নোয়াখালীর বেগমগঞ্জে নিষিদ্ধ ছাত্রলীগের ঝটিকা মিছিলে অংশ নেওয়া ছয় নেতাকর্মীকে কারাগারে প্রেরণ করা হয়েছে। শুক্রবার (১ আগস্ট) তাদের কারাগারে প্রেরণ করা হয়। এর আগে, বৃহস্পতিবার দিবাগত রাতে পুলিশ বাদী হয়ে ৪৩ জনের নাম উল্লেখ করে মামলা দায়ের করে।
এ ছাড়া মামলায় আরও ১৫ থেকে ২০ জনকে অজ্ঞাতনামা আসামি করা হয়েছে। তাৎক্ষণিক অভিযান চালিয়ে ছয়জনকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ।
কারাগারে প্রেরণকৃতরা হলেন চৌমুহনী পৌরসভার ৪ নম্বর ওয়ার্ডের করিমপুর এলাকার নুর নবী ওরফে রাজু (৩১) ও আবদুল আহাদ (১৮), শরিফ পুর ইউনিয়নের বাবুনগর গ্রামের মো. শ্রাবণ (১৯), চৌমুহনী পৌরসভার ৫ নাম্বার ওয়ার্ডের গনিপুর গ্রামের জাহিদুল হাসান (১৯) ও সদর উপজেলার ১৯ নাম্বার পূর্ব চরমটুয়া ইউনিয়নের চর কাউনিয়া গ্রামের মো. আরমান (১৯)।
পুলিশ ও স্থানীয় বাসিন্দারা জানান, বৃহস্পতিবার বিকেল পৌনে ৪টার দিকে বেগমগঞ্জের চৌমুহনীর রেললাইন থেকে ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা শেখ হাসিনার ছবি ও প্ল্যাকার্ড নিয়ে মিছিল শুরু করে করিমপুর হাসান সড়ক এলাকা দিয়ে চলে যায়। তখন ২৫ থেকে ৩০ কিশোর–তরুণকে কয়েকটি ফেস্টুন ও একটি ছাত্রলীগের ব্যানারে মিছিল করতে দেখা যায়। এতে নেতৃত্ব দেন নিষিদ্ধ ছাত্রলীগ কর্মী জিহাদ হাসান রতন। মিছিলের একপর্যায়ে তারা ‘অন্তর্বর্তী সরকারের বিরুদ্ধে’ এবং ‘শেখ হাসিনা ফিরবে’ বলে স্লোগান দেন। মিছিল শেষে তারা ‘শিহাব ভাইয়ের নেতৃত্বে ঐক্যবদ্ধ’ বলে স্লোগান দেয়। যা সাবেক ছাত্রলীগ নেতা নাজমুল শিহাব নিজের ফেসবুক অ্যাকাউন্ট থেকে লাইভ করেন।
জানা গেছে, নিষিদ্ধ সংগঠন ছাত্রলীগের সাবেক নেতা নাজমুল শিহাবের তত্ত্বাবধানেই মিছিলটি বের হয়। ৫ আগস্ট আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর চৌমুহনীতে এটিই প্রথম কোনো ঝটিকা মিছিল। নাজমুল শিহাব নোয়াখালী-৩ আসনের সাবেক সংসদ সদস্য মামুনুর রশিদ কিরণের অনুসারী।
ছাত্রলীগের ঝটিকা মিছিলের প্রতিবাদে ওই দিন রাতেই বিক্ষোভ মিছিল করেছে বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল (বিএনপি) এবং যুবদল। বিএনপি নেতা মোরশেদুল আমিন ফয়সাল ও জেলা যুবদলের সভাপতি মঞ্জুরুল আজিম সুমনের নেতৃত্বে মিছিলটি চৌমুহনীর প্রধান প্রধান সড়ক প্রদক্ষিণ করে পূর্ব বাজার কাছারী বাড়ি মসজিদের সামনে গিয়ে শেষ হয়।
বিক্ষোভ শেষে সংক্ষিপ্ত সমাবেশে জেলা যুবদলের সভাপতি মঞ্জুরুল আজিম সুমন বলেন, নিষিদ্ধ ঘোষিত ছাত্রলীগ-যুবলীগের অবৈধ কর্মকাণ্ডের মাধ্যমে এলাকায় অশান্তি সৃষ্টির অপচেষ্টা চলছে। সরকারদলীয় এই বাহিনীকে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী প্রশ্রয় দিচ্ছে। এসব কর্মকাণ্ড গণতন্ত্র, শান্তি এবং জননিরাপত্তার জন্য হুমকি।
তিনি আরও বলেন, বিএনপি ও তার সহযোগী সংগঠনগুলো দেশের স্বার্থে, জনগণের স্বার্থে সব অপশক্তির বিরুদ্ধে রাজপথে থাকবে। অবিলম্বে এসব বেআইনি মিছিল ও রাজনৈতিক সন্ত্রাস বন্ধে প্রশাসনকে ব্যবস্থা নিতে হবে, না হলে বিএনপি কঠোর কর্মসূচি দিতে বাধ্য হবে।
এ বিষয়ে অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (বেগমগঞ্জ সার্কেল) আ ন ম ইমরান খান গণমাধ্যম বলেন, এ ঘটনায় সন্ত্রাসবিরোধী আইনে মামলা হয়েছে। খবর পাওয়ার পর তাৎক্ষণিক অভিযান চালিয়ে ছয়জনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। তাদেরকে আদালতের মাধ্যমে কারাগারে প্রেরণ করা হয়েছে। তাদের মধ্যে মধ্যে পাঁচজন এজাহারনামীয় আসামি এবং আরেক আসামি এজাহারের বাইরে। এ ঘটনায় যারা এখনও পলাতক রয়েছে, তাদের গ্রেপ্তারে অভিযান অব্যাহত আছে।
পিএ/টিএ