টপ কমান্ডারদের বিচার, একটা বড় অংশের বিচার আগামী ডিসেম্বরের মধ্যে সমাপ্ত হবে: চিফ প্রসিকিউটর

জুলাই গণহত্যার বিচার প্রক্রিয়া যেভাবে এগোচ্ছে, টপ কমান্ডারদের বিচার, একটা বড় অংশের বিচার আগামী ডিসেম্বরের মধ্যেই সমাপ্ত হবে বলে আশাবাদ ব্যক্ত করেছেন আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের চিফ প্রসিকিউটর মোহাম্মদ তাজুল ইসলাম।

মঙ্গলবার (২৯ জুলাই) বিচার প্রশাসন প্রশিক্ষণ ইনিস্টিটিউটের মিলনায়তনে ‘জুলাই গণহত্যার বিচার আলোচনা ও তথ্যচিত্র প্রদর্শন’ অনুষ্ঠানে তিনি এই আশাবাদ ব্যক্ত করেন।

চিফ প্রসিকিউটর বলেন, আমাদের শহীদদের পরিবার, শহীদদের স্বজন, ভিকটিমদের আবেগকে যেমন অ্যাড্রেস করতে হয়, তাদের বিচারের যে দাবি, যে তৃষ্ণা, সেটা যেমন অ্যাড্রেস করতে হয়; একইভাবে আইন, আন্তর্জাতিক স্ট্যান্ডার্ড, আসামির অধিকার- এগুলোকে মেইনটেন করে এটা করতে হয়। সেটি করতে যে যুক্তিসঙ্গত সময় দরকার, সেটা আমরা নিয়েছি, সেটা আমরা নিচ্ছি। কিন্তু তার অর্থ এই নয় যে, এই বিচার বছরের পর বছর সময় লাগবে, তা না। যেভাবে বিচার প্রক্রিয়া এগোচ্ছে, টপ কমান্ডারদের বিচার, একটা বড় অংশের বিচার আগামী ডিসেম্বরের মধ্যেই সমাপ্ত হবে বলে আমরা আপনাদেরকে আশ্বাস দিতে পারি।

তিনি বলেন, আপনারা অনেকেই বিচারের কার্যের বাইরে যারা থাকেন, যারা বিচারের ব্যাপারে নন-টেকনিক্যাল পার্সন, তারা অনেক বিষয় হয়তো বিচারের ব্যাপারে বুঝতে পারেন না। আবেগের জায়গা থেকে তারা অনেক কথাই বলেন। আমরা বুঝি, এটা তাদের আবেগের কথা। যেমন বলা হয়, এক বছরও হয়ে গেল বিচার কেন হলো না? একটা রায় হলো না, করেন কি আপনারা? তো এটা বিষয় হচ্ছে যে, একটা বিচার এবং সেটা যদি গণহত্যার মতো ক্রাইম অ্যাগেনস্ট হিউম্যানিটির মতো মামলার বিচার হয়, সেটার বিচার কখনোই এভাবে দ্রুততার সঙ্গে করা যাবে না।

আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের প্রধান প্রসিকিউটর বলেন, মোবাইল কোর্টের ক্ষেত্রে যেটা করা সম্ভব হয়। ইন্টারন্যাশনাল ক্রাইমস ট্রাইব্যুনাল যেটা আছে, আমাদের তাদের পক্ষে সেই ধরনের বিচার করা সম্ভব নয়। এটার একটা নির্দিষ্ট প্রসিডিউর আছে। সেই প্রসিডিউর আমাদেরকে ফলো করতে হয়। আমরা সেপ্টেম্বর মাসে দায়িত্ব নিয়েছি। নভেম্বর পর্যন্ত কোর্ট সবকিছু ঠিকঠাক হতে সময় লেগেছে। তারপরে মাত্র কয়েক মাসের ব্যবধানে, ছয় মাসেরও কম সময়ের মধ্যে প্রথম তদন্ত রিপোর্ট কিন্তু আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের তদন্ত সংস্থা দিতে পেরেছে।

তিনি বলেন, আপনাদের এটাও মাথায় রাখতে হবে যে, তদন্ত সংস্থায় যেসব অফিসাররা কাজ করেন, তারা যদিও পুলিশ বাহিনী থেকে এসেছেন, তারা কিন্তু স্বৈরাচারের সঙ্গে সম্পৃক্ত কেউ না। কারণ অধিকাংশই স্বৈরশাসনের আমলে বঞ্চিত ছিলেন, ওএসডি ছিলেন, নতুবা বান্দরবানে ছিলেন। সেখান থেকেই বেছে বেছে আমাদেরকে তদন্ত কর্মকর্তা নিয়োগ করতে হয়েছে। এরপরে সমস্যা হচ্ছে যে, তারা তদন্ত করেছেন সাধারণ আইনের মামলার তদন্ত। ইন্টারন্যাশনাল ক্রাইমস ট্রাইব্যুনাল অ্যাক্টের অধীনে যে মামলা এখানে যে অপরাধ, এটা অপরাধের যে ধরন, অপরাধের যে উপাদান, বিচারের যে পদ্ধতি, সবকিছু কিন্তু সাধারণ আইনের থেকে আকাশ পাতাল পার্থক্য।

‘গণহত্যা কি পদ্ধতিতে, কি সিস্টেমে এটা হয়েছে, এই যে বিচারের প্রক্রিয়াটা এগুলো শেষ করে তদন্ত রিপোর্ট দাখিল করতে হয়, যে গুলি করেছে এখানে শুধুমাত্র সে আসামি না, যে গুলি করে নাই বা দেখেও নাই হয়তো চোখে কিন্তু কমান্ড দিয়েছে, গণভবনে বসে সে এক নাম্বার আসামি, এটাই হচ্ছে গণহত্যার বিচারের সঙ্গে সাধারণ বিচারের পার্থক্য,’ বলেন চিফ প্রসিকিউটর।

তিনি বলেন, আমাদের প্রথম তদন্ত রিপোর্ট ছয় মাসের কম সময় আমরা পেয়েছি। এই মুহূর্তে চারটা মামলার বিচার কার্যক্রম চলছে। আপনারা অনেকেই বলেন, বিচার দৃশ্যমান দেখি না। বিচার দৃশ্যমান। চারটা মামলার ওপেন বিচার চলছে। আমরা লাইভ সম্প্রচার করেছি কিছু কিছু অংশ। আগামী ৩ আগস্ট প্রথম সাক্ষী হবে শেখ হাসিনার মামলায়, শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে।

সিলেক্টিভ ওয়েতে শেখ হাসিনার মামলার সাক্ষী দেওয়ার জন্য ১০ কোটি লোক আছে। সবার সাক্ষী আমরা নেব না। আমরা সবচাইতে এই অপরাধ প্রমাণের জন্য যেসব সাক্ষীর দরকার তাদেরকেই সিলেক্ট করেছি। সেখান থেকে যারা বেস্ট উইটনেস, তাদেরকে দিয়েই আমরা মামলাটা প্রমাণ করব।

অনুষ্ঠানে স্বাগত বক্তব্য রাখেন আইন ও বিচার বিভাগ সচিব শেখ আবু তাহের। অনুষ্ঠানে তথ্যচিত্র প্রদর্শন করা হয়।

অনুষ্ঠানে মাইলস্টোন স্কুল ও কলেজে বিমান বিধ্বস্ত হওয়ার ঘটনায় নিহত ও জুলাই অভ্যুত্থানে নিহতদের স্মরণে এক মিনিট নিরবতা পালন করা হয়। পরে দোয়া ও মোনাজাত পরিচালনা করেন আইন ও বিচার বিভাগে যুগ্ম সচিব রুহুল আমিন।

অনুষ্ঠানে আরো উপস্থিত ছিলেন পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন উপদেষ্টা উপদেষ্টা সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান ও আমার দেশ পত্রিকার সম্পাদক মাহমুদুর রহমান।

কেএন/টিকে

Share this news on:

সর্বশেষ

img
রাজধানীতে বিশেষ অভিযানে গ্রেপ্তার ১৪ Nov 02, 2025
img
১৬ বছর পর আমন্ত্রণ ফেরানোর পর এবার বিটিভিতে গেলেন আসিফ Nov 02, 2025
img
নতুন রূপে শাহরুখ, ‘কিং’ সিনেমার টাইটেল ট্র্যাকে মুগ্ধ দর্শক Nov 02, 2025
img
ভুল করে গোল খাওয়ার পর আর্জেন্টাইন গোলরক্ষক মার্টিনেজের মন্তব্য Nov 02, 2025
img
ট্রাম্পের কড়া বার্তাকে ‘স্বাগত’ জানাল নাইজেরিয়ার সরকার Nov 02, 2025
img
‘শাপলা কলি’ পেয়ে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে এনসিপি নেতাকর্মীদের পোস্ট Nov 02, 2025
img
আগে ক্যাপাসিটি বিল্ড আপ, তারপর এলডিসি থেকে উত্তরণ : আমীর খসরু Nov 02, 2025
img
প্লট বরাদ্দে দুর্নীতি, পরিবারসহ হাসিনার বিরুদ্ধে আরও ৬ জনের সাক্ষ্য Nov 02, 2025
img
ভারতে ভয়াবহ সড়ক দুর্ঘটনায় প্রাণ গেল অন্তত ১৮ জনের Nov 02, 2025
img
সবচেয়ে ভারী স্যাটেলাইট উৎক্ষেপণ করছে ভারত Nov 02, 2025
img
৪ মাসে প্রবাসীরা দেশে রেমিট্যান্স পাঠালেন ১০.১৪ বিলিয়ন ডলার Nov 02, 2025
img
রাজনৈতিক অস্থিরতা কাটাতে হাতপাখার বিকল্প নেই : ফয়জুল করীম Nov 02, 2025
img
জীবন নরক হয়ে উঠতে পারে: শেহনাজ গিল Nov 02, 2025
img
বিএনপিকে সংলাপে বসার আহ্বান জানাল জামায়াত Nov 02, 2025
img
মুক্তির লড়াই কোনো আইন বা সংবিধান মেনে হয় না : ব্যারিস্টার ফুয়াদ Nov 02, 2025
img
জাতীয় সংসদে উচ্চ কক্ষ হলে কোরবানির গরুর দরে আসন বিক্রি হবে: ব্যারিস্টার ফুয়াদ Nov 02, 2025
img
গুরবাজের দুর্দান্ত ব্যাটিং, জিম্বাবুয়েকে হোয়াইটওয়াশ করল আফগানিস্তান Nov 02, 2025
ভিন্নধর্মী গল্প নিয়ে আসছে ‘দম’ Nov 02, 2025
img
ট্রাম্প জানেন না, কাল কী করবেন : ভারতের সেনাপ্রধান Nov 02, 2025
একাত্তরের হত্যাযজ্ঞের অভিযোগ অস্বীকার করলো জামায়াত Nov 02, 2025