নির্বাচন ঘিরে এখনো অনিশ্চয়তা কাটছে না : জিল্লুর রহমান

নির্বাচন ঘিরে এখনো অনিশ্চয়তা কাটছে না বলে মন্তব্য করেছেন রাজনৈতিক বিশ্লেষক ও উপস্থাপক জিল্লুর রহমান। তিনি বলেছেন, অন্তর্বর্তী সরকারের মূল কাজই হচ্ছে একটা সুষ্ঠু ও অংশগ্রহণমূলক নির্বাচনের আয়োজন করা। জনগণের হাতে আবার ক্ষমতা ফিরিয়ে দেওয়া ছাড়া কোনো বিকল্প নেই। কিন্তু নির্বাচন ঘিরে এখনো অনিশ্চয়তা ও সংশয় কাটছে না, যা দেশের ভবিষ্যতের জন্য মারাত্মক সংকেত।

নিজের ইউটিউব চ্যানেলে প্রকাশ করা এক ভিডিওতে এসব কথা বলেন তিনি।


জিল্লুর রহমান বলেন, বাংলাদেশের রাজনীতি আজ এমন এক সংকটের মুখোমুখি দাঁড়িয়ে আছে, যেখানে একটি গ্রহণযোগ্য জাতীয় নির্বাচন আয়োজন ছাড়া কোনো বিকল্প নেই। গণতন্ত্র পুনঃপ্রতিষ্ঠা, আন্তর্জাতিক আস্থা পুনরুদ্ধার এবং জনগণের মধ্যে নিজেদের ভবিষ্যৎ নিয়ে আত্মবিশ্বাস ফিরিয়ে আনতে হলে ২০২৬ সালের ফেব্রুয়ারির নির্বাচন আমাদের জন্য একটা অনিবার্য চ্যালেঞ্জ হয়ে দাঁড়িয়েছে। কিন্তু প্রশ্ন হচ্ছে আমরা কি এই নির্বাচনের প্রকৃত গুরুত্ব সত্যিই বুঝি? নাকি এটিকে শুধুই একটি রাজনৈতিক ক্ষমতার লড়াইয়ের অনুষ্ঠান হিসেবে বিবেচনা করছি।

তিনি আরো বলেন, ১৯৯১ ও ৯৬, ২০০১ ও ২০০৮-এর নির্বাচন তুলনামূলকভাবে স্বাধীন এবং গ্রহণযোগ্য হিসেবে বিবেচিত হয়েছিল। যদিও ২০০৮-এর নির্বাচন নিয়ে একটা বড় প্রশ্ন আছে। পরাজিত দলগুলো বিভিন্ন নির্বাচনের পর অভিযোগ তুলেছে। তবে শেষ পর্যন্ত তারা ফল মেনে নিয়ে সংসদীয় প্রক্রিয়ায় অংশ নিয়েছিল।

কিন্তু পরে এই ব্যবস্থাকে বাতিল করে দেওয়ার ফল ভোগ করতে হয়েছে পুরো জাতিকে।

এই রাজনৈতিক বিশ্লেষক আরো বলেন, আওয়ামী লীগ ও বিএনপি উভয় দল সংসদকে দুর্বল করার দায় এড়াতে পারে না। বিরোধী দল হিসেবে তারা সংসদে অনুপস্থিত থেকে ওয়াকআউট-বয়কট ও পদত্যাগের মাধ্যমে সংসদকে অকার্যকর করেছে। আর ক্ষমতায় থাকাকালে সংসদকে নির্বাহী বিভাগের অনুগত একটি প্রতিষ্ঠান হিসেবে ব্যবহার করেছে। ফলে জনগণের প্রতিনিধিত্বমূলক প্রতিষ্ঠান দুর্বল হয়ে পড়েছে এবং গণতন্ত্র তার মূল সত্তা হারিয়েছে।

তিনি বলেন, সংসদ কার্যত দলীয় প্রধানের ইচ্ছা অনুযায়ী চলত। এমপিরা হয়ে উঠেছিলেন কেবলমাত্র অনুগত কর্মচারী। উন্নয়ন তহবিল আত্মসাৎ থেকে শুরু করে ব্যক্তিগত স্বার্থে ক্ষমতার অপব্যবহার সব কিছু মিলিয়ে গণতন্ত্রকে তিনি প্রায় ধ্বংস করে দিয়েছিলেন। এর ফল আজকের অনিশ্চয়তা ও সংশয়। বাংলাদেশের জনগণ আজও ভাবছে ফেব্রুয়ারিতে নির্বাচন সত্যি হবে? বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল বিএনপি এখন যত দ্রুত সম্ভব নির্বাচন চায়। তাদের বিশ্বাস, বর্তমান পরিস্থিতিতে নির্বাচনে গেলে তারা সংখ্যাগরিষ্ঠতা পাবে। তাই নির্বাচন বিলম্বিত হলে তাদের ক্ষতি হবে। সমালোচকদের মতে বিএনপির এই আগ্রহ গণতন্ত্রের প্রতি আন্তরিকতার চেয়ে রাজনৈতিক সুবিধা নেওয়ার হিসাব-নিকাশ। তাদের কিছু নেতাকর্মী ইতিমধ্যে ক্ষমতার লোভে এমন সব কাজে জড়িয়ে পড়েছে, যা আগের সরকারের বদনামের কারণ হয়েছিল।

অন্যদিকে এনসিপি ভিন্ন অবস্থান নিয়েছে। তারা মনে করে সময় যত যাবে, তাদের জনসমর্থন তত বাড়বে। তাই তারা নির্বাচনের আগে সংস্কার বাস্তবায়নের দাবি তুলেছে এবং জুলাই সনদকে সংবিধানের ঊর্ধ্বে স্থান দিতে চাইছে। বিএনপি যথার্থই প্রশ্ন তুলেছে। রাজনৈতিক সমঝোতার দলিল কি সংবিধানের ওপর স্থান পেতে পারে? যদি এমন হয়, তবে তা হবে একটি ভয়ংকর নজির, যা ভবিষ্যতে দেশকে আরো গভীর সংকটে ঠেলে দিতে পারে।

জিল্লুর রহমান বলেন, জামায়াতে ইসলামী আনুপাতিক প্রতিনিধিত্ব বা পিআর পদ্ধতির দাবি তুলেছে। তাদের যুক্তি ফাস্ট পাস দ্য পোস্ট পদ্ধতিতে তারা সব সময় বঞ্চিত হয়েছে। কিন্তু পিয়ার পদ্ধতির দুর্বলতা হলো, এতে জনগণ সরাসরি প্রার্থীকে ভোট দিতে পারে না। দলকেই ভোট দিতে হয়। ফলে প্রার্থী ও জনগণের সম্পর্ক বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়। আমাদের রাজনৈতিক সংস্কৃতিতে প্রার্থী ও ভোটারের এই প্রত্যক্ষ সম্পর্ক অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।

এনসিপিও এই দাবিকে সমর্থন করছে। যদিও তাদের কোনো নির্বাচনী অভিজ্ঞতা নেই। সব বিলিয়ে দলগুলো নিজেদের স্বার্থকে জাতীয় স্বার্থের ওপরে স্থান দিচ্ছে এবং নির্বাচন প্রক্রিয়াকে আরো অনিশ্চিত করে তুলেছে। প্রধান উপদেষ্টা ড. ইউনূস ঘোষণা দিয়েছেন, নির্বাচন হবে ২০২৬ সালের ফেব্রুয়ারির প্রথম ভাগে এবং তফসিল ঘোষণা হবে ডিসেম্বরেই। কিন্তু তবুও মানুষের মনে অনিশ্চিয়তা রয়ে গেছে।

এমকে/এসএন 

Share this news on:

সর্বশেষ

img
নির্বাচনী প্রচারে সর্বাধিক ২০টি বিলবোর্ড, লাউড স্পিকারে বিধিনিষেধ Dec 13, 2025
img
ওসমান হাদির বাড়ির জানালা ভেঙে চুরি Dec 13, 2025
img
কাস্পিয়ান সাগরে রুশ তেল অবকাঠামোয় ফের হামলা কিয়েভের Dec 13, 2025
img
বিষণ্ণতা কতটা ভয়াবহ আমি বুঝি : শুভশ্রী Dec 13, 2025
img
জমেলা টাওয়ারে আগুন নিয়ন্ত্রণে চ্যালেঞ্জ বেজমেন্টের দোকান: ফায়ার সার্ভিস Dec 13, 2025
img
দুর্নীতির অভিযোগে বরখাস্ত ভারতের ৪ ক্রিকেটার Dec 13, 2025
img
যুক্তরাজ্যে নাগরিকত্ব হারানোর ঝুঁকিতে বাংলাদেশি বংশোদ্ভূতসহ লাখো মানুষ Dec 13, 2025
img
দূষিত শহরের তালিকায় শীর্ষে দিল্লি, ঢাকার বাতাসও ‘অস্বাস্থ্যকর’ Dec 13, 2025
img
ওসমান হাদির গুলিবিদ্ধের ঘটনায় ছাত্র মৈত্রীর প্রতিবাদ Dec 13, 2025
img
সূর্যবংশীকে ছাপিয়ে পাকিস্তানি ব্যাটারের রেকর্ড Dec 13, 2025
img
সিলেটে স্থান পেল ইংল্যান্ডের ইথান ব্রুকস Dec 13, 2025
img
প্রধান উপদেষ্টার সঙ্গে দেখা করতে যমুনায় যাচ্ছেন বিএনপির শীর্ষ দুই নেতা Dec 13, 2025
img
‘স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টাকে পদত্যাগ করিয়ে আমরা ঘরে ফিরবো’ Dec 13, 2025
img
দেশের বাজারে আজ কত দামে বিক্রি হচ্ছে স্বর্ণ Dec 13, 2025
img
জনপ্রিয় গায়িকা টেলর সুইফটের রাজকীয় বিয়েতে কত খরচ হতে পারে? Dec 13, 2025
img
সারা দেশে আজ বিএনপির বিক্ষোভ Dec 13, 2025
img
সপ্তাহজুড়ে শৈত্যপ্রবাহে কাঁপবে দেশের ৪ থেকে ৫ জেলা Dec 13, 2025
img
সংঘাতের ৬ দিনে থাইল্যান্ড-কম্বোডিয়ায় নিহত ২৩, ঘর ছাড়া ৭ লাখ Dec 13, 2025
img
পিস্তলসহ গ্রেপ্তারের ১ মাস পরই জামিন পান হাদিকে গুলি করা ফয়সাল Dec 13, 2025
img
রাজশাহীতে এনসিপি নেতাকে মারধর, রক্ষা করতে গিয়ে পুলিশ আঘাতপ্রাপ্ত Dec 13, 2025