ঢাকা-নারায়ণগঞ্জ রুটে চলাচলকারী বন্ধন ও উৎসব পরিবহনের বর্ধিত বাসভাড়া স্থগিত করা হয়েছে। শুক্রবার (২২ আগস্ট) জেলা ম্যাজিস্ট্রেট ও যাত্রী ও পণ্য পরিবহন কমিটির চেয়ারম্যান জাহিদুল ইসলাম মিঞা স্বাক্ষরিত এক আদেশে এ সিদ্ধান্ত জানানো হয়। ফলে এই রুটে ভাড়া পূর্বের মতোই ৫০ টাকা বহাল থাকবে।
এর আগে গত বুধবার (২০ আগস্ট) বিকেলে নারায়ণগঞ্জ জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ে অনুষ্ঠিত যাত্রী ও পণ্য পরিবহন কমিটির সভায় বাসভাড়া ৫ টাকা বাড়িয়ে ৫০ থেকে ৫৫ টাকা নির্ধারণ করা হয়। একইসঙ্গে সপ্তাহের সাত দিন শিক্ষার্থীদের জন্য হাফ ভাড়া নিশ্চিত করার সিদ্ধান্তও হয়।
সভায় জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ জাহিদুল ইসলাম মিঞা সভাপতিত্ব করেন। পরিবহন মালিকরা বাসের আসন সংখ্যা ৫২ থেকে কমিয়ে ৪৫ করার যুক্তি তুলে ধরেন। তাদের হিসাবে এই রুটে ভাড়া ৬০ টাকার কাছাকাছি হওয়া উচিত। শেষ পর্যন্ত জেলা প্রশাসক ভাড়া ৫৫ টাকা নির্ধারণের ঘোষণা দেন।
কিন্তু এই সিদ্ধান্তের সঙ্গে সঙ্গে রাজনৈতিক দল, নাগরিক সংগঠন ও যাত্রী অধিকার সংগঠনগুলো তীব্র বিরোধিতা করে।
গণসংহতি আন্দোলনের জেলা সমন্বয়কারী তরিকুল সুজন বলেন, “যাত্রী সাধারণের স্বার্থ বিবেচনা না করে কেবল বাসমালিকদের দাবিকে প্রাধান্য দেওয়া হয়েছে। এই সিদ্ধান্ত সাধারণ মানুষের সঙ্গে অন্যায়।”
যাত্রী অধিকার সংরক্ষণ ফোরামের আহ্বায়ক রফিউর রাব্বি বলেন, “তেল ও ডিজেলের দাম কমলেও ভাড়া বাড়ানো হয়েছে। সরকারি কোনো প্রজ্ঞাপনও নেই। এটা অযৌক্তিক ও উদ্দেশ্যপ্রণোদিত।” তিনি এ সিদ্ধান্ত প্রত্যাখ্যান করে আন্দোলনের হুঁশিয়ারি দেন।
অন্যদিকে, জেলা বাসমালিক সমিতির সভাপতি রওশন আলী দাবি করেন, যাত্রীদের বসার সুবিধার্থে বাসের সিট কমানো হয়েছে। তাই ভাড়া স্বাভাবিকভাবে বাড়বে। তার ভাষায়, “হিসাব করলে আরও বেশি ভাড়া হওয়ার কথা, কিন্তু জেলা প্রশাসক ৫৫ টাকা করেছেন, আমরা মেনে নিয়েছি।”
ঢাকা–নারায়ণগঞ্জ রুটে আগে বাসভাড়া ছিল ৪৫ টাকা। করোনা মহামারির সময় তা এক লাফে ৬০ টাকা করা হয়। পরে কমিয়ে আনা হয় ৫৫ টাকায়। গত বছর গণঅভ্যুত্থানের পর বাসভাড়া কমানোর দাবিতে আন্দোলনে নামে যাত্রী অধিকার সংরক্ষণ ফোরাম। আন্দোলনের মুখে গত ১৬ নভেম্বর জেলা প্রশাসন ভাড়া কমিয়ে ৫০ টাকা নির্ধারণ করে।
এবার আবার ভাড়া বাড়ানোর সিদ্ধান্ত হলে যাত্রীদের মধ্যে ক্ষোভ ছড়িয়ে পড়ে। বৃহস্পতিবার নারায়ণগঞ্জ প্রেস ক্লাবের সামনে শিক্ষার্থীরা মানববন্ধন করেন। তারা ২৪ ঘণ্টার আল্টিমেটাম দিয়ে বলেন, ভাড়া কমানো না হলে শহরে অবরোধ কর্মসূচি ঘোষণা করা হবে।
সবশেষে জেলা প্রশাসকের কার্যালয় থেকে জানানো হয়, অনিবার্য কারণবশত ভাড়া বৃদ্ধির সিদ্ধান্ত স্থগিত করা হলো। অর্থাৎ ঢাকা–নারায়ণগঞ্জ রুটে বন্ধন ও উৎসব পরিবহনের বাসভাড়া আপাতত ৫০ টাকা–ই বহাল থাকবে।
এসএন