ইউক্রেনে রুশ বাহিনীর সামরিক অভিযানের দায়ে রাশিয়াকে শাস্তি দিতে ইউরোপের ২৭টি দেশের জোট ইউরোপীয় ইউনিয়ন (ইইউ) এবং জোটের সদস্যরাষ্ট্রগুলো দেশটির ওপর যেসব নিষেধাজ্ঞা জারি করেছে, সেগুলো যুদ্ধ শেষ হলেও কার্যকর থাকবে। ইইউ’র প্রভাবশালী সদস্যরাষ্ট্র ফিনল্যান্ডের পররাষ্ট্রমন্ত্রী এলিনা ভালতোনেন এই ইঙ্গিত দিয়েছেন।
‘বার্ষিক রাষ্ট্রদূত দিবস’ উপলক্ষে রাজধানী হেলনিঙ্কিতে অনুষ্ঠানের আয়োজন করেছিল ফিনল্যান্ডের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়। সেখানে প্রধান অতিথির ভাষণে এলিনা ভালতোনেন বলেন, “যুদ্ধ শেষ হলেও (রাশিয়ার ওপর) চাপ অব্যাহত রাখা হবে। কেবল যুদ্ধবিরতি কিংবা শান্তিচুক্তি রাশিয়ার ওপর থেকে নিষেধাজ্ঞা তুলে নেওয়ার জন্য যথেষ্ট নয়।”
এলিনা ভালতোনেন বলেন, ইইউ রাশিয়ার ওপর ১৯তম নিষেধাজ্ঞা প্যাকেজের খসড়া তৈরি করছে এবং অচিরেই তা কার্যকর করা হবে। এর পাশাপাশি ফিনল্যান্ড রাশিয়ার ওপর অতিরিক্ত রপ্তানি শুল্ক আরোপের প্রস্তুতি নিচ্ছে বলেও উল্লেখ করেছেন তিনি।
“ইইউ চিরস্থায়ীভাবে রাশিয়ার ওপর নিষেধাজ্ঞা জারির পক্ষে নয়, তবে আমরা কঠিন শর্তের ভিত্তিতে ধীরে ধীরে এসব নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহার করতে চাই”, নিজ ভাষণে বলেন ভালতোনেন।
প্রসঙ্গত, কৃষ্ণ সাগরের ক্রিমিয়া উপদ্বীপকে রুশ ভূখণ্ড হিসেবে স্বীকৃতি না দেওয়া এবং পশ্চিমা বিশ্বের সামরিক জোট ন্যাটোর সদস্যপদের জন্য ইউক্রেনের আবেদনকে ঘিরে কয়েক বছর টানাপোড়েন চলার পর ২০২২ সালের ২৪ ফেব্রুয়ারি থেকে ইউক্রেনে সামরিক অভিযান শুরু করে রুশ বাহিনী, যা এখনও চলছে। গত সাড়ে তিন বছর ধরে চলমান এই যুদ্ধে ইতোমধ্যে উভয় পক্ষের লাখ লাখ মানুষ প্রাণ হারিয়েছেন।
রুশ বাহিনী ইউক্রেনে অভিযান শুরুর পরপরই শাস্তিমূলক পদক্ষেপ হিসেবে রাশিয়ার বিরুদ্ধে একের পর এক নিষেধাজ্ঞা জারি করতে থাকে ইউরোপীয় ইউনিয়ন এবং এই জোটের সদস্যরাষ্ট্রগুলো। ইউরোপের বিভিন্ন ব্যাংকের হিসাবে জমা থাকা রুশ সরকারের অর্থ ও স্বর্ণ ফ্রিজ করা হয়, রুশ জ্বালানি তেলের আন্তর্জাতিক মূল্যও নির্ধারণ করে দেওয়া হয়।
ইইউ’র এসব নিষেধাজ্ঞার লক্ষ্য ছিল রাশিয়ার অর্থনীতিকে পুরোপুরি পঙ্গু করে ফেলা, তবে সেই লক্ষ্য পুরোপুরি সফল হয়নি, রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধও থামেনি।
২০২৫ সালের জানুয়ারিতে দ্বিতীয় দফায় যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্টের পদে আসীন হওয়ার পর ডোনাল্ড ট্রাম্প বলেছিলেন, আন্তর্জাতিক ইস্যুগুলোর মধ্যে রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধাবসানকে অগ্রাধিকার দেবেন তিনি। গত মে মাস থেকে যুক্তরাষ্ট্রের গুরুত্বপূর্ণ মিত্র তুরস্কের মধ্যস্থতায় ইস্তাম্বুলে শান্তি সংলাপে বসেছেন রাশিয়া ও ইউক্রেনের সরকারি প্রতিনিধিরা।
পাশাপাশি আট মাস ধরে কয়েক বার ফোনালাপের পর গত ১৫ আগস্ট যুক্তরাষ্ট্রের আলাস্কা অঙ্গরাজ্যে রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনের সঙ্গে বৈঠক করেছেন ট্রাম্প। পুতিনের সঙ্গে বৈঠকের তিন দিন পর ১৮ আগস্ট হোয়াইট হাউসে জেলেনস্কি এবং ইউরোপীয় ইউনিয়েনের নেতৃবৃন্দের সঙ্গেও বৈঠক করেছেন ট্রাম্প।
পুতিন, জেলেনস্কি এবং ইউরোপীয় ইউনিয়নের নেতাদের সঙ্গে বৈঠকের পর ট্রাম্প বলেছিলেন, শিগগিরেই রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের অবসানের ব্যাপারে তিনি আশাবাদী।
সোমবারের ভাষণে ভালতোনিন বলেন, পুতিন আসলে পুরো ইউক্রেন দখল করতে চাইছেন এবং ইইউ এই ‘অবৈধ উচ্চাকাঙ্ক্ষা’ কখনও সফল হতে দেবে না।
“যুদ্ধের পরও ইউক্রেনকে সামরিক সহায়তা প্রদান অব্যাহত রাখবে ফিনল্যান্ড; এবং ইউক্রেন যদি তার সরকারি প্রশাসনের সংস্কার এবং দুর্নীতি নির্মূল অভিযানে সন্তোষজনক ফলাফল দেখাতে পারে, তাহলে কিয়েভকে ন্যাটো ও ইইউ’র সদস্যপদও প্রদান করা হবে” বলেছেন এলিনা ভালতোনেন।
সূত্র : আনাদোলু এজেন্সি
এসএন