শেখ হাসিনাসহ আওয়ামী লীগের শীর্ষ নেতাদের বিরুদ্ধে করা মামলার বিচারকাজ শেষে রায় ঘোষণা হতে পারে চলতি বছরের ডিসেম্বরের মধ্যেই। এ তথ্য নিশ্চিত করেছে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল। ট্রাইব্যুনালের চিফ প্রসিকিউটর মোহাম্মদ তাজুল ইসলাম বলেন, ‘এক বছরে বিচারকাজের যে অগ্রগতি, তাতে ডিসেম্বরের মধ্যেই কয়েকটি মামলার বিচারকাজ শেষ করা সম্ভব। সেই গতিতে বিচারকাজ এগিয়ে যাচ্ছে।‘
ইতোমধ্যে দুটি মামলার আনুষ্ঠানিক বিচার শুরু হয়েছে। এর মধ্যে সবচেয়ে আলোচিত মামলায় শেখ হাসিনা, সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল ও পুলিশের সাবেক আইজিপি চৌধুরী আবদুল্লাহ আল-মামুনের বিরুদ্ধে পাঁচটি অভিযোগ গঠন করা হয়েছে। এই মামলায় রাজসাক্ষী হয়েছেন চৌধুরী আবদুল্লাহ আল-মামুন।
অপর মামলাটি রাজধানীর চানখাঁরপুলে ছয়জনকে গুলি করে হত্যার ঘটনায় করা। এই মামলায় আসামি ঢাকা মহানগর পুলিশের সাবেক কমিশনার হাবিবুর রহমানসহ পুলিশের আট সদস্য।
এছাড়া সাভারের আশুলিয়ায় হত্যা ও রংপুরে বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র আবু সাঈদ হত্যার ঘটনায় করা মামলাগুলো ট্রাইব্যুনাল আমলে নিয়েছে। উল্লেখযোগ্যভাবে, আদালত অবমাননার এক মামলায় শেখ হাসিনাকে ছয় মাসের কারাদণ্ড দিয়েছেন ট্রাইব্যুনাল।
ট্রাইব্যুনাল সূত্রে জানা গেছে, জুলাই-আগস্টের ঘটনায় মানবতাবিরোধী অপরাধের ৩৫০টির বেশি অভিযোগ জমা হয়েছে। যার মধ্যে প্রায় সব অভিযোগেই শেখ হাসিনার নাম রয়েছে। বর্তমানে প্রায় ৫০টিরও বেশি অভিযোগের তদন্ত চলছে।
এর মধ্যে আওয়ামী লীগের আমলের দেড় দশকে গুম-খুন, জঙ্গি নাটক এবং শাপলা চত্বরে হত্যাকাণ্ডের অভিযোগও রয়েছে। এসব ঘটনায় শেখ হাসিনা ছাড়াও সাবেক মন্ত্রী, আওয়ামী লীগের সাবেক সংসদ সদস্য, র্যাব ও পুলিশের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের নাম রয়েছে।
গত বছরের ১৪ অক্টোবর হাইকোর্ট বিভাগের অতিরিক্ত বিচারপতি মো. গোলাম মর্তূজা মজুমদারকে চেয়ারম্যান করে পুনর্গঠিত হয় আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল। বিচার কার্যক্রম শুরু হয় ১৮ অক্টোবর ৪৬ জনের বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানার মাধ্যমে, যার মধ্যে ছিলেন শেখ হাসিনা ও ওবায়দুল কাদের। চলতি বছরের ৮ মে বিচারকাজ আরও ত্বরান্বিত করতে গঠন করা হয় দ্বিতীয় ট্রাইব্যুনাল। যার নেতৃত্বে আছেন অবসরপ্রাপ্ত বিচারপতি নজরুল ইসলাম চৌধুরী।
প্রসিকিউটর আব্দুস সাত্তার পালোয়ান বলেন, রাজধানীর রামপুরার ঘটনায় করা মামলার প্রতিবেদন প্রায় চূড়ান্ত করেছে তদন্ত সংস্থা। হয়তো শিগগির তা প্রসিকিউশনে জমা হবে। বর্তমানে যে গতিতে চলছে, তাতে ডিসেম্বরের মধ্যে দুটি ট্রাইব্যুনালে অন্তত চার-পাঁচটি মামলার বিচারকাজ শেষ হতে পারে।
আগামী ৫ আগস্ট আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের এক বছর পূর্ণ হবে। এখনো জুলাই হত্যাকাণ্ডের কোনো মামলার বিচার শেষ না হওয়ায় নিহতদের পরিবার হতাশ। দ্রুত বিচারের দাবি উঠছে।
টিকে/