রিকশাওয়ালার বাড়িতে লজিং থেকে বিখ্যাত বিজ্ঞানী

পাপলু রহমান, নিজস্ব প্রতিবেদক: সবকিছু পঁচে যায় কিন্তু প্লাস্টিক পঁচে না। এই প্লাস্টিক ছড়িয়ে ছিটিয়ে আছে সর্বত্র। দূষিত করছে নদী, ঢুকছে সমুদ্রেও।

প্লাস্টিক টিমের এক গবেষণায় বলা হয়েছে, ২০৫০ সালে সমুদ্রে মাছের চেয়ে প্লাস্টিকই বেশি থাকবে। তাহলে বুঝতেই পারছেন পৃথিবী কতোটা হুমকিতে!

ভাবুনতো এই প্লাস্টিক দিয়ে মেশিনের একদিকে ডিজেল, আরেকদিকে গ্যাস, অন্যদিকে কেরোসিন গড়গড় করে বের হচ্ছে। হ্যাঁ, অবিশ্বাস্য হলেও প্লাস্টিক বর্জ্য দিয়ে এসব জ্বালানি তৈরি করে বিশ্বকে তাক লাগিয়ে দিয়েছেন বিজ্ঞানী ড. মঈনউদ্দীন সরকার।

গর্বের বিষয় হলো- বিখ্যাত এই বিজ্ঞানীর বাড়ি কুমিল্লার দাউদকান্দিতে।

বাংলাদেশ টাইমসকে দেয়া এক সাক্ষাৎকারে তিনি বলেন, ‘স্কুলজীবনে আমি এক রিকশাচালকের বাড়িতে লজিং থেকেছি। তখন কী কেউ ভাবতো আজকে আমি এ অবস্থানে আসবো!’

তিনি বলেন, ‘১৪ বছর ধরে প্লাস্টিক নিয়ে গবেষণা করছি। আজ সুফল হয়েছে। আমেরিকাতে আমার এই প্রকল্প চালু হয়েছে। ইতিমধ্যে ডিজেল উৎপাদন হচ্ছে।’

তার গবেষণা অনুযায়ী, এক টন পরিত্যক্ত প্লাস্টিক থেকে ৩৪০ গ্যালন জ্বালানি তেল এবং ১১৬ কেজি এলপিজি গ্যাস উৎপাদন সম্ভব।

এই প্রযুক্তি ব্যবহারের জন্য বিজিএমইএর সাবেক সভাপতি আতিকুল ইসলাম তার সঙ্গে সাক্ষাত করেন। তারা বাংলাদেশের পরিত্যক্ত প্লাস্টিক ও পলিথিন থেকে জ্বালানি তেল উৎপাদন করার কথা জানিয়েছেন।

মঈনউদ্দীন বলেন, ‘আমি বাংলাদেশের আলো বাতাসে বড় হয়েছি। দেশের প্রতি আমার অনেক দায়বদ্ধতা আছে। এ দেশে আমি এ প্রযুক্তি চালু করতে চাই।’

১৯৯০ সালে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় থেকে রসায়নে এমএসসি করেন তিনি। এরপর বিদেশে পাড়ি জমান। তারপর লন্ডনের ম্যানচেস্টার ইন্সটিটিউট অব সায়েন্স অ্যান্ড টেকনোলজি থেকে পিএইচডি করেন। গবেষণা করেছেন যুক্তরাজ্যে, তাইওয়ানে, বার্লিনে এবং মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে। আর কাজ করেছেন কানাডা, জার্মানি, নেদারল্যান্ডসের মতো দেশে।

কীর্তিমান এই বাঙালির স্ত্রী আনজুমান আরাও একজন বিজ্ঞানী। বর্জ্য থেকে জ্বালানি উৎপাদনে তিনিও উল্লেখযোগ্য ভূমিকা রেখেছেন। তারা যুক্তরাষ্ট্রের ব্রিজফোর্টে থাকেন। বর্তমানে তারা Waste Technologies LLC (WTL) কোম্পানিটি পরিচালনা করছেন।

উল্লেখ্য, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের গুরুত্বপূর্ণ বিজ্ঞানীদের একজন ড. মইনউদ্দিন সরকার। নবায়নযোগ্য জ্বালানিবিষয়ক গবেষণায় অবদান রাখায় তিনি International Renewable Energy Innovator of the year ২০১০ সালে ভূষিত হন।

 

Share this news on: