থাইল্যান্ড ও কম্বোডিয়া সংঘাতে বাস্তুচ্যুত ১ লাখ ৭৫ হাজার মানুষ

সীমান্ত বিরোধকে কেন্দ্র করে থাইল্যান্ড ও কম্বোডিয়া তৃতীয় দিনের মতো পাল্টাপাল্টি হামলা চালিয়েছে। এই সংঘাত আরও বিস্তৃত এলাকায় ছড়িয়ে পড়েছে এবং তিন দিনে উভয় দেশে অন্তত ৩২ জন নিহত হয়েছেন। এর মধ্যে থাইল্যান্ডে ১৯ জন (১৩ বেসামরিক, ৬ সেনা) এবং কম্বোডিয়ায় ১৩ জন (৮ বেসামরিক, ৩ সেনা) রয়েছেন। কম্বোডিয়া অবিলম্বে যুদ্ধবিরতির আহ্বান জানালেও ব্যাংকক থেকে জোরালো সাড়া মেলেনি।

আজ শনিবার সংঘাতের তৃতীয় দিনে থাইল্যান্ডের উপকূলীয় প্রদেশ ত্রাত এবং কম্বোডিয়ার পুরসাত প্রদেশে নতুন করে সংঘর্ষ শুরু হয়েছে, যা সংঘাতের অন্যান্য কেন্দ্র থেকে শতাধিক কিলোমিটার দূরে অবস্থিত। থাইল্যান্ডের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, সুরিন, উবন রাতচাথানি ও শ্রিসাকেত প্রদেশেও সংঘাত চলছে এবং আটটি জেলায় সামরিক আইন জারি করা হয়েছে। উভয় দেশেই প্রায় ১ লাখ ৭৫ হাজার মানুষকে নিরাপদে সরিয়ে নেওয়া হয়েছে (থাইল্যান্ডে ১ লাখ ৪০ হাজার, কম্বোডিয়ায় ৩৫ হাজার)।

উভয় দেশই একে অপরের বিরুদ্ধে পাল্টাপাল্টি অভিযোগ এনেছে। থাইল্যান্ড অভিযোগ করেছে, কম্বোডিয়ার সামরিক বাহিনী বেসামরিক এলাকাগুলোতে কামানের গোলা ও রকেট ছুড়ছে। অন্যদিকে, কম্বোডিয়া অভিযোগ করেছে, থাই বাহিনী বিতর্কিত ক্লাস্টার (গুচ্ছ) বোমা ব্যবহার করছে, যদিও থাইল্যান্ড এই অভিযোগের কোনো জবাব দেয়নি।

থাইল্যান্ড ও কম্বোডিয়ার মধ্যে এই সংঘাতের মূল কারণ শত বছরের বেশি পুরোনো সীমান্ত বিরোধ। ১৯০৭ সালে ফরাসি ঔপনিবেশিক সরকার কর্তৃক নির্ধারিত সীমানা মানচিত্র নিয়ে থাইল্যান্ডের আপত্তি রয়েছে, যা আন্তর্জাতিক বিচার আদালত (আইসিজে) পর্যন্ত গড়িয়েছে। তবে বরাবরই আদালতের রায় কম্বোডিয়ার পক্ষে গেছে। এই সংঘাতের বড় শিকার হচ্ছেন উভয় দেশের সাধারণ মানুষ।

রয়টার্সের প্রতিবেদনে থাইল্যান্ডের শ্রিসাকেত প্রদেশের মানুষের ভোগান্তির চিত্র তুলে ধরা হয়েছে, যেখানে প্রায় ৫ হাজার মানুষ অস্থায়ী আশ্রয়শিবিরে আশ্রয় নিয়েছেন।

গত মে মাসে সীমান্তে সংঘর্ষে এক কম্বোডীয় সেনা নিহত হওয়ার পর এবং সম্প্রতি স্থলমাইন বিস্ফোরণে থাইল্যান্ডের এক সেনা আহত হওয়ার জেরে দুই দেশের মধ্যে নতুন করে উত্তেজনা শুরু হয়। এর পরিপ্রেক্ষিতে বুধবার থাইল্যান্ড কম্বোডিয়া থেকে নিজেদের রাষ্ট্রদূতকে ডেকে নেয় এবং কম্বোডিয়ার রাষ্ট্রদূতকেও ব্যাংকক থেকে বহিষ্কার করে। এর পরদিনই সংঘাত শুরু হয়।

শুক্রবার জাতিসংঘের নিরাপত্তা পরিষদে এ বিষয়ে একটি রুদ্ধদ্বার বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়, যেখানে জাতিসংঘে কম্বোডিয়ার রাষ্ট্রদূত চেয়া কেও অবিলম্বে শর্তহীন যুদ্ধবিরতি এবং সীমান্ত বিরোধের শান্তিপূর্ণ সমাধানের আহ্বান জানান। তবে থাই পররাষ্ট্রমন্ত্রী মারিস সাঙ্গিয়ামপোংসা বলেছেন, যুদ্ধবিরতির আলোচনা এগিয়ে নিতে কম্বোডিয়ার উচিত সংঘাত অবসানের জন্য প্রকৃত আন্তরিকতা দেখানো।

মালয়েশিয়ার প্রধানমন্ত্রী আনোয়ার ইব্রাহিমসহ যুক্তরাষ্ট্র ও চীন এই সংঘাত বন্ধের আহ্বান জানিয়েছে, তবে থাইল্যান্ড এই ইস্যুতে তৃতীয় পক্ষের সংশ্লিষ্টতা চায় না।

এমআর   

Share this news on:

সর্বশেষ

img
নির্বাচন কমিশনের কাছে বাৎসরিক আয়-ব্যয়ের হিসাব জমা দিল বিএনপি Jul 27, 2025
img
মিলানের কাছে হার দিয়ে প্রাক-মৌসুম প্রস্তুতি শুরু লিভারপুলের Jul 27, 2025
img
জাতীয় দলে হস্তক্ষেপ করি না, স্পষ্ট বার্তা দিলেন বুলবুল Jul 27, 2025
img
পাকিস্তান সিরিজে প্রায় ৩ কোটি টাকার টিকিট বিক্রির রেকর্ড বিসিবির Jul 27, 2025
img
ফের ইংলিশ ও গ্রিনের ব্যাটে জয় পেল অস্ট্রেলিয়া Jul 27, 2025
img
ছন্দে ফিরলেন স্কারলেট, বক্স অফিস কাঁপাচ্ছে ‘জুরাসিক ওয়ার্ল্ড’ Jul 27, 2025
img
তারেক-বাবরের খালাসের বিরুদ্ধে আপিল শুনানি আজ Jul 27, 2025
img
অস্ট্রেলিয়ার সফর শেষে কানাডা যাচ্ছে ওয়ারফেজ Jul 27, 2025
img
আগস্টে নেইমার ও সান্তোসের সামনে কঠিন লড়াই Jul 27, 2025
img
অ্যানিমেল ২ নিয়ে প্রশ্নে ববি দেওলের সোজাসাপ্টা উত্তর Jul 27, 2025
img
১ লাখ ৮৩ হাজার অভিবাসীর পায়ে নজরদারির শেকল পরাতে চায় যুক্তরাষ্ট্র Jul 27, 2025
img
সার্জারির আশ্রয় পুরুষরাও গ্রহন করেন, দোষ হয় নারীদের : কাজল Jul 27, 2025
img
এশিয়া কাপে দ্বিমুখী সিদ্ধান্তে ভারত, ক্ষুব্ধ আজহারউদ্দিন Jul 27, 2025
img
আজ দেশে কত দামে স্বর্ণ ও রুপা বিক্রি হচ্ছে? Jul 27, 2025
img
মেসিকে ছাড়া গোলশূন্য ড্র মায়ামির Jul 27, 2025
img
যুক্তরাষ্ট্রে বিমানে যান্ত্রিক ত্রুটি, অল্পের জন্যে প্রাণে বাঁচেন ক্রুসহ ১৬৬ যাত্রী Jul 27, 2025
img
বিচার, সংস্কার, নির্বাচন এই মুহূর্তে বাংলাদেশের সবচেয়ে বড় স্বার্থ: জোনায়েদ সাকি Jul 27, 2025
img
জামালপুরে ২৮ জুলাই এনসিপির পদযাত্রা Jul 27, 2025
img
বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের ৩ নেতা বহিষ্কার Jul 27, 2025
img
গোপালগঞ্জে সংঘর্ষে নিহত রমজানের ঘটনায় আরও এক হত্যা মামলা Jul 27, 2025