নতুন করে মহাবিপদের মুখে পড়তে যাচ্ছে ইরান

ইরানের দীর্ঘতম এবং একমাত্র নৌযান চলাচলের উপযোগী নদী কারুন নদী। যত দিন যাচ্ছে এ নদী তার স্বাভাবিকতা হারাচ্ছে। খরা, প্রবাহ হ্রাস, রাসায়নিক দূষণ এবং জলাভূমির ক্ষয়ের কারণে অদূর ভবিষ্যতে নদীর বড় একটি অংশ বিলীনের শঙ্কায় রয়েছে।

বিশেষজ্ঞদের মতে, কারুন-৩, কারুন-৪ ও গোতভান্দের মতো বাঁধের মাধ্যমে জলবিদ্যুতের মূল উৎস এই নদীটির পানির স্তর তীব্রভাবে হ্রাস পেয়েছে। দীর্ঘদিন ধরে ইরানের বাঁধ নির্মাণ নীতিকে অস্থিতিশীল বলে সমালোচনা হয়ে আসছে। বৈজ্ঞানিক পরিকল্পনার চেয়ে দুর্বল শাসনব্যবস্থা এবং স্বল্পমেয়াদী রাজনৈতিক স্বার্থ দ্বারা পরিচালিত প্রকল্পের কারণে নদীর এই দশা হচ্ছে বলে মনে করেন তারা।

এ নিয়ে ইরান ইন্টারন্যাশনালের এক প্রতিবেদনে জলাভূমি বাস্তুতন্ত্র ব্যবস্থাপনা বিশেষজ্ঞ আলী আরভাহির বক্তব্য তুলে ধরা হয়। বৃহস্পতিবার তিনি সাংবাদিকদের বলেন, নদীটি সংকটে পড়ার সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ কারণ হলো কারুন ও গোতভান্দের মতো বাঁধ নির্মাণ প্রকল্প, ইসফাহান ও ইয়াজদের মতো প্রদেশে ইন্টার-বেসিন পানি স্থানান্তর এবং খুজেস্তানে আখ ও ধানের মতো পানি-নির্ভর ফসলের চাষ।

কারুন ৩ এবং গোতভান্দ বাঁধ খুজেস্তান প্রদেশে অবস্থিত। সেখানে কারুন ৪ চাহারমহল এবং বখতিয়ারিতে অবস্থিত।

আরভাহি উল্লেখ করেন, সাম্প্রতিক বছরগুলোতে করুণ নদীর প্রবাহ প্রতি সেকেন্ডে ১০০ ঘনমিটারের নিচে নেমে এসেছে। যা একসময় প্রতি সেকেন্ডে ৫০০ থেকে ৬০০ ঘনমিটার ছিল।

পানি সংকট ও বায়ু দূষণ

খুজেস্তান আখ চাষের একটি প্রধান কেন্দ্র। চলমান পানি সংকট সত্ত্বেও, ৮০,০০০ হেক্টরেরও বেশি আখ চাষের আওতায় রয়েছে। আরভাহি বলেন, খুজেস্তানের আধা-শুষ্ক জলবায়ুতে আখ চাষ দীর্ঘমেয়াদে টেকসই বা অর্থনৈতিকভাবে কার্যকর নয়। কারুন অববাহিকার বৃহত্তম পরিকল্পনামূলক ভুলগুলোর মধ্যে এটি একটি। যা সীমিত পানি সম্পদের উপর চরম চাপ সৃষ্টি করছে।
ইরানের মধ্যে এই প্রদেশটি সর্বোচ্চ বায়ু দূষণের মাত্রারও শিকার।

বৃহস্পতিবার ইরানের এয়ার কোয়ালিটি মনিটরিং সিস্টেম খুজেস্তানের একাধিক শহরে অস্বাস্থ্যকর (লাল-স্তরের) অবস্থার রেকর্ড করেছে। আহভাজের স্কোর ছিল ১৬৮, হেন্দিজানের ১৬৭, বেহবাহানের ১৬৩, রামহরমোজের ১৫৬, আন্দিমেশক ও ওমিদিয়াহের স্কোর ছিল ১৫৫।

বায়ু মান সূচকে নিরাপদ (সবুজ) স্কোর হলো ০-৫০। ১০০ এর উপরে স্কোর পাওয়া যেকোনো শহর অস্বাস্থ্যকর বলে বিবেচিত। সেসব শহরে সংবেদনশীল গোষ্ঠীর বসবাস নিরাপদ নয়।
বিরূপ জলবায়ু

চলমান অর্থনৈতিক সংকটের মধ্যে ইরান বর্তমানে তীব্র সুপেয় পানি সংকট এবং ব্যাপক বিদ্যুৎ বিভ্রাটসহ একাধিক জাতীয় চ্যালেঞ্জের মুখোমুখি হচ্ছে। এসব দেশের কৃষি শিল্পকেও ক্ষতিগ্রস্ত করছে।

রিবেশবিদ এবং পরিবেশ বিশেষজ্ঞ মনসুর সোহরাবি ইরান ইন্টারন্যাশনালকে বলেন, আমরা এখন যে পরিস্থিতি দেখছি তা হলো- দেশের বেশিরভাগ অংশে সম্পূর্ণ খরা দেখা দিতে পারে।

অব্যবস্থাপনার কারণে এমনটি ত্বরান্বিত হচ্ছে। যখন তারা (কর্তৃপক্ষ) এই সমস্যাগুলো প্রতিরোধ করতে পারত, তখন তারা কোনো মনোযোগ দেয়নি।

গত এক বছরে ইরানে গড় তাপমাত্রা ১.৫ ডিগ্রি সেলসিয়াস বৃদ্ধি এবং বৃষ্টিপাত ৪৫% হ্রাস রেকর্ড করা হয়েছে। এ পরিস্থিতি দেশব্যাপী মরুকরণকে ত্বরান্বিত করেছে।

কারুন নদী ইরানের দীর্ঘতম নদী। জাগ্রোস পর্বতমালা থেকে খুজেস্তান প্রদেশ হয়ে পারস্য উপসাগর পর্যন্ত ৯৫০ কিলোমিটার (৫৯০ মাইল) বিস্তৃত এ নদী। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, ইরানকে বাঁচাতে হলে অবশ্যই এ নদীকেও বাঁচিয়ে রাখতে হবে।

পিএ/টিকে

Share this news on:

সর্বশেষ

img
জনগণের মতামত নিয়েই রাষ্ট্র গঠন করতে হবে : ফরহাদ মজহার Aug 23, 2025
img
যুক্তরাষ্ট্রে রপ্তানির মাধ্যমেই শক্তিশালী অর্থনীতিতে পরিণত হবে বাংলাদেশ: প্রেস সচিব Aug 23, 2025
img
আমাকেও বাংলাদেশে ফেরত পাঠানো হতে পারে, তবে আপত্তি নেই: অমর্ত্য সেন Aug 23, 2025
বরিশালে কারাগারে ধরা পড়ল ভুয়া গোয়েন্দা Aug 23, 2025
নির্বাচনে অংশ নিতে চায় জাপা, সরকারের নিরপেক্ষতা নিয়ে উদ্বেগ! Aug 23, 2025
রাউডি রাঠোর ২ নিয়ে গুঞ্জন শেষ, এবার শুরু শুটিংয়ের প্রস্তুতি! Aug 23, 2025
img
'ভারতের সঙ্গে নিরপেক্ষ জায়গায় আলোচনায় আগ্রহী পাকিস্তান ' Aug 23, 2025
img
সন্ধ্যায় বিএনপির সঙ্গে পাকিস্তানের পররাষ্ট্রমন্ত্রীর বৈঠক Aug 23, 2025
img
ঘুষকাণ্ডে পটুয়াখালীর পিপি রুহুল আমিনের সনদ স্থগিত Aug 23, 2025
img
স্বাধীনভাবে মত প্রকাশ করতে গিয়ে চাপে ছিলেন বিভুদা : মোস্তফা ফিরোজ Aug 23, 2025
img
সামনে খারাপ সময় আসছে, যদি নির্বাচন না হয় : হেলাল Aug 23, 2025
img
সারাদেশে ২৪ ঘণ্টায় ডেঙ্গুতে ৪ জনের মৃত্যু, হাসপাতালে ভর্তি ২৪৭ Aug 23, 2025
img
কর্তৃত্ববাদীদের পতন হলেও কর্তৃত্ববাদী চর্চা বহাল আছে : ড. ইফতেখারুজ্জামান Aug 23, 2025
বাংলায় কথা বললেই বাংলাদেশে ফেরত? অমর্ত্য সেনের উদ্বেগ Aug 23, 2025
img
চাঁদাবাজির ঘটনায় দুই তরুণকে গণপিটুনি দিয়ে পুলিশের সোপর্দ Aug 23, 2025
img
নির্বাচনকে প্রশ্নবিদ্ধ করতে একের পর এক অজুহাত দেখছি : জাহেদ উর রহমান Aug 23, 2025
img
বিদ্যমান সংবিধানে এনসিপির ভোটে অংশগ্রহণ নিয়ে সংশয় আছে : আখতার হোসেন Aug 23, 2025
img
সাইফকে এশিয়া কাপ দলে রাখার কারণ জানাল বিসিবি Aug 23, 2025
img
গোপালগঞ্জে আরো ১৪ আওয়ামী লীগ নেতার পদত্যাগ Aug 23, 2025
img
নির্বাচন হলে বিএনপি ক্ষমতায় যাবে: রুমিন ফারহানা Aug 23, 2025