বেন স্টোকসের অফ স্টাম্পের বাইরের লেংথ ডেলিভারিতে ড্রাইভ করতে গিয়ে গালিতে বেন ডাকেটের হাতে ক্যাচ দিলেন শার্দুল ঠাকুর। ডানহাতি ব্যাটার আউট হওয়ায় ব্যাটিংয়ে আসবেন কে? জসপ্রিত বুমরাহ, আনশুল কাম্বোজ নাকি মোহাম্মদ সিরাজ-স্বাভাবিকভাবেই এমনটা ভাবছিলেন সবাই। তবে সবাইকে অবাক করে, বিস্ময় জাগিয়ে ব্যাটিংয়ে এলেন ঋষভ পান্ত। শার্দুল তখনো ড্রেসিং রুমে ফেরেননি।
হাঁটতে হাঁটতে অবশ্য ড্রেসিং রুমের দিকেই যাচ্ছিলেন। এমন সময় ব্রডকাস্টারদের ক্যামেরার লেন্স তাক করে ধরলেন ভারতের ড্রেসিং রুমের দিকে। বাঁ হাতে গ্লাভস ও ব্যাট নিয়ে ম্যানচেস্টারে সিড়ি বেয়ে খুঁড়িয়ে খুঁড়িয়ে নামছেন পান্ত। বাঁহাতি উইকেটকিপারের যখন সিড়ি বেয়ে নামছেন তখন ধারাভাষ্যকারদের কণ্ঠেও উচ্ছ্বাস, বিস্ময় ছুঁয়ে গেছে। ম্যানচেস্টারের সমর্থকরা দাঁড়িয়ে করতালিতে স্বাগত জানালেন সাহসী পান্তকে।
ইংল্যান্ড সফর থেকে ছিটকে যাওয়ার পরও ভারতীয় ব্যাটারের এমন সাহসে মুগ্ধ নাসের হুসেইন। ইংল্যান্ডের সাবেক অধিনায়ক জানান, প্রতিভার মতো পান্তের বড় একটা হৃদয়ও আছে। স্কাই স্পোর্টসের সঙ্গে আলাপকালে তাকে নিয়ে নাসের বলেন, ‘সে অনেক সাহসের পরিচয় দিয়েছে। সে অনেক বড় একটা ঝুঁকি নিয়েছে। তাঁর প্রতিভা আছে কিন্তু একটা বড় হৃদয়ও আছে।’
পান্তের চোটের ঘটনাটি ঘটে ম্যানচেস্টার টেস্টের প্রথম দিনের শেষ বিকেলে। ইনিংসের ৬৮তম ওভারে ক্রিস ওকসের ফুলার লেংথ ডেলিভারিতে রিভার্স সুইপ করতে চেয়েছিলেন পান্ত। তবে ব্যাটে বলে করতে পারেননি তিনি। বল পায়ে লাগতেই লেগ বিফোর উইকেটের আবেদন করেন ওকস এবং ইংল্যান্ডের ফিল্ডাররা। তবে তাদের আবেদনে সাড়া দেননি অনফিল্ড আম্পায়ার। পান্তকে ফেরাতে তাৎক্ষণিকভাবে রিভিউ নেয় ইংল্যান্ড।
রিভিউ নিলেও পান্তকে আউট করতে পারেনি স্বাগতিকরা। আউট না হলেও পায়ে বল লাগায় তখনই মাটিতে পড়ে যান বাঁহাতি এই ব্যাটার। পা থেকে জুতা খোলার পর দেখা যায় রক্ত বের হচ্ছে। এমন অবস্থায় প্রাথমিক চিকিৎসা দেয়া হলেও খেলার মতো অবস্থায় ছিলেন না তিনি। পায়ে ভর দিয়ে মাটিতে দাঁড়িয়ে থাকতে না পারায় গাড়িতে করে বাইরে নিয়ে যাওয়া হয় পান্তকে। মাঠের বাইরে নিয়ে যাওয়ার পরই স্ক্যান করাতে হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয় ভারতীয় তারকা ব্যাটারকে।
সিটি স্ক্যান শেষে জানা যায়, পান্তের গোড়ালি ও পায়ের আঙুলের মধ্যে অবস্থিত হাড়ে চিড় ধরা পড়েছে। প্রাথমিকভাবে ধারণা করা হচ্ছে, বাঁহাতি ব্যাটারকে ৬-৮ সপ্তাহ বিশ্রামে থাকতে হবে। হোটেলের বাইরে মুনবুট পড়তে দেখা গেলেও দ্বিতীয় দিনের প্রথম সেশনে ব্যাটিংয়ে ফেরেন তিনি। ৪৮ বলে ৩৭ রান মাঠ ছাড়া পান্ত ব্যাটিংয়ে নেমে আরও ১৭ রান যোগ করেন।
আর্চারের স্লোয়ার ডেলিভারিতে ডিপ মিড উইকেট দিয়ে ছক্কা মেরে বীরেন্দর শেবাগের পাশে নাম লেখান তিনি। টেস্টে ভারতের হয়ে সমান ৯০টি করে ছক্কা মেরেছেন শেবাগ ও পান্ত। একটু পরই অবশ্য আর্চারের দুর্দান্ত এক ডেলিভারিতে বোল্ড হয়েছেন ৫৪ রানের ইনিংস খেলা বাঁহাতি এই ব্যাটার। শার্দুল মনে করেন, এমন ইতিবাচক মানসিকতাই পান্তকে যেকোনো ব্যথা কিংবা কষ্ট থেকে দূরে রাখে।
ভারতীয় অলরাউন্ডার বলেন, ‘পান্তের ইতিবাচক মনোভাব আর মানসিক দৃঢ়তাই তাকে যেকোনো ব্যথা কিংবা কষ্ট থেকে দূরে রাখে বলে আমি বিশ্বাস করি। ওর ব্যথা সহ্য করার ক্ষমতা অনেক বেশি, এটা আমি নিশ্চিতভাবে বলতে পারি। যদি সে সত্যিই ব্যথা অনুভব করে, তাহলে বুঝতে হবে চোটটা সত্যিই গুরুতর, কারণ, এত সহজে তো ওর কিছু অনুভব হওয়ার কথা নয়।’
টিকে/