বেরোবির বিরুদ্ধে ছাত্র সংসদের নামে ৪৫ লাখ টাকা লোপাটের অভিযোগ

রংপুর বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয় (বেরোবি) প্রতিষ্ঠার ১৭ বছরেও ছাত্র সংসদের কোনো আইন প্রণয়ন হয়নি। অথচ ‘কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ ফি’র নামে বিশ্ববিদ্যালয়ের ২২ হাজার ৪৬৭ জন শিক্ষার্থীর কাছ থেকে ৪৪ লাখ ৯৩ হাজার ৪০০ টাকা সংগ্রহ করা হলেও দীর্ঘদিন ধরে এই অর্থের কোনো স্বচ্ছতা বা হিসাব প্রকাশ করেনি কর্তৃপক্ষ।

অভিযোগ উঠেছে, লেজুড়বৃত্তিক রাজনীতি বন্ধের অজুহাতে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ পরিকল্পিতভাবে নেতৃত্ব বিকাশের পথ রুদ্ধ করেছেন। এতে শিক্ষার্থীরা শুধু নেতৃত্বশূন্য হয়ে পড়েনি, গণতান্ত্রিক চর্চা, রাজনৈতিক নেতৃত্বের অভিজ্ঞতা থেকেও বঞ্চিত হচ্ছেন।

পাশাপাশি প্রশাসনিক অনিয়ম-দুর্নীতির পথও প্রশস্ত হয়েছে।

এই প্রেক্ষাপটে ছাত্র সংসদ আইন বাস্তবায়ন ও নির্বাচন আয়োজনের দাবিতে গত রবিবার থেকে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রশাসনিক ভবনের দক্ষিণ গেটে আমরণ অনশনে বসেছেন একদল শিক্ষার্থী। গতকাল সোমবার বিকেল পাঁচটা পর্যন্ত অসুস্থ পয়ে পড়া পাঁচ শিক্ষার্থীর মধ্যে জাহিদ হাসান জয় ও মাহিদুল ইসলাম মাহিদকে রংপুর মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে।

জানা গেছে, ২০০৮ সালে রংপুর বিশ্ববিদ্যালয় নামে যাত্রা শুরু করা এই অঞ্চলের সর্বোচ্চ এই বিদ্যাপীঠে ছাত্র সংসদ বিষয়ে আইনটি কৌশলে উপেক্ষা করে বিশ্ববিদ্যালয় আইন-২০০৯ পাস করা হয়েছে।

বিশ্ববিদ্যালয় আইনে ছাত্র সংসদেরে নামে কোনো কিছুই অবশিষ্ট না থাকলেও প্রতি বছর প্রতিজন শিক্ষার্থীর কাছ থেকে ২০০ টাকা হারে অর্থ নেওয়া হতো। সেই হিসেবে ২০০৮ থেকে ২০২২-২০২৩ শিক্ষাবর্ষ পর্যন্ত পাঁচ উপাচার্যের আমলে ১৯ হাজার ৬৬৭ জন শিক্ষার্থীর কাছে ৩৯ লাখ ৩৩ হাজার ৪০০ টাকা সংগ্রহ করে তা বিশ্ববিদ্যালয়ের জেনারেল ফান্ডে রেখে ইচ্ছেমতো খরচ করেছেন সেই সময়কার প্রশাসন।

তবে, ২০২৩-২০২৪ ও ২০২৪-২০২৫ শিক্ষাবর্ষে ২ হাজার ৮০০ শিক্ষার্থীর কাছ থেকে সংগ্রহ করা ৫ লাখ ৬০ হাজার টাকা ছাত্র সংসদ নামে অ্যাকাউন্ট খুলে সেখানে রাখা হয়েছে।

বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র উপদেষ্টা ইলিয়াছ প্রামাণিক এক গণমাধ্যমকে  জানিয়েছেন, ২০০৯ সালের বিশ্ববিদ্যালয় আইনে কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ নামে কোনো আইন পাস করা হয়নি।

এরপর গত বছরের ২৮ অক্টোবর ১০৮তম সিন্ডিকেট সভায় ‘কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ’ কার্যকর করার উদ্যোগ নেওয়া হয়। চলতি বছরের ১৫ মে বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশনে একটি চিঠি দিলে মঞ্জুরি কমিশন ‘কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ’-এর গঠনতন্ত্রটি রাষ্ট্রপতির অনুমোদন নেওয়ার জন্য খসড়া সংবিধিটি পরীক্ষা ও চূড়ান্তকরণ করতে সাত সদস্যের একটি কমিটি গঠন করে। কমিটির প্রধান করা হয়েছে বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরী কমিশনের সদস্য মোহাম্মদ তানজীম উদ্দিন খানকে। আইনি ভেটিংয়ের পর রাষ্ট্রপতি অনুমোদন দিলেই আইন আকারে প্রকাশ হবে।

এদিকে, ছাত্র সংসদ নির্বাচন আইন না থাকা, নির্বাচনের চূড়ান্ত রোডম্যাপ ঘোষণা না করার বিষয়টি বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশন ও বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের গাফিলতির অভিযোগ তুলে গত রবিবার সকাল ১১টা থেকে একদল শিক্ষার্থী আমরণ অনশনে বসেছেন।

বিষয়টি নিরসনে আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের সঙ্গে দফায় দফায় বৈঠক ছাড়াও বিশ্ববিদ্যালয়ের মঞ্জুরি কমিশন, আইন উপদেষ্টার সঙ্গে কথা বলেছেন উপাচার্য ড. শওকাত আলী। তাতেও কোনো সমাধান আসছে না।

বেরোবির কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদের বিষয়টি বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশন উপেক্ষা করছে এমন অভিযোগ এনে গতকাল সোমবার বিকেল ৩টায় আবু সাঈদ চত্বরে কমিশনের গায়েবি জানাজা করেছে শিক্ষার্থী। তাদের সঙ্গে একাত্বতা ঘোষণা করেছেন শহরের বৈষম্যবিরোধী ছাত্ররাও।

অনশনে থাকা শিক্ষার্থীদের একজন বলেন, ১৭ বছরে কোনো সংসদ নেই। অথচ সংসদের নামে কোটি টাকা উঠেছে। আমরা জানি না এই টাকা কোথায় গেল। পরিকল্পিতভাবে আমাদের নেতৃত্ব ভেঙে দেওয়া হয়েছে।

অন্য আরেকজন শিক্ষার্থী জানান, ছাত্র সংসদ হলো শিক্ষার্থীদের গণতান্ত্রিক অধিকার। কিন্তু প্রশাসন তা বাস্তবায়ন না করে উল্টো অর্থ লোপাট করেছে। আমরা অবিলম্বে সংসদ আইন ও নির্বাচনের রোডম্যাপ চাই। ছাত্র সংসদ আইন বাস্তবায়ন ও নির্বাচনের রোডম্যাপ ছাড়া অনশন ভাঙবেন না। অনশনের কারণে শিক্ষার্থীদের স্বাস্থ্যঝুঁকি তৈরি হয়েছে। পরিস্থিতি নিয়ে উদ্বিগ্ন অভিভাবক ও শিক্ষকরাও।

বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. শওকাত আলী এক গণমাধ্যমকে বলেন, শিক্ষার্থীদের এই আন্দোলনে আমি একমত। ছাত্র সংসদ আইন ছিল না। আমি নিয়োগ পাওয়ার পর খসড়া করে তা সিন্ডিকেটে পাস করে বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশনে পাঠানো হয়েছে। এখন কমিশনে আছে ভেটিংয়ের জন্য। এরপর রাষ্ট্রপতি অনুমোদন দিলেই হবে। শিক্ষার্থীরা অনশনে কষ্ট করছে, আমি সরকারের উচ্চ পর্যায়ে কথা বলেছি, শিক্ষার্থীদের সঙ্গে কথা বলেছি। চাইলেই কালই এই আইন পাস হবে এমনটা নয়. আমি আশ্বস্ত করছি আগামী অক্টোবরের মধ্যে এই আইন পাস হবে।

এমকে/টিকে

Share this news on:

সর্বশেষ

মাইনাস-টু প্রজেক্টে তৎপর ডিপ স্টেট- দাবি মাসুদ কামালের Dec 01, 2025
বেগম জিয়ার স্মরণে—সাবেক বিএনপি নেতার আবেগঘন বার্তা Dec 01, 2025
দুর্নীতি মামলার আগেই রাষ্ট্রপতির ক্ষমা চাইলেন নেতানিয়াহু Dec 01, 2025
প্লেয়ার ড্রাফটে হতাশ নোয়াখালীবাসী, তবু ‘নোয়াখালী এক্সপ্রেস’-এ প্রত্যাশা অটুট Dec 01, 2025
দুর্নীতির অভিযোগে ফিলিপাইনে প্রেসিডেন্টের পদত্যাগের দাবিতে বিক্ষোভ Dec 01, 2025
ফেব্রুয়ারিতে নির্বাচন হলে ফার্সিকাল ইলেকশন হবে: জিল্লুর রহমান Dec 01, 2025
শেখ হাসিনাকে ফেরত না দিলে ভারতের সঙ্গে সম্পর্ক কেমন হবে, জানালেন পররাষ্ট্র উপদেষ্টা Dec 01, 2025
img
হাসি আর ব্যথার সমন্বয় ব্যাখ্যা করলেন নীলাঞ্জনা Dec 01, 2025
নাটকীয়তার পর দল পেলেন মুশফিক ও মাহমুদউল্লাহ সর্বোচ্চ দাম মোহাম্মদ নাঈমের Dec 01, 2025
আমার কাছে সাকিব বিশ্বের নাম্বার ওয়ান , শান্ত-মিরাজদের ভালো লাগে: শ্রাবণ্য তৌহিদা Dec 01, 2025
সিলেটকে চ্যাম্পিয়ন করতে চাই: মিরাজ Dec 01, 2025
১৬টি ছক্কা হাঁকিয়ে ছক্কার নতুন রেকর্ডে অভিষেক Dec 01, 2025
img
৩ ম্যাচ পর জয় পেল ম্যানচেস্টার ইউনাইটেড এবং লিভারপুল Dec 01, 2025
img
খালেদা জিয়ার শারীরিক অবস্থার কিছুটা উন্নতি Dec 01, 2025
img
তাদের সম্মানে নিয়মও বদলেছে Dec 01, 2025
img
প্রেসিডেন্টের পদত্যাগের দাবিতে ফিলিপিন্সে বিক্ষোভ Dec 01, 2025
img
সম্পর্ক নিয়ে সমাজের ধ্যানধারণায় প্রশ্ন তুললেন শুভশ্রী Dec 01, 2025
img
২০২৭ বিশ্বকাপে রোহিত-কোহলির থাকা নিয়ে স্পষ্ট বার্তা দিল ভারতীয় টিম ম্যানেজমেন্ট Dec 01, 2025
img
মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাসে অনন্য কৌশলগত অধ্যায় আখাউড়া যুদ্ধ : আইএসপিআর Dec 01, 2025
img
চীনের কাছে হেরে স্বপ্নভঙ্গ বাংলাদেশের যুবাদের Dec 01, 2025