মাত্র ছয় মাস আগে স্বপ্নের সংসার শুরু করেছিলেন নিঝুম ও তৌকির ইসলাম সাগর। মেহেদীর রং মোছার আগেই নিঝুমের জীবন থেকে চিরতরে হারিয়ে গেলেন তার স্বামী সাগর। ঢাকার উত্তরায় বিমানবাহিনীর একটি প্রশিক্ষণ বিমান বিধ্বস্তের ঘটনায় নিহত হন পাইলট তৌকির ইসলাম সাগর। এই ঘটনায় বাড়িতে এখন চলছে শোকের মাতম।
সোমবার দুপুর থেকে রাজশাহীর উপশহরের ৩ নম্বর সেক্টরে সাগরের পৈতৃক বাড়িতে স্বজনদের আহাজারি আর কান্নার রোল পড়ে। বিকেল ৫টার দিকে বিমানবাহিনীর বিশেষ বিমানে সাগরের বাবা তহুরুল ইসলাম, মা সালেহা খাতুন, বোন তাসনিয়া ইসলাম সৃষ্টি, বোনের স্বামী এবং মামাকে ঢাকায় নিয়ে যাওয়া হয়।
রাজশাহীর পরিচিত মুখ সাগর রাজশাহীর গভঃ ল্যাবরেটরিস হাই স্কুলে ৬ষ্ঠ শ্রেণি পর্যন্ত পড়েছেন। এরপর পাবনা ক্যাডেট কলেজে ভর্তি হন। ২০১০ সালে পাবনা ক্যাডেট কলেজে সপ্তম শ্রেণিতে ভর্তি হন সাগর। ২০১৬ সালে তিনি বাংলাদেশ বিমানবাহিনীতে যোগ দেন এবং একজন দক্ষ পাইলট হিসেবে ক্যারিয়ার গড়ে তোলেন। তার স্ত্রী নিঝুম ঢাকার একটি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষকতা করেন। সাগরের বাবা তহুরুল ইসলাম একজন ব্যবসায়ী, আর মা সালেহা খাতুন গৃহিণী।
তার একমাত্র বোন তাসনিয়া ইসলাম সৃষ্টি রাজশাহীর একটি বেসরকারি মেডিকেল কলেজের শিক্ষার্থী। তাদের গ্রামের বাড়ী চাঁপাইনবাবগঞ্জ জেলার কানসাটে।
তবে বোনের পড়াশোনার জন্য তারা রাজশাহীর উপশহরে একটি বাসায় থাকতেন। সাগর স্ত্রীকে নিয়ে থাকতেন ঢাকায়।
সাগরের নানা অবসরপ্রাপ্ত শিক্ষক আজিজুর রহমান নাতিকে হারিয়ে বারবার কান্নায় ভেঙ্গে পড়েন। বলেন, “আমার নাতি অনেক ভালো ছেলে ছিল। কিছুদিন আগেই তার বিয়ে হয়েছিল। পারিবারিকভাবে তাদের বিয়ে দেওয়া হয়। নতুন জীবন শুরু করেছিল তারা। কিন্তু এখন আমার নাতবউ একা হয়ে গেল।”
সাগরের চাচা সাদিকুল ইসলাম বলেন, “সাগরকে পরিবার ও এলাকার সবাই খুব ভালোবাসতো। সে সবাইকে সম্মান করতো। তার মতো ভালো ছেলেকে হারানোর বেদনা আমাদের সারাজীবন তাড়া করে বেড়াবে।” সাগরের এই অকাল প্রয়াণে শুধু তার পরিবারই নয়, পুরো এলাকায় শোকের ছায়া নেমে এসেছে।
সাগরের দাফন কোথায় হবে, তা এখনো চূড়ান্ত হয়নি। তার চাচা সাদিকুল ইসলাম জানান, পরিবারের সঙ্গে আলোচনা করে এ বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে। লাশ আগে রাজশাহীতে আনা হবে। এরপর গ্রামের বাড়ীতে নেয়া হবে দাফনের জন্য।