বাংলাদেশে নির্বাচন ব্যবস্থায় পিআর পদ্ধতির পক্ষে রাজনৈতিক বিশেষজ্ঞরা

বাংলাদেশের বিদ্যমান নির্বাচন ব্যবস্থার সংস্কারের প্রয়োজনীয়তা নিয়ে বিভিন্ন রাজনৈতিক দল ও বিশিষ্টজনেরা নতুন করে পিআর (প্রপোরশনাল রিপ্রেজেন্টেশন) পদ্ধতির পক্ষে মত দিয়েছেন। জামায়াত থেকে শুরু করে ইসলামী আন্দোলন, সাবেক সামরিক কর্মকর্তা ও শিক্ষাবিদদের একাংশ মনে করছেন, প্রচলিত ব্যবস্থা দেশে সুষ্ঠু ও অংশগ্রহণমূলক নির্বাচন নিশ্চিত করতে ব্যর্থ।

তাদের মতে, পিআর পদ্ধতি নিলে সব দলের অংশগ্রহণ সহজ হবে এবং জনপ্রতিনিধিত্বমূলক সরকার গঠন সম্ভব হবে। তবে কেউ কেউ বলেছেন, জনগণ এখনো এ পদ্ধতির সঙ্গে পরিচিত নয় এবং প্রশাসনিক প্রস্তুতিরও ঘাটতি রয়েছে।

বৃহস্পতিবার (২৪ জুলাই) বিকালে সিরড্যাপের একটি মিলনায়তনে সেন্টার ফর অ্যাডভান্সড স্টাডিজ অ্যান্ড থটস আয়োজিত ‌‘বাংলাদেশ নির্বাচন পদ্ধতি; পর্যালোচনা ও সুপারিশ’ গোল টেবিল বৈঠকে এসব কথা বলেন বক্তারা।

বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর নায়েবে আমির ডা. সৈয়দ আব্দুল্লাহ মো. তাহের বলেন, বাংলাদেশের জন্য কোন নির্বাচন পদ্ধতি যৌক্তিক? আমি বলবো একটিও না। মানুষ কিন্তু পরিবর্তন চাচ্ছে। আপনার যদি বলেন বাংলাদেশের কোন নির্বাচন ভালো হয়েছে, আমি কিন্তু বলবো একটি নির্বাচনও ভালো হয়নি। অনেকে বলে ১৯৯৬ সালের কথা। কিন্তু আমাদের কোনো নির্বাচনই ভালো হয়নি। আমরা মোড়াল জায়গাতে অনেকটা পিছিয়ে আছি।

তিনি আরও বলেন, নির্বাচন ব্যবস্থায় পিআর পদ্ধতি আমাদের জন্য আপাত দৃষ্টিতে প্রয়োজন। কিন্তু বাংলাদেশের মানুষ এটা এখনো একসেপ্ট করেনি। এটা মানুষের সামনে সহজভাবে উপস্থাপন করতে হবে, যেন তারা সহজে বুঝতে পারে।

ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের প্রেসিডিয়াম সদস্য আশরাফ আলী আকন বলেন, পিআর আমরা ২০০৮ সালে ইশতিহারে দিয়েছিলাম। কিন্তু সেদিন আমাদের একটা মানুষও সাপোর্ট করে নাই। অথচ এখন পিআর নিয়ে নানা আলোচনা হচ্ছে। অনেককেই দেখছি গত ৫৩ বছর যাবত গণতন্ত্রের জন্য মায়া কান্না করছে। দেশ শুধু সরকার চালায় না, এর জন্য একটি বিরোধী দল লাগে। দেশ পরিচালনার জন্য বুদ্ধিজীবীদের উচিত সঠিক বুদ্ধি দেওয়া।

শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের লোক প্রশাসন বিভাগের ড. শামিমা তাসনীম বলেন, ২০২৪ সালের আন্দোলনের পর আমাদের ভোটারদের মধ্যে পরিবর্তন এসেছে। গত ১৫ বছর কিন্তু দেশে কোন ভালো নির্বাচন হয়নি। আমাদের যে নির্বাচন ব্যবস্থা সেখানে শুধুমাত্র শামীম ওসমানের মতো মানুষরাই নির্বাচিত হতে পারে। অন্যরা কিন্তু নির্বাচিত হতে পারে না। যদি রাজনীতিবিদদের চরিত্র না পাল্টায় তাহলে আমাদের কোনো কিছুই করার থাকবে না।

তুরস্কের আতাতুর্ক ইউনিভার্সিটির সহকারী অধ্যাপক ড. মুমিন বলেন, বাংলাদেশের বর্তমান নির্বাচন ব্যবস্থা ফ্যাসিস্টের আঁতুড়ঘর বলে মনে হয়। বাংলাদেশের নির্বাচন ব্যবস্থায় পিআর সিস্টেমের জন্য তুরস্কে পিআর সিস্টেমটা মডেল হতে পারে।

বাংলাদেশ ইন্সটিটিউট অব গভর্ণেন্স অ্যান্ড ম্যানেজমেন্টের সহযোগী অধ্যাপক ড. জুবায়ের বলেন, পিআর পদ্ধতি এমন কঠিন কোনো ব্যাবস্থা নয় যে তা সংস্কার করা যাবে না। তবে হ্যাঁ এই পদ্ধতিতে তৃতীয় অনেক শক্তি সহজে আসতে পারে, যা ক্ষতির কারণ হতে পারে। কিন্তু আমরা যদি বিশ্বের অন্য দেশ গুলোর দিকে থাকাই তাহলে তুরস্কের যে পদ্ধতি অবলম্বন করেছে তা ব্যাবহার করতে পারি৷ কারণ, সেখানে বলা হয়েছে কোনো দল যদি ৫ শতাংশের কম ভোট পায় তাহলে সেই দল কোনো আসন পাবে না। আমরা সে সমস্ত পদ্ধতি ব্যাবহার করতে পারি।

লে. কর্নেল (অব.) মাকসুদুল হক বলেন, আমাদের আগে বুঝতে হবে যে ভোট করার জন্য আমাদের পুলিশ এবং প্রশাসন কতটুকু তৈরি আছে। ভোটের সময় ভোটারদের উপর বা কেন্দ্রে অন্যায়ভাবে প্রভাবিত কতটুকু রুখতে পারবে সেটা বড় বিষয়। না হলে কোনো পদ্ধতি ব্যাবহার করলেও কাজ হবে না।

কর্নেল অবসরপ্রাপ্ত আশরাফ আল দীন বলেন, পিআর আমাদের দেশের নতুন কিন্তু পৃথিবীতে নতুন না। পিআর চাচ্ছি আমরা সুশাসনের জন্য। বাংলাদেশের দুই একটি দল ছাড়া বাকিরা কিন্তু পিআর চাচ্ছে। পিআরের কিন্তু নানা ভাগ রয়েছে। পিআর এর জন্য জনগণকে প্রস্তুত করতে হবে।

সেন্টার ফর অ্যাডভান্সড স্টাডিজ অ্যান্ড থটসের এক্সিকিউটিভ ডিরেক্টর প্রফেসর ড. মোহাম্মদ আবদুর রবের সভাপতিত্বে মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন নর্থ সাউথ বিশ্ববিদ্যালয়ের ব্যবসায় ও অর্থনীতি বিভাগের ডিন প্রফেসর ড. এ কে এম ওয়ারেসুল করিম।

কেএন/টিকে

Share this news on:

সর্বশেষ

img
রাকসু নির্বাচনে প্রার্থীর চূড়ান্ত তালিকা সন্ধ্যায়, এরপর প্রচার-প্রচারণা Sep 14, 2025
img
নির্বাচনকে সামনে রেখে এক ঘোর অনিশ্চয়তা তৈরি হচ্ছে : জাহেদ উর রহমান Sep 14, 2025
img
কারাবন্দি আসামিদের সাজার মেয়াদ কমানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছে সরকার: স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা Sep 14, 2025
img
পটুয়াখালীর বাউফল আওয়ামী লীগ নেতা সেলিম আটক Sep 14, 2025
img
সীমানা পুনর্বহালের দাবিতে ঢাকা-পাবনা মহাসড়ক অবরোধ Sep 14, 2025
img
মেক্সিকোর ইউকাতানে সড়ক দুর্ঘটনায় নিহত ১৫ Sep 14, 2025
img

জুলাই অভ্যুত্থান

আশুলিয়ায় মরদেহ পোড়ানো মামলার সাক্ষ্যগ্রহণ আজ Sep 14, 2025
img
আগারগাঁওয়ে পিকেএসএফ ভবন-২ উদ্বোধন করলেন প্রধান উপদেষ্টা Sep 14, 2025
img
ডাকসু নেতাদের মধ্য থেকে ৫ সিনেট সদস্য নির্বাচিত Sep 14, 2025
img
ভারত-পাকিস্তান ম্যাচ ঘিরে দুবাই পুলিশের কড়া সতর্কবার্তা Sep 14, 2025
img
মেসির পেনাল্টি মিস, শার্লটের কাছে বড় হার মিয়ামির Sep 14, 2025
img
হ্যারি কেইনের জোড়া গোলে হামবুর্গকে উড়িয়ে দিল বায়ার্ন Sep 14, 2025
img
এখনো আমরা ডোর টু ডোর শিক্ষার্থীদের কাছে যাব: সাদিক কায়েম Sep 14, 2025
img
বিএনপি নির্বাচিত হলে দুই মাসে গ্যাস সুবিধা পাবে নাটোরবাসী: দুলু Sep 14, 2025
img
ফরিদা পারভীনের মৃত্যুতে শাকিব খানের শোকবার্তা Sep 14, 2025
img
ঢাকাসহ ৬ বিভাগে অতি ভারী বৃষ্টির সতর্কতা Sep 14, 2025
img
নেপালে অন্তর্বর্তী সরকারের নতুন মন্ত্রিসভা গঠিত হবে জনতার ভোটে, ঘোষণা আজ Sep 14, 2025
img
রণবীর-দীপিকার বিচ্ছেদ নিয়ে নীতু কাপুরের মন্তব্য Sep 14, 2025
img
ভেঙে দেয়া পার্লামেন্ট পুনর্বহাল চায় নেপালের শীর্ষস্থানীয় আট দল Sep 14, 2025
img
জিম্মি চুক্তির পথে প্রধান বাধা নেতানিয়াহু Sep 14, 2025