বিশিষ্ট সাংবাদিক ও রাজনৈতিক বিশ্লেষক নুরুল কবির বলেছেন, ‘বর্তমান সরকার গণ-অভ্যুত্থানের পর বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের সম্মতির ভিত্তিতে গঠিত হয়েছিল। শুরুতে এই সরকার জনগণের কাছেও গ্রহণযোগ্যতা পেয়েছিল। সরকার তিনটি মূল কাজ করার প্রতিশ্রুতি দিয়েছিল- গণতান্ত্রিক সংস্কার, আগের সরকারের সময় হওয়া সহিংসতার বিচার এবং গ্রহণযোগ্য নির্বাচনের মাধ্যমে ক্ষমতা হস্তান্তর। কিন্তু সময় গড়ানোর সঙ্গে সঙ্গে অনেক রাজনৈতিক দলই নিজেদের স্বার্থে সরকারের মেয়াদ দীর্ঘ করতে চেয়েছে।’
সম্প্রতি একটি টক শোতে অংশ নিয়ে নুরুল কবির এসব কথা বলেন।
নুরুল কবির বলেন, ‘গভর্নেন্স বা শাসনব্যবস্থার ক্ষেত্রে সরকার ব্যর্থ হয়েছে। দুর্নীতি, চাঁদাবাজি, বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ড, এবং আইন-শৃঙ্খলার অবনতি ঘটেছে। যদিও দ্রব্যমূল্য নিয়ন্ত্রণে কিছু ইতিবাচক উদ্যোগ ছিল কিন্তু সামগ্রিকভাবে কার্যকারিতা ছিল দুর্বল। প্রশাসন ও আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী দুর্বলভাবে কাজ করছে এবং রাজনৈতিক সমঝোতার অভাবে সংস্কারগুলো কার্যকর হচ্ছে না।’
প্রেসিডেন্টের বিবেক ও মতপ্রকাশের স্বাধীনতা না থাকা এবং তার দায়িত্বহীন অবস্থানকেও তিনি সমালোচনা করেন। রাষ্ট্রপতি সাহাবুদ্দিনের সাম্প্রতিক বিবৃতি নিয়েও প্রশ্ন তোলেন নুরুল কবির। তিনি বলেন, একজন দলীয় পটভূমি থেকে আসা প্রেসিডেন্ট যদি নিজের বিশ্বাসের বিরুদ্ধে বিবৃতি দেন, তাহলে সেটা রাষ্ট্রীয় প্রতারণা।
তিনি মনে করেন, প্রেসিডেন্ট পদে থাকা ব্যক্তির বিবেক ও মতপ্রকাশের স্বাধীনতা থাকা উচিত, তা না হলে সংবিধানই তার মর্যাদা ক্ষুণ্ণ করে।
তিনি আরও বলেন, ‘সংবিধানে রাষ্ট্রধর্ম ইসলাম রাখার মাধ্যমে রাষ্ট্র একটি ধর্মীয় পক্ষপাত তৈরি করেছে, যা সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের জন্য বৈষম্যমূলক। একইভাবে আদিবাসী ও জাতিগত সংখ্যালঘুদের সাংবিধানিক স্বীকৃতি না দেওয়ায় বিভাজন তৈরি হয়েছে। এদের দাবিগুলোকে বিচ্ছিন্নতাবাদ বলে দমন করা হচ্ছে, যদিও তারা মূলধারার অংশ হতে চায়। এই অবিচার ভবিষ্যতে আরো সংঘাতের জন্ম দিতে পারে।’
তিনি আরও বলেন, ‘এত বছরের সংগ্রাম ও ত্যাগের পরও বাংলাদেশে সত্যিকারের গণতন্ত্র ও সমতাভিত্তিক রাষ্ট্রব্যবস্থা গড়ে ওঠেনি। যতক্ষণ পর্যন্ত না রাজনৈতিক দলগুলো নিজের ভেতরে গণতন্ত্র চর্চা করে এবং জাতিগত ও ধর্মীয় ন্যায়বিচার নিশ্চিত করে, ততক্ষণ গণতন্ত্রের পূর্ণতা সম্ভব নয়।’
কেএন/এসএন