বহুকাল ধরে মানুষ মঙ্গলে বসবাসের স্বপ্ন দেখে চলেছেন। তাই মঙ্গলগ্রহকে কিভাবে বসবাস উপযোগী করে তোলা যায়, তা নিয়ে ভাবনার শেষ নেই। এ নিয়ে লেখা হয়েছে অনেক বৈজ্ঞানিক কল্পকাহিনী ও উপন্যাস।
তবে কল্পনার জগত থেকে বেড়িয়ে এসে ১৯৭১ সালে কার্ল সেগান সর্বপ্রথম মঙ্গলের আবহাওয়া ও প্রকৃতিকে পৃথিবীর মতো করে গড়ে তোলা বা টেরাফর্মিংয়ের কথা বলেন। এক গবেষণাপত্রে, মঙ্গলের উত্তরাংশের বরফ বাষ্পীভূত করে এবং গ্রীণহাউজ এফেক্টের মাধ্যমে উষ্ণতা বৃদ্ধি করার মধ্যদিয়ে একে মানুষ বসবাসের উপযোগী করে তোলার সম্ভাবনার কথা সেগান তুলে ধরেন।
২০১৮ সালে নাসার উদ্যোগে ইউনিভার্সিটি অব কোলোরাডো, বোউল্ডার এবং নর্দান অ্যারিজোনা ইউনিভার্সিটির গবেষকরা আবিষ্কার করেন যে, মঙ্গলের সব উপাদান ব্যবহার করলেও এর উষ্ণতা পৃথিবীর ৭ শতাংশের বেশি বৃদ্ধিপ্রাপ্ত হবে না। ফলে মঙ্গলে বসবাসের স্বপ্নপূরণ প্রায় অসম্ভব হয়ে উঠেছিল।
কিন্তু সম্প্রতি হার্ভাড ইউনিভার্সিটি, নাসার জেট ল্যাব এবং ইউনিভার্সিটি অব এডিনবার্গে গবেষকরা উক্ত সমস্যাটি সমাধানে একটি নতুন ধারণা সামনে নিয়ে এসেছেন। তারা বলছেন, পুরো গ্রহটিকে বদলে দেয়া হয়তো সম্ভব নয়, কিন্তু নির্দিষ্ট কোনো এলাকা পৃথিবীর আদলে বদলে দেয়া যেতে পারে।
গবেষকরা বলছেন, মঙ্গলের নির্দিষ্ট অঞ্চল সিলিকা এরো জেল দ্বারা বসবাসযোগ্য করে তোলা যেতে পারে। এটি ব্যবহারের ফলে গ্রীনহাউজ এফেক্টের মধ্যদিয়ে ওই অঞ্চলটিতে পৃথিবীর মতো পরিবেশ সৃষ্টি হবে।
তারা পরীক্ষা চালিয়ে দেখেছেন যে, সিলাকা জেলের ২-৩ সেন্টিমিটার পুরু আস্তরণের ভেতরে সালোকসংশ্লেষণের জন্য যথেষ্ট আলো পৌঁছায়। এছাড়াও এটি ক্ষতিকর অতিবেগুনি রশ্মি ঠেকায় এবং ভেতরের তাপমাত্রা স্থায়ীভাবে এতটা বৃদ্ধি করে যে, তাতে পানি ফুটতে শুরু করে। সব থেকে আশার কথা হলো, এর জন্যে আলাদা করে তাপ উৎপাদনের ব্যবস্থা করার প্রয়োজন নেই।
গবেষণাপত্রটি ‘ন্যাচার অ্যাস্ট্রোনমি ২০১৯’এ প্রকাশিত হয়েছে। এই গবেষণার ফলে মঙ্গলে বসবাসের সম্ভাবনা নতুন দিগন্তে পৌঁছে গেল। সেইদিন হয়তো খুব বেশি দূরে নয় যখন পৃথিবীর মানুষ ঘর বাঁধবে মঙ্গলের বুকে। সূত্র: সাইন্সটেকডেইলিডটকম
টাইমস/এনজে/জিএস