খ্যাতিমান সাংবাদিক ও কলাম লেখক বিভুরঞ্জন সরকারের মরদেহ মুন্সিগঞ্জের গজারিয়ায় মেঘনা নদী থেকে উদ্ধার করা হয়েছে। তার মৃত্যুর খবরে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকজুড়ে শোকের ছায়া নেমে এসেছে।
শুক্রবার (২২ আগস্ট) সন্ধ্যার দিকে বিভিন্ন গণমাধ্যমে বিভুরঞ্জন সরকারের মরদেহ উদ্ধারের সংবাদটি ছড়িয়ে পড়ে। এতে তার সহকর্মীরা দুঃখ ভারাক্রান্ত হয়ে পড়েন।
স্বজনরা জানান, বৃহস্পতিবার (২১ আগস্ট) সকালে পত্রিকা অফিসে যাওয়ার কথা বলে বাসা থেকে বের হয়ে নিখোঁজ হন বিভুরঞ্জন। কোথাও সন্ধান না পেয়ে ওই রাতেই রমনা থানায় সাধারণ ডায়েরি (জিডি) করেন তারা।
পরে জানা যায়, নিখোঁজের আগে একটি অনলাইন পোর্টালকে মেইল করা খোলা চিঠিতে প্রবীণ এ সাংবাদিক পারিবারিক ও পেশাগত নানা সীমাবদ্ধতার কথা জানান। এতে তিনি নিজের ও ছেলের অসুস্থতা, মেডিকেল পাস সরকারি কর্মকর্তা মেয়ের উচ্চতর পরীক্ষায় ‘ফেল করা’, বুয়েটে থেকে পাস করা ছেলের ‘চাকরি না হওয়া’ এবং নিজের আর্থিক দৈন্য নিয়ে হতাশার কথা লিখেছেন। সবশেষ একটা কলাম প্রকাশ নিয়ে চাপের কথাও বলেছেন তিনি। এ চিঠি পড়ে অনেকের মনে প্রবলভাবে দাগ কেটেছে।
ফেসবুকে তার দীর্ঘ দিনের সহকর্মীরা হৃদয়গ্রাহী স্মৃতিচারণ করছেন। এছাড়াও অনেক সাধারণ মানুষও তার মৃত্যু নিয়ে বেদনাদায়ক প্রতিক্রিয়া জানাচ্ছেন।
আজকের কাগজের সাবেক সম্পাদক ড. গোলাম রহমান লিখেন,
আজকের পত্রিকায় থাকাকালীন আমার অন্যতম সহকর্মী এবং বন্ধু বিভুরঞ্জন সরকারের লাশ নারায়ণগঞ্জের অদূরে শীতলক্ষ্যা নদী থেকে উদ্ধার করা হয়েছে। তার আত্মার শান্তি কামনা করি। তার মৃত্যু অনেক প্রশ্নের জন্ম দিয়ে গেল! তার লেখা একটি লেখা থেকে সমাজের প্রতি তার অভিমান স্পষ্ট হয়ে উঠেছে। শোকসন্তপ্ত পরিবারের প্রতি শোক ও সমবেদনা জানাচ্ছি।
সিনিয়র সাংবাদিক জ ই মামুন লিখেন, ‘নিখোঁজের দুদিন পর প্রখ্যাত কলামিস্ট, সাংবাদিক বিভুরঞ্জন সরকারের মরদেহ পাওয়া গেল মেঘনা নদীতে। কী আক্ষেপ, হতাশা আর অভিমান নিয়ে তিনি চলে গেলেন। তা প্রতিটি শব্দে-অক্ষরে ফুটে উঠেছে তার জীবনের শেষ লেখায়। আমাদের ক্ষমা করবেন, শ্রদ্ধেয় বিভু দা!’
সাংবাদিক শরিফুল্লাহ কায়সার সুমন লিখেন, ‘পরিবার হয়তো নিশ্চিত করবেন এই লাশ বিভুদার। কিন্তু আসলে এই লাশ সৎ সাংবাদিকতার।’
হাসান মিসবাহ নামে একজন লিখেন, ‘মানুষ মারা গেলে তার জন্য কত হা-হুতাশ, কত দুঃখ এই সমাজের। অথচ বেঁচে থাকতে তার যন্ত্রণা বুঝা দূরে থাক, তার কথা শোনার সময়ও কারও নেই।’
সফিউল আজম রাজন লিখেন,
কতজন কত কিছু পেয়েছে। অথচ উনার মতো সৎ ও সাহসী সাংবাদিক কিছুই পাননি। উনার মতো লেখনী কয়জনের ছিল? রাম, শ্যাম, যদু, মধুও প্লট পেয়েছেন সাংবাদিক কোটায়। কিন্তু উনি দুবার আবেদন করেও পাননি। প্রধানমন্ত্রীর তহবিল থেকে কতজন সাহায্য পেয়েছেন। কিন্তু উনি আবেদন করলেও তাকে দেয়া হয়নি। এমন একজন মেধাবী ও কমিটেড মানুষ শুধু অভাবের কারণে এভাবে চলে গেলেন। এ দায় কার? জানি এ নিয়ে কারও কিছু যাবে আসবে না। কাঁদবে শুধু পরিবার। পুরো রাষ্ট্রযন্ত্রের প্রতি একরাশ ঘৃণা জানিয়ে রাখলাম।
‘দুঃখই হোক আমার জীবনের শেষ সঙ্গী। আর পৃথিবীর সব প্রাণী সুখী হোক’-বিভুরঞ্জন সরকারের খোলা চিঠির এই মন্তব্য ফেসবুকে পোস্ট দেন আইন উপদেষ্টা আসিফ নজরুল।
টিকে/