অদ্ভুত নির্বাচনী ইশতেহার,আলোচনায় ডাকসুর জিএস প্রার্থীর পোস্ট

আসন্ন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ (ডাকসু) নির্বাচনে ১৯ জন জিএস প্রার্থী হয়েছেন। এদের মধ্যে এক অদ্ভুত এক ইশতেহার ঘোষণা করে আলোচনায় এসেছেন মো. আশিকুর রহমান। সেখানে তিনি লিখেছেন, ‘ডাকসুতে আগুন লাগাতে চলে এলাম বন্ধুরা’। তিনি ডাকসুতে সাধারণ সম্পাদক (জিএস) পদে নির্বাচনের জন্য মনোনয়ন জমা দিয়েছেন।

নিজের ইশতেহারে ক্লাসে উপস্থিতির নম্বর শিথিল করবেন বলে উল্লেখ করেছেন এ প্রার্থী। তিনি লিখেছেন, ‘আই ডিক্লেয়ার ওয়ার ওন মাই ফ্যাকাল্টিজ (শিক্ষক)। কেন আমাকে ওই ৫ মার্কের জন্য ঘণ্টার পর ঘণ্টা বস্তাপচা লেকচার শোনা লাগবে? এর থেকে ক্লাস না করে ভালো রেজাল্ট করা যায়। অ্যান্ড দে ইউজ ইট অ্যাজ এ ওয়েপন।

অ্যাটেনডেন্স ৭০-৭৫% হলেই ফুল মার্ক দেওয়া উচিত। আর ৫০% থাকলেও পরীক্ষায় বসতে দেওয়া উচিত। কিউএস র‌্যাঙ্কিং দিয়ে আদৌ কিছু হয়? আমাদের ঘাড়ের ওপর পা দিয়ে জাতে উঠার চেষ্টা করলে হবে না। অবশ্যই শিক্ষার্থীদের সুবিধা আগে।’

তিনি লিখেছেন, এই একটা কারণই যথেষ্ট ডাকসুতে দাঁড়ানোর। আরো পয়েন্ট আছে। যেগুলো সবাই দিয়েছে, অমুক উন্নয়ন, তমুক উন্নয়ন—এগুলো চাইলে কপি করে এখানে যোগ করা যাবে। কিন্তু আমি ওই ‘উদ্দীপকের গুরুত্ব অপরিসীম’ টাইপ লোক নই।

আশিকুর রহমান তার ইশতেহারে লিখেছেন, ‘বাস্তবতা হলো সদস্য হিসেবে তেমন পরিবর্তন আনার কারোরই সেরকম সুযোগ/মুরোদ নাই।

সর্বোচ্চ প্রেসারাইজ করতে পারবে। সমস্যাগুলো খুঁজবেন আপনারা। আমি রিপ্রেজেন্টেটিভ। আপনারা আমাকে সমস্যাগুলো বলবেন, সেটা নিয়ে দায়িত্বশীলদের সাথে ফাডাফাডি করার দায়িত্ব আমার। ফাডাফাডি, প্রেসারাইজ, আলোচনা করে দাবি আদায় আমার কাজ, সোফায় বসে আরাম করে তামাশা দেখা আপনার কাজ। কিন্তু হয় উল্টোটা। সমস্যা বের করে নেতারা আর তার জন্য রাস্তায় কষ্ট করে আন্দোলন করে সাধারণ শিক্ষার্থীরা।’

তিনি আরো লিখেছেন, মেইন ফোকাস হলো ঢাবির যে রিসোর্স আর ইনফ্রাস্ট্রাকচার আছে সেটা কিভাবে তার ফুল পটেনশিয়ালে ইউটিলাইজ করা যায় সেটা নিয়ে। মেয়েদের যাতায়াত, নিরাপত্তা, বিশেষ করে আবাসন সমস্যার জন্য ক্যাম্পাসে হল নির্মাণ অথবা কর্মচারীদের যেকোনো একটি ভবন হোস্টেলে (হল না) রূপান্তরের বিষয়ে কাজ করব। এছাড়াও ক্যাম্পাস যেন বহিরাগত জনসমাবেশের পার্কিং স্লট আর মূত্রবিসর্জনের জায়গা না হয়ে যায়, একাডেমিক এরিয়ায় সকল মিটিং-মিছিল শব্দদূষণ বন্ধ আর সর্বোচ্চ রাজুতে করার এখতিয়ার সেটাও প্রশাসনের অনুমতি সাপেক্ষে করা হবে।

ইশতেহারে এই শিক্ষার্থী উল্লেখ করেছেন, ঢাবিতে কোরআন তিলাওয়াত হবে, সাহিত্য-সংস্কৃতি চর্চা হবে, কনসার্ট সব হবে। কেউ কারো ধর্মীয় অনুভূতিতে আঘাত হানবে না।

আশিকুর রহমান লিখেন, আমি বিশ্বাস করি আমাদের পোলাপাইনরা পর্যাপ্ত ফান্ডিং পেলে মেধা আর রিসোর্স পরিপূর্ণভাবে ইউটিলাইজ করতে পারবে। বিজ্ঞান ও প্রযুক্তিতে উচ্চমানের গবেষণা হবে। এমনকি আমার বিশ্বাস তারা স্টেট অব দ্য আর্ট টেকনোলজি তৈরি করতে পারবে, আর সেটার শুরু হবে এই ঢাবি থেকেই ইনশাআল্লাহ।

তাকে কেন ভোট দেওয়া উচিত, তার যুক্তি হিসেবে তিনি উল্লেখ করেছেন তার আর্থিক সততা, কোনো নারী কেলেঙ্কারি নেই, ভাই ব্রাদার কোরাম নেই ও স্ট্র্যাটেজিক দক্ষতা ইত্যাদি।

ইংরেজি বিভাগের এ শিক্ষার্থী উল্লেখ করেছেন, রাজনীতি দুইভাবে হয়—থিওরি আর ডাইরেক্ট অ্যাকশন। বন্ধুরা সব দ্বিতীয়টাই বিশ্বাসী (যদিও বেশিরভাগ এটাই কার্যকরী) হলেও আমি সব মেটিকুলাসলি প্ল্যান করে করতে পছন্দ করি। আমি পেশাদার রাজনীতিবিদ নই। এজন্যই আমি একজন নেতার পরিবর্তে একজন রাজনৈতিক আমলা হিসাবে কাজ করতে চাই। ডাকসু জিএস-এর কাজও মোটাদাগে এমনই। সো আমি এখানে মূলত ‘দ্য ওয়ারটাইম কনসিলিয়ার (যুদ্ধকালীন পরামর্শদাতা) ফ্রম দ্য গডফাদার’।

আশিকুর রহমান তার ইশতেহারে আরও উল্লেখ করেছেন, আপনি যদি অ্যানিমে ও মুভি লভার হয়ে থাকেন তাহলে অবশ্যই এই ওটাকু (কাল্পনিক চরিত্র) কে ভোট দিবেন। এটা জেন-জি এর জন্য। আমার পোস্টার, প্রচারণা সব জেন-জি স্টাইলেই হবে।

আশিকুর তার স্বভাব-চরিত্র উল্লেখ করে লিখেছেন, আনরেস্পনসিভ—গভীর রাতে কোনো সমস্যায় পড়লে আমাকে ফোন দিলে অবশ্যই আমাকে পাবেন না। কারণ, আমি তাড়াতাড়ি ঘুমিয়ে পড়ি। বাইকও নেই যে একটান দিয়ে চলে যাব। তো ভোটাররা এই জায়গায় খেয়াল রাখবেন, বিশেষ করে হল সংসদে—যেকোনো সমস্যায় পড়লে কাকে ফোন দিলে পাওয়া যাবে। যদিও প্রক্টোরিয়াল টিমকে ফোন করলেও যথেষ্ট সাড়া পাবেন। এক্সপোজ—যেহেতু অন্যায়-অনিয়ম একদমই সহ্য করতে পারি না, তো যদি অন্য সদস্যরা একটুও অনিয়ম বা সিকি পয়সার কমিশনবাজি করে, তাদের এক্সপোজ করে দেব। তো যাদের সিলেটের পাথরচুরির সর্বদলীয় ঐক্যর মতো কিছু করার ইচ্ছা আছে, তারা আমাকে ভোট দেবেন না।

আশিকুর রহমানের এমন পোস্ট নিয়ে আলোচনা-সমালোচনা চলছে সামাজিক মাধ্যমে। বিশেষ করে সিগারেট মুখে দিয়ে ছবি পোস্ট করে প্রচারণার এই ধরন অনেকেই সহজে নিলেও কেউ কেউ সহজভাবে নিচ্ছেন না। অনেকেই এটিকে উদ্ধত আচরণ বলেও উল্লেখ করছেন। তবে সাধারণ নেটিজেনরা আশিকুরকে জানিয়েছেন স্বাগত, অনেকেই চাইছেন আশিকুরের মতো ছেলে যেন জেতে। তবে আশিকুর আশা করছেন তিনি জয়ী হবেন কি না সে বিষয়ে নিশ্চিত না হলেও ছাত্র ইউনিয়নের মেঘমল্লার বসুকে হারাবেন।

আশিকুরের গ্রামের বাড়ি নওগাঁ। পড়ছেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ইংরেজি বিভাগে। তিনি ২০২২-২৩ সেশনের শিক্ষার্থী।

এফপি/এসএন

Share this news on:

সর্বশেষ

img
পুতিন-জেলেনস্কি বৈঠকের কোনো পরিকল্পনা নেই: রুশ পররাষ্ট্রমন্ত্রী Aug 22, 2025
img
এশিয়া কাপ ও নেদারল্যান্ডস সিরিজের জন্য দল ঘোষণা, দলে ফিরলেন সোহান Aug 22, 2025
img
দেবের সঙ্গে ডেটিং গুঞ্জনে ইধিকার জবাব Aug 22, 2025
img
জয়া আহসানের বোল্ড লুকে নেটমাধ্যমে ঝড়! Aug 22, 2025
img
লাল দলের পর এবার সবুজ দলও হারল যুবাদের কাছে Aug 22, 2025
অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে দক্ষিণ আফ্রিকার তারকা পারফরম্যান্সে রেকর্ড! Aug 22, 2025
শরীফুল খানের অর্জনে উচ্ছ্বসিত প্রবাসী বাংলাদেশিরা Aug 22, 2025
ভোট কেন্দ্র পরিবর্তন নিয়ে যা বললেন উমামা ফাতেমা Aug 22, 2025
img
দণ্ডপ্রাপ্ত ব্লগার ফারাবী জামিনে মুক্ত Aug 22, 2025
ইনক্লুসিভ প্যানেলে নতুন দিগন্তের স্বপ্ন দেখছে ছাত্রশিবির Aug 22, 2025
img
ঢাকা ওয়াসার আর্থিক বিবরণ ও হিসাব খতিয়ে দেখার জন্য কমিটি গঠন Aug 22, 2025
img
অস্ট্রেলিয়াকে লজ্জায় ডুবিয়ে সিরিজ জয় দক্ষিণ আফ্রিকার Aug 22, 2025
img
ডিএনসিসির ক্রয় কার্যক্রম সম্পাদনে কমিটি গঠন Aug 22, 2025
img
ম্যানচেস্টার সিটির সাথে চুক্তির মেয়াদ বাড়ালো দিয়াস Aug 22, 2025
img
আমরা পতিত ফ্যাসিস্ট আমলের মতো আর গুমের শিকার হতে চাই না : রিজভী Aug 22, 2025
img
আওয়ামী লীগের আর ফিরে আসার সুযোগ নেই : নুর Aug 22, 2025
img
ঐকমত্য কমিশনে মতামত দেয়নি যেসব দল Aug 22, 2025
img
পররাষ্ট্রমন্ত্রীর ঢাকা সফর নিয়ে পাকিস্তানের বিবৃতি Aug 22, 2025
img
এমন সিনেমা বানাব, যা বিশ্বে তোলপাড় লাগিয়ে দিবে : জয় Aug 22, 2025
img
জুলাই সনদের খসড়া নিয়ে মতামত জানিয়েছে ২৩টি রাজনৈতিক দল Aug 22, 2025