ওষুধ ছাড়াই নিয়ন্ত্রণে রাখুন উচ্চ রক্তচাপ

হঠাৎ করেই মাথাটা কেমন ঘুরছে। বুক ধড়ফড় করছে কিংবা কয়েকটা নির্ঘুম রাত পার করলেন। সবার জোরাজুরিতে রক্তচাপ পরীক্ষা করলেন। ধরা পড়ল আপনার উচ্চ রক্তচাপের সমস্যা। বর্তমান সময়ে এটি অতি পরিচিত একটি স্বাস্থ্য সমস্যা।

চিকিৎসকদের মতে, একজন সুস্থ পূর্ণবয়স্ক ব্যক্তির ক্ষেত্রে ১০০-১৪০ মিলিমিটার পারদ সংকোচন চাপ ও ৬৫-৯০ মিলিমিটার পারদ প্রসারণ চাপ স্বাভাবিক মাত্রা নির্দেশ করে। আর রক্তচাপ যদি ১৪০/৯০ মিলিমিটার পারদ অথবা এর বেশি হয়, তবেই উচ্চ রক্তচাপ বলা হয়।

খোঁজ নিলে দেখা যাবে, আমাদের কোনো না কোনো বন্ধু, পরিবারের সদস্য বা পরিজন উচ্চ রক্তচাপ সংক্রান্ত জটিলতায় ভুগছেন। এটি নিয়ে আবার দুশ্চিন্তায় পড়বেন না। কেননা দুশ্চিন্তা রক্তচাপকে আরও বাড়িয়ে দেবে।

তবে, সুস্বাস্থ্যের জন্য উচ্চ রক্তচাপ একটি মারাত্মক হুমকি। এর কারণে হার্ট অ্যাটাক, হার্ট ফেইলুর, কিডনি ফেইলুরসহ আরও বহু প্রাণঘাতী রোগের ঝুঁকি বাড়ে। জানলে অবাক হবেন, শুধু আমেরিকাতেই প্রতিদিন প্রায় এক হাজার মানুষ উচ্চ রক্তচাপ জনিত জটিলতায় মৃত্যুবরণ করেন।

তবে আশার কথা হলো- উচ্চ রক্তচাপের কারণে হওয়া মৃত্যুগুলি অধিকাংশ ক্ষেত্রেই প্রতিরোধ যোগ্য। শুধু দৈনন্দিন জীবনযাপন পরিবর্তনের মাধ্যমে ও ডাক্তার নির্দেশিত ওষুধ সেবনের মধ্য দিয়ে এর অনেক জটিলতা থেকে মুক্তি পাওয়া যায় সম্ভব।

গবেষকদের মতে, ৫০%-৯০% ক্ষেত্রেই উচ্চ রক্তচাপ শুধু জীবনযাত্রা পরিবর্তনের মাধ্যমেই নিয়ন্ত্রণ করা যায়। যদি সামান্য মাত্রায় রক্তচাপ বৃদ্ধি পায় এবং বড় ধরণের কোনো রোগ যেমন- ডায়াবেটিস, বিভিন্ন হৃদরোগ প্রভৃতিতে আক্রান্ত না হয়ে থাকেন, তাহলে শুধু জীবনযাত্রা পরিবর্তনের মধ্য দিয়ে মাত্র তিন মাসেই রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে আনতে পারবেন। উচ্চ রক্তচাপে ভোগা অনেক রোগীই কোনো রকম ওষুধ সেবন না করেই এই জটিলতা নিয়ন্ত্রণে সক্ষম হয়েছেন।

আসুন উচ্চ রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে রাখার প্রাকৃতিক কিছু উপায় জেনে নেই-

নিয়মিত শরীরচর্চা
গবেষকদের মতে শরীরচর্চা রক্ত সঞ্চালন বাড়িয়ে দেয় এবং হৃৎপিণ্ডকে শক্তিশালী করে। রক্তচাপ কমিয়ে স্ট্রোকের ঝুঁকি কমানোর পাশাপাশি শরীরকে সতেজ ও সুস্থ রাখে। যদি শরীরচর্চা করতে অভ্যস্ত না হয়ে থাকেন, তাহলে ধীরে ধীরে শুরু করুন। প্রতিদিন পাঁচ থেকে দশ মিনিটের শরীরচর্চাও আপনাকে নিয়মিত শরীরচর্চা করার অভ্যাস গড়ে তুলতে সাহায্য করে।

স্বাস্থ্যকর খাদ্যাভ্যাস
উচ্চমাত্রায় প্রক্রিয়াজাত খাবার, উচ্চমাত্রায় চিনিযুক্ত খাবার প্রভৃতি উচ্চ রক্তচাপ সৃষ্টিতে সহায়ক। আপনার যদি উচ্চ রক্তচাপ থেকে থাকে, তাহলে কি পরিমাণ লবণ খাচ্ছেন সেটাও লক্ষ্য রাখতে হবে। বিশেষ করে কাঁচা লবণ উচ্চ রক্তচাপ রোগীদের জন্য খুবই ভয়ানক।

ওজন কমান
স্থূলতা বা অতিরিক্ত ওজনের সঙ্গে উচ্চ রক্তচাপ সম্পর্কযুক্ত। তাই উচ্চ রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে রাখতে চাইলে, অতিরিক্ত ওজন ঝেড়ে ফেলা অবশ্যই বাঞ্ছনীয়। গবেষণায় দেখা গেছে, স্থূল শরীর থেকে মাত্র ৫% থেকে ১০% ওজন কমিয়ে ফেললে তা উচ্চ রক্তচাপসহ আরও অনেক স্বাস্থ্য জটিলতা কমিয়ে দেয়। ওজন কমালে তা রোগীর জন্য দীর্ঘ মেয়াদী সুফল বয়ে আনবে।

মদ্যপান কমাতে হবে
সম্প্রতি দেখা গেছে- যারা সপ্তাহে ৭-১৩ পেগ মদ পান করেন, তাদের হাইপার টেনশনে ভোগার সম্ভাবনা ৫৩% বৃদ্ধি পায়। আবার এই পরিমাণ যাদের ক্ষেত্রে ১৪ পেগ বা তার বেশি তাদের হাইপার টেনশনে ভোগার সম্ভাবনা ৬৯%। তাছাড়া রক্তে অ্যালকোহলের মাত্রা বৃদ্ধি পেলে তা আপনার রক্তচাপকেও স্বাভাবিকভাবেই বৃদ্ধি করবে। তাই রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে রাখতে হলে মদ্যপানের ক্ষেত্রেও লাগাম টানতে হবে।

ধূমপান ছাড়তে হবে
ধূমপান করলে শরীরে নিকোটিনের প্রভাবে অ্যাড্রেনালিন উৎপন্ন হয়। ফলে হৃৎপিণ্ডে স্পন্দন বেড়ে যায় এবং রক্তচাপ বৃদ্ধি পায়। তাই উচ্চ রক্তচাপ থেকে বাঁচতে হলে অবশ্যই ধূমপান থেকে বিরত থাকতে হবে।

 

টাইমস/এনজে/জিএস

Share this news on: