর সর্বনাশা পথ বেছে নেয়। এই শিক্ষার্থীদের ঝরে পড়ার পেছনে আমাদের মিডিয়ার যেমন দায় আছে, তেমন দায় আছে সন্তানদের প্রতিযোগিতার বাজারে ছেড়ে দেয়া মা-বাবাদেরও।

তিনি আরও লেখেন, সামগ্রিক জীবনের সাফল্যের তুলনায় একটি পরীক্ষায় ভালো ফলাফল করা আঁচড় রেখে যাওয়ার মতো বড় ঘটনা নয়।

তারপরও এই উন্মাদনা প্রমাণ করে, আমরা দিন দিন খুব বেশি ভোগবাদী, বস্তুবাদী এবং পরকাল ভোলা ইহজাগতিক মানুষ হয়ে উঠছি।

আহমাদুল্লাহ লেখেন, সততা নয় বরং পরীক্ষায় পাস করাই জীবনের প্রধান লক্ষ্য হয়ে ওঠায় অনেক বাবা-মা প্রয়োজনে সন্তানের নকল করারও অনুমোদন দেন। পাশের ভালো ছাত্রের খাতা দেখে লিখতে না পারলে অনেক সন্তান ভর্ৎসনার শিকার হয়। কী অদ্ভুত মনোবৈকল্য আমাদের!

তিনি আরও লেখেন, জিপিএ ৫ সাময়িকের সাফল্য। কিন্তু মুমিনের জীবনে চূড়ান্ত সাফল্য তো তখনই আসবে, যখন সে জাহান্নাম থেকে বেঁচে চির সুখের জান্নাতে প্রবেশ করতে পারবে। মহান আল্লাহ পবিত্র কোরআনে এটাকেই আসল সফলতা বলেছেন। আর বুদ্ধিমান তো সে, যে কিনা সাময়িকের সাফল্যের ফাঁদে আটকা না পড়ে চূড়ান্ত সফলতার জন্য চুপচাপ কাজ করে যায়।

শেষে লেখেন, জীবন অনেক দীর্ঘ জার্নির নাম। জিপিএ-৫ পাওয়ার পরও অনেক শিক্ষার্থী পরবর্তী জীবনে ব্যর্থ হয়। আবার জিপিএ-৫ না পেয়েও বহু মানুষ পরবর্তী জীবনে সফল হয়। তাই সাময়িকের এই সাফল্যকে উন্মাদের মতো উদযাপন করা শোভনীয় নয়।

এমআর/টিকে 

Share this news on:

সর্বশেষ

img
এবার আমাদের লক্ষ্য সংসদ ভবন : নাহিদ Jul 16, 2025
img
অ্যাশেজ খেলার জন্য যেকোনো কিছু করতে প্রস্তুত আর্চার Jul 16, 2025
img
কলাপাড়ায় ইউএনওর বদলিতে মিষ্টি বিতরণ Jul 16, 2025
img
সিলেবাস সংস্কারে জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের সঙ্গে ইউনিসেফের চুক্তি Jul 16, 2025
img
আবরার ফাহাদকে আসলেই ওরা মারতে পারে নাই, ডকুমেন্টারিটা দেখা শেষ করে স্তব্ধ হয়ে থাকলাম : সংস্কৃতি উপদেষ্টা Jul 16, 2025
কনার ডিভোর্স পেপারে দেখা গেল নুসরাত ফারিয়ার নাম Jul 16, 2025
img
বিরল ঘটনা, পবিত্র কাবাঘরের ঠিক উপরে সূর্যের অবস্থান Jul 16, 2025
img
সড়ক দুর্ঘটনায় প্রাণ গেল শতবর্ষী কিংবদন্তি দৌড়বিদ ফৌজা সিংয়ের Jul 16, 2025
img
কিশোরগঞ্জে বজ্রপাতে প্রাণ হারাল ১ জন Jul 16, 2025
img
দেশে কোনো হত্যাকাণ্ডই সাম্প্রদায়িক সহিংসতা কিংবা সাম্প্রদায়িকতার কারণে সংঘটিত হয়নি : পুলিশ সদর দপ্তর Jul 16, 2025
কুড়িগ্রামে শহীদ পরিবারের পাশে রিজভী, জানালেন আন্দোলনের পটভূমি Jul 16, 2025
img
নিবন্ধন প্রত্যাশী দলগুলোকে ত্রুটি সংশোধনে ১৫ দিন সময় দিয়ে ইসির চিঠি Jul 16, 2025
img
জুলাই শহিদ দিবস উপলক্ষ্যে ১৬ জুলাই দেশের সকল মসজিদে বিশেষ দোয়া-মোনাজাত Jul 16, 2025
img
পার্বত্য এলাকায় একীভূতকরণ প্রক্রিয়া দ্রুততর করতে হবে : সুপ্রদীপ চাকমা Jul 16, 2025
img
রাজশাহীতে মহিলা আওয়ামী লীগ নেত্রীসহ আটক ২০ জন Jul 16, 2025
img
রাজশাহীর বাগমারায় মাছ ধরতে গিয়ে বজ্রপাতে প্রাণ হারাল এক যুবক Jul 16, 2025
img
দেশের সব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে জুলাই পুনর্জাগরণ উদযাপনে ডকুমেন্টারি প্রদর্শনের নির্দেশ মাউশি’র Jul 16, 2025
img
জুলাই গণঅভ্যুত্থানে মাঠে ছিলাম ‘ক্ষুব্ধ নারী সমাজ’ প্লাটফর্মের ব্যানারে : ফরিদা আখতার Jul 16, 2025
img
মাদরাসা শিক্ষার্থীদের ইংরেজি চর্চা করা উচিত : ধর্ম উপদেষ্টা Jul 16, 2025
img
বাংলাদেশে ভারতীয় শিল্পীদের ‘নিষিদ্ধ’, জয়াকে রেড কার্পেটে? প্রশ্ন তুললেন জুঁই Jul 16, 2025