রাজনৈতিক বিশ্লেষক ও উপস্থাপক জিল্লুর রহমান বলেছেন, সংস্কার-বিচারবিহীন নির্বাচন আর অর্থহীন শরণার্থী শিবির- এই দুই বাস্তবতা মিলে এক ভয়াবহ ভবিষ্যতের ইঙ্গিত দিচ্ছে। কিন্তু আমরা যদি সাহস নিয়ে সংস্কারের পথে হাঁটি, বিচারের কাজগুলো সমাধান করার চেষ্টা করি এবং নির্বাচনটাও ঠিকঠাক মতো করি, হয়তো আস্থাহীনতার এই দুষ্টচক্র ভাঙা সম্ভব। বাংলাদেশের ইতিহাস বলছে, মানুষ সবসময় পরিবর্তনের জন্য লড়েছে।
নিজের ইউটিউব চ্যানেলে দেওয়া এক ভিডিওতে এসব কথা বলেন তিনি।
জিল্লুর রহমান আরও বলেন, ‘বাংলাদেশ আজ এমন এক সময় পার করছে, যেখানে একই সঙ্গে দুটো জটিল বাস্তবতা সামনে এসে দাঁড়িয়েছে। একদিকে সংস্কারবিহীন নির্বাচনের আশঙ্কা নিয়ে রাজনীতির উত্তপ্ত মঞ্চ। অন্যদিকে কক্সবাজার ও ভাসানচরের রোহিঙ্গা শিবিরে কোটি মানুষের হাহাকার। এই দুটো বিষয়কে আলাদা করে দেখা সহজ।
কিন্তু গভীরভাবে বিশ্লেষণ করলে বোঝা যায়, এগুলো একই সূত্রে বাঁধা। যদি রাজনৈতিক প্রক্রিয়ায় সংস্কারের বিশ্বাসযোগ্যতা না আসে তবে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের আস্থাও হারাতে থাকবে। সেই আস্থা হারাবার প্রথম প্রমাণ এখন রোহিঙ্গা তহবিলের সংকটে স্পষ্ট হয়ে উঠছে।’
তিনি বলেন, “নোবেল লরিয়েট ড. ইউনূস কক্সবাজারে অনুষ্ঠিত রোহিঙ্গা অংশীজন সংলাপে দাঁড়িয়ে ঘোষণা করেছেন বাংলাদেশ এখন নির্বাচনের জন্য প্রস্তুত।
তিনি বলেছেন- ‘২০২৬ সালের প্রথমার্ধে জাতীয় নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে এবং এর মাধ্যমে অন্তর্বর্তী সরকার ক্ষমতা হস্তান্তর করবে।’ তার বক্তব্যে এক ধরনের দৃঢ়তা আছে। তবে প্রশ্ন থেকে যায় সংস্কারের প্রতিশ্রুতি কোথায়? বিরোধীরা স্পষ্টভাবে জানাচ্ছে সংস্কার ছাড়া এই নির্বাচনের কোনো মানে নেই। রাজনীতির এই বিতর্ক চলতে থাকলেও কক্সবাজারে আরেক বাস্তবতা প্রতিদিন নতুন করে সংকট তৈরি করছে।”
তিনি আরও বলেন, ‘প্রায় ১৩ লাখ রোহিঙ্গা এখন শরণার্থী হিসেবে আশ্রয় নিয়ে আছে।
এই রোহিঙ্গাদের জীবন সম্পূর্ণভাবে আন্তর্জাতিক সাহায্যের ওপর নির্ভরশীল। জাতিসংঘের তথ্য অনুযায়ী- ২০২৪ সালে বাংলাদেশে মোট ৬৭ কোটি ডলারের বেশি মানবিক সহায়তা এসেছে, যার ৮০ শতাংশ শুধুমাত্র রোহিঙ্গাদের জন্য এবং এর অর্ধেকের বেশি দিয়েছে যুক্তরাষ্ট্র। কিন্তু ২০২৫ সালে এসে সেই সহায়তা কমে দাঁড়িয়েছে অর্ধেকেরও নিচে। এ বছরের আগস্ট পর্যন্ত যুক্তরাষ্ট্র দিয়েছে মাত্র ৮ কোটি ৫৩ লাখ ডলার, যা গত বছরের তুলনায় ভয়ংকর রকম কম। সহায়তা কমার ফলে ইতিমধ্যেই তার ফলাফলটা চোখে পড়ছে। ইউনিসেফ সাড়ে তিন লাখ শিশুর শিক্ষা কার্যক্রম বন্ধ করে দিয়েছে। বিশ্ব খাদ্য কর্মসূচি ওয়ার্ল্ড ফুড প্রোগ্রাম রোহিঙ্গাদের রেশন মাথাপিছু ১২ ডলার থেকে নামিয়ে ছয় ডলার এনেছে।’
জিল্লুর রহমান বলেন, ‘এ প্রেক্ষাপটে বাংলাদেশের ভেতরে নির্বাচন নিয়ে সংস্কার বিতর্ক আরো গুরুত্বপূর্ণ হয়ে দাঁড়ায়। কারণ যদি নির্বাচন আবারও প্রহসনের রূপ নেয় তবে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় আরো মুখ ফিরিয়ে নেবে। দাতারা তখন ভাববে বাংলাদেশ নিজেই গণতান্ত্রিক আস্থার সংকটে ভুগছে। ফলে তাদের দেওয়া অর্থ অপচয় হবে। এভাবে রাজনৈতিক আস্থাহীনতা আর মানবিক সংকট একে অপরকে পুষ্ট করছে। তাই এখন প্রয়োজনীয় সংস্কার, বিশেষ করে নির্বাচনের জন্য প্রয়োজনীয় সংস্কার ছাড়া নির্বাচন মানে শুধু রাজনৈতিক ব্যর্থতা নয় আন্তর্জাতিক অঙ্গনে কূটনৈতিক ব্যর্থতা।’
কেএন/টিকে