১৫ বছর আগের গুজব নিয়ে মুখ খুললেন প্রেস সচিব

গত বছরের ১ জুলাইয়ে ফেসবুকে দেওয়া একটি পোস্ট নতুন করে শেয়ার করেছেন প্রধান উপদেষ্টার প্রেস সচিব শফিকুল আলম।

শুক্রবার (১ আগস্ট) বিকেলে নিজের ভেরিফাইড ফেসবুকে তিনি লিখেছেন, ২০১০ সালের নভেম্বরে আমি প্রথম গুজব শুনেছিলাম যে আমি জামায়াতপন্থি এবং সাবেক শিবিরকর্মী। সেবার আমি জীবনের সবচেয়ে বড় পেশাগত ভুলটি করেছিলাম- ইকোনমিক রিপোর্টার্স ফোরামের (ইআরএফ) সভাপতির পদে নির্বাচন করার সিদ্ধান্ত নিয়ে। কিছু বন্ধু আমাকে অনুরোধ করেছিল নির্বাচন করতে, বলেছিল যে ফিন্যান্সিয়াল এক্সপ্রেসে রিপোর্টিং ইনচার্জ এবং এএএফপিতে সাংবাদিক হিসেবে কাজের অভিজ্ঞতা আমার পক্ষে যাবে। আমি আপত্তি করিনি।

‘কিন্তু যখন দেখা গেলো আমি ফ্রন্ট-রানারের (যিনি আমারই এক সাবেক সহকর্মী ছিলেন ফিন্যান্সিয়াল এক্সপ্রেসে) একজন সম্ভাব্য প্রতিদ্বন্দ্বী হয়ে উঠছি, তখনই একটি পরিকল্পিত প্রচারণা শুরু হলো আমাকে হেয় প্রতিপন্ন করার জন্য। কারণ ফ্রন্ট-রানারের সাংবাদিকতার রেকর্ড খুব উজ্জ্বল ছিল না। তাই তারা আমার সাংবাদিকতাকে টার্গেট না করে আঘাত হানলো আমার ধর্মীয় পরিচয়ের ওপর। তারা ভোটারদের দেশের শীর্ষস্থানীয় পত্রিকার বিজনেস রিপোর্টারদের বলতে শুরু করলো যে আমি একজন জামায়াত সমর্থক এবং নিষিদ্ধ ঘোষিত জামায়াতের ছাত্রসংগঠন ইসলামী ছাত্রশিবিরের সদস্য ছিলাম।’

প্রেস সচিব লিখেছেন, প্রথমদিকে আমি এই অপপ্রচারে কোনো গুরুত্ব দিইনি। আমি জানতাম আমি কে। আমার কিছু সাংবাদিক বন্ধু জানতেন যে আমার পরিবারের ধর্মীয় পরিচয় মূলত সুফি মুসলমান। আমাদের বিশ্বাস, চিন্তা এবং অবস্থান জামাতের একেবারে বিপরীত। আমি ভেবেছিলাম সত্যটা আপনা আপনি উঠে আসবে এবং গুজব মরে যাবে। কিন্তু নির্বাচনের সময় যত ঘনিয়ে এলো, এই গুজব ততই জোরালো হতে থাকল। আর নির্বাচনের দিন আমি স্তম্ভিত হয়ে গেলাম- যাদের আমি একসময় নানা উপায়ে সাহায্য করেছিলাম, তারাই আমার দিকে তাকাতে চাইলো না।

আমি নির্বাচনে ভয়াবহভাবে হেরে গেলাম।

‘গত ১৫ বছর ধরে আমি এই গুজব বয়ে বেড়াচ্ছি। যখনই আমার কোনো প্রতিবেদন ‘প্রবাহের বিপরীতে’ যায়, তখনই গুজবটা আবার মাথাচাড়া দিয়ে ওঠে। আমি যখন ইসলামপন্থিদের বিরুদ্ধে রাষ্ট্রীয় বাহিনীর বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ড এবং মানবাধিকার লঙ্ঘনের বিরুদ্ধে লিখি, তখনই এই গুজবে সয়লাব হয়ে যাই। যুক্তি হলো ‘উনি নিশ্চয়ই একজন ইসলামপন্থি, তাই এদের অধিকারের পক্ষে লিখছেন। উপরন্তু, উনি নামাজ পড়েন এবং তার স্ত্রী হিজাব পরেন।’ আমি একবার এমন একজন জনপ্রিয় কথাসাহিত্যিকের ওপর ফিচার লিখেছিলাম, যিনি ইসলামী মূল্যবোধ ও প্রেম মিলিয়ে লেখেন। পশ্চিমে যেমন ‘ক্রিশ্চিয়ান রোমান্স’ নামে একটি সাহিত্যের ধারা আছে, এটি অনেকটা তেমনই। তখনও অনেকে প্রশ্ন তুলেছিল - কেন আমি ওনার ওপর লিখলাম?’

শফিকুল আলম আরও লিখেন, আমার ধারণা, আমাদের সমাজ এখন ‘ট্যাগিং সংস্কৃতি’ থেকে কিছুটা বের হয়ে এসেছে। এর একটি কারণ হলো যারা এই গুজব রটাত, তারা কখনও কোনো গবেষণা করত না। শুরুটা হতো ‘ভাই, আমি শুনছি ও জামায়াতি’ অথবা ‘ভাই, আমি ওরে নামাজ পড়তে দেখছি’ - এরপর তা বিদ্যুৎগতিতে ছড়িয়ে পড়ত। উদ্দেশ্য ছিল খুব পরিষ্কার: কারও ক্যারিয়ার শেষ করে দেওয়া বা তাকে চিরতরে চুপ করিয়ে দেওয়া। আপনি যদি নামাজি হন এবং আওয়ামী লীগ করেন, তাহলে সমস্যা নেই। কিন্তু আপনি যদি নামাজি হন এবং আওয়ামী লীগের সমর্থক না হন - তাহলেই আপনি এই ট্যাগিং সংস্কৃতির শিকার হবেন।


‘আজ জামায়াত ও শিবির নিষিদ্ধ হলো। কিন্তু গত ১৫ বছরে আমরা যে ধরনের উইচ-হান্টিং দেখেছি, তা ছিল আমাদের ইতিহাসে নজিরবিহীন। অনেক ক্যারিয়ার ধ্বংস হয়েছে। অনেক তরুণকে দেশ ছাড়তে বাধ্য করা হয়েছে। ধর্মীয় পটভূমি থেকে আসা তরুণ সাংবাদিকেরা ভয়ংকর মূল্য দিয়েছে। তাদের অনেক সম্পাদকের ভূমিকাই ছিল একজন চিয়ারলিডারের মতো - এই নতুন ম্যাকার্থি ঘরানার ‘লাল আতঙ্ক’ কিংবা ‘সবুজ আতঙ্ক’ অভিযানের। আর এই ট্যাগিং সংস্কৃতিকে বৈশ্বিক ‘ওয়ার অন টেরর’ একটি বৈধতা দিয়ে দিয়েছিল। আশা করি, এই ভয়ের সংস্কৃতি আর বেশিদিন থাকবে না।’

এমকে/এসএন

Share this news on:

সর্বশেষ

img
শাহবাগে জুলাই যোদ্ধাদের মারামারি আমাদের ব্যথিত করে : এ্যানি Aug 02, 2025
মিটফোর্ড ও গুলশানের ঘটনায় যে অগ্রগতি জানালো ডিএনপি! Aug 02, 2025
img
মুক্তচিন্তার সুযোগ না থাকায় বিগত সময়ে শিক্ষার বিকাশ ঘটেনি : শিক্ষা উপদেষ্টা Aug 02, 2025
img
চার বছর আগে থেকেই অগ্নিঝুঁকির তালিকায় ছিল সুন্দরবন স্কয়ার মার্কেট: ফায়ার সার্ভিস Aug 02, 2025
img
সুমাইয়া জাফরিন নামে কোনো নারী পুলিশ কর্মকর্তা নেই: পুলিশ সদর দফতর Aug 02, 2025
img
সংসদের বাইরে গিয়ে গণতান্ত্রিক কোনো পরিবর্তনের সুযোগ নেই: আমীর খসরু Aug 02, 2025
img
প্রিয়াঙ্কার স্টোরিতে রেখা, শাহরুখকে ঘিরে কি বার্তা ? Aug 02, 2025
এনসিপির পদায়ন নিয়ে প্রশ্ন তুললেন ছাত্র নেতা! Aug 02, 2025
img
শান্তশিষ্ট রুটকে রাগিয়ে দেয়াই ছিল ভারতের পরিকল্পনা Aug 02, 2025
img
পাকিস্তান সেনাবাহিনীতে যুক্ত হলো আক্রমণাত্মক জেড-১০এমই হেলিকপ্টার Aug 02, 2025
img
অপ্রাপ্তবয়স্কের নেতিবাচক ভিডিও ছড়ানোর অভিযোগে জেল হতে পারে অ্যাসেনসিওর Aug 02, 2025
img
মালয়েশিয়ায় সড়ক দুর্ঘটনায় নিহত ২ বাংলাদেশি Aug 02, 2025
আসছে এনসিপির ‘নতুন বাংলাদেশের ইশতেহার’ ঘোষণা Aug 02, 2025
চাঁদাবাজ অপুর গ্রেপ্তার এড়ানোর অভিনব কৌশল Aug 02, 2025
img
জাতীয় পুরস্কার পেল ‘কেরালা স্টোরি’, ক্ষুব্ধ কেরালার মুখ্যমন্ত্রী Aug 02, 2025
img
কলকারখানা বন্ধের জন্য সরকার দায়ী নয় : শ্রম উপদেষ্টা Aug 02, 2025
img
গণতান্ত্রিক ব্যবস্থা ফিরে না আসলে ফের ফ্যাসিবাদের উত্থান ঘটবে: নজরুল ইসলাম খান Aug 02, 2025
img
শ্রীলঙ্কার সাগরপাড়ে মুগ্ধতা ছড়াচ্ছেন টয়া Aug 02, 2025
img
মাঠে ফের মুখোমুখি মিসবাহ-আফ্রিদি ও ডি ভিলিয়ার্স-আমলা Aug 02, 2025
img
জাতীয় পুরস্কারে জোড়া সাফল্যে উচ্ছ্বসিত ‘রকি অউর রানি’ Aug 02, 2025