সুপ্রিম কোর্টের জ্যেষ্ঠ আইনজীবী সারা হোসেন বলেছেন, মব সন্ত্রাসের মাধ্যমে দেশের ইতিহাস আক্রমণের মুখে পড়েছে। সাম্প্রতিক সহিংসতা, সংখ্যালঘু ও ভিন্নমতের মানুষের ওপর হামলা, এমনকি বঙ্গবন্ধুর ভাস্কর্য ভাঙার ঘটনাও সেই ধারাবাহিকতার অংশ বলে মন্তব্য করেন তিনি।
সারা দেশে কেন মব সন্ত্রাসের ঘটনা ঘটছে— এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘সম্প্রতি গোপালগঞ্জে একটি সমাবেশকে কেন্দ্র করে সহিংস ঘটনায় পাঁচজন মারা গেছেন।
সে ব্যাপারে এখনো তদন্ত চলছে। সেখানকার তদন্ত প্রক্রিয়া নিয়ে বেশ প্রশ্ন আছে। ৫ আগস্টের পর থেকে আমরা দেখেছি, কীভাবে কোনো কোনো দল অন্যান্য দল বা ব্যক্তিদের ওপর হঠাৎ করে চড়াও হয়েছে। বিভিন্ন সম্প্রদায় ও ব্যক্তির ওপর আক্রমণ হয়েছে রাজনৈতিক প্রতিহিংসার কারণে।
আদিবাসী ও সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের ওপর আক্রমণ হয়েছে। যারা ভিন্ন রাজনৈতিক মত প্রকাশ করে, তাদের ওপর আক্রমণ হয়েছে।’
তিনি বলেন, ‘আওয়ামী লীগ সরকারের সঙ্গে কোনোভাবে জড়িত ছিলেন এমন অভিযোগ তুলে এক দল মানুষ এসে অনেককে আক্রমণ করছে, লাঞ্ছনা করছে, গালাগাল করছে; সবার সামনে তাদের অপমান করছে। এ ক্ষেত্রে পুলিশের কোনো সক্রিয় ভূমিকা নেই; আদালতেও কোনো প্রতিক্রিয়া নেই– এগুলো আমরা দেখছি।
রাষ্ট্র অনেক ক্ষেত্রে কোনো ব্যবস্থা নিচ্ছে না বা সময়মতো ঘটনাগুলো থামাচ্ছে না। মব তৈরি হওয়ার পেছনে এটি একটি কারণ হতে পারে।’
সারা হোসেন বলেন, ‘সবচেয়ে বড় মব আমরা দেখলাম গত বছর, ধানমন্ডির ৩২ নম্বরে একটা বাড়ির ওপর যখন হামলা হয়। সে সময় সামাজিক মাধ্যমে উসকানি দেওয়া হয়েছে। যারা বাংলাদেশের নাগরিক, কিন্তু বিদেশে অবস্থান করছেন, সেখান থেকে তারা ইউটিউব ও বিভিন্ন সামাজিক মাধ্যমে রীতিমতো উসকানি দিয়েছেন।
সেদিন সেখানে একটি বুলডোজার এসেছিল। সেটি কিভাবে এলো, কেন এলো, কে অনুমতি দিল, কেন এটি বন্ধ করা হলো না?’
সুপ্রিম কোর্টের জ্যেষ্ঠ এই আইনজীবী বলেন, ‘আমার মনে হয়, এ ক্ষেত্রে সরকারের একটা জবাবদিহির ব্যাপার ছিল। কেন তারা এটি থামাতে বা নিয়ন্ত্রণ করতে পারেনি? তারা কি এটাকে এক ধরনের অনুমতি দিয়েছিলেন? সেদিন একটা ভয়াবহ মব তৈরি হয়েছিল। ৩২ নম্বরের বাড়ি ভাঙাটা নিঃসন্দেহে অপরাধ। বাড়িটি যেহেতু আমাদের ইতিহাসের সঙ্গে জড়িয়ে আছে; একটা গুরুত্বপূর্ণ জায়গা। সেই ইতিহাস আপনি পছন্দ করেন কি করেন না, সেটি অন্য ব্যাপার। মবের মাধ্যমে ইতিহাসের ওপর আক্রমণ চলছে। কোনো কোনো ক্ষেত্রে বিশেষ ব্যক্তির ভাস্কর্য, যেমন বঙ্গবন্ধুর ভাস্কর্য ভেঙে ফেলা হয়েছে।’
ইএ/এসএন