আসন্ন নির্বাচনে জামায়াত ১০ সিটও পাবে না। সেই তুলনায় জাতীয় পার্টির সম্ভাবনা বেশি উজ্জ্বল। এ ছাড়া নির্বাচনে আওয়ামী লীগের একটা স্বতন্ত্র অংশও বড় ভূমিকা রাখবে বলে মনে করছেন সাবেক সচিব ও রাজনৈতিক বিশ্লেষক আবু আলম শহীদ খান। সম্প্রতি একটি টক শোতে হাজির হয়ে এসব কথা বলেন তিনি।
শহীদ খান বলেন, ‘আমি জানি না জনগণ কাকে ভোট দেবে। জামায়াতকে দিলে আমি এক্সেপ্ট করব না এ রকম অবস্থায় আমি নেই। জামায়াতকে যদি ভোট দেয়, জামায়াত যদি সরকার গঠন করতে পারে খুব ভালো কথা। কারণ অন্য সব দলকে তো আমরা দেখেছি, এ রকম অনেকে বলেন না? বাট আমার কাছে মনে হয় যে জামায়াতের সরকার গঠন তো দূরের কথা, ১০ সিট মানে ডাবল ডিজিট স্পর্শ করতে পারবে কি না এটা আমার সন্দেহ আছে।
বাট করতেও পারে। তাদের সংগঠন শক্ত আছে এবং তারা জনগণের কাছে সেভাবে যেতে পারলে করতে পারে। কিন্তু বিরোধী দল হওয়ার জন্য তো ৫০/৬০/৭০/৮০ আসন লাগবে। একটা বড় বিরোধী দল যদি হতে চান, ১০টা সিট দিয়েও বিরোধী দল হওয়া যায়, মানে একটা গোষ্ঠী হওয়া যাবে।’
জাতীয় পার্টির ভালো সম্ভাবনা আছে জানিয়ে শহীদ খান বলেন, ‘এখানে জাতীয় পার্টির একটা সম্ভাবনা আছে। তাদের যেহেতু একটা ভালো মার্কা আছে লাঙল মার্কা। তারা একসময় স্বৈরাচার ছিলেন। পরবর্তীকালে কিন্তু ’৯১-এর নির্বাচনে জেনারেল এরশাদকে জেলে রেখেছিলেন শাহাবুদ্দিন সাহেব, সেটার ব্যাপারে ওনাদের বক্তব্য আছে। কেননা ওই যে ফেয়ার ট্রিটমেন্ট ওনারা পাননি।
লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড তার জন্য ছিল না। তার মধ্যে কিন্তু ৩৯টা সিটে ওনারা জিতেছিলেন। মানে একটা এলাকায় বেশি আবার কিছু কিছু এলাকায় জিতেছিলেন।’
তারপর যদি আওয়ামী লীগের যারা আছেন, যারা এখন ইলেকশন করতে পারছেন না নাম দিয়ে, নৌকা মার্কা নাম দিয়ে, আওয়ামী লীগের লোকজন যারা ভালো বা ধরেন এই যে বিদ্রোহী আওয়ামী লীগার আছেন, যারা গত নির্বাচনে লোকাল গভর্নমেন্ট নির্বাচনে অংশগ্রহণ করেছিলেন। প্রায় ৪০ ভাগ লোকাল গভর্নমেন্ট নির্বাচনে উপজেলা পর্যায়ে আওয়ামী লীগ কিন্তু হেরেছিল। তাদের নৌকা মার্কা কিন্তু ডিফিটেড হয়েছিল। তো সে রকম অনেক প্রার্থী আছেন, যারা আওয়ামী লীগের কর্তৃত্ববাদ, দুর্নীতি-লুটপাট নানা অভিযোগের সঙ্গে ডিরেক্টলি জড়িত না।
সেই লোকগুলো অন্য পার্টিতে যেতে পারেন। এটা মাহমুদুর রহমানের পার্টিতেও যেতে পারেন, এনসিপিতেও যেতে পারেন। ইভেন এবি পার্টিতেও যেতে পারেন তো! এসব পার্টি ৩০০ সিটে যদি নির্বাচন করতে চায়, তারা আর লোক কোথায় পাবে? ওখান থেকে তো লোক সংগ্রহ করতে পারে। হঠাৎ করে নতুন করে লোক জন্ম দিতে পারবে না।’
নির্বাচন অনিবার্য জানিয়ে শহীদ খান আরো বলেন, ‘আমাদের একটা নির্বাচন হতেই হবে, যা অনিবার্য। নির্বাচনটা ডিসেম্বরে হলেও হতে হবে। এখন ফেব্রুয়ারি ঠিক আছে। যদি উনি দুই মাস আগেও নির্বাচন করতে চান করে ফেলতে হবে। নির্বাচন ছাড়াই যে সরকারটা চলছে, তাদের ব্যাপারে তো অনেক আলোচনা। তাদের সীমাবদ্ধতা, দুর্বলতা, তাদের কী কী কাজ করছেন, কিভাবে দেশটা চালাচ্ছেন- সব নিয়ে আলোচনা হচ্ছে। ওই নির্বাচন আর রাজনীতির প্রসঙ্গ বাদ দিয়ে যদি অন্য প্রসঙ্গে আসেন, আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি দেখেন, দ্রব্যমূল্য দেখেন, আমাদের বেকার লোকদের কর্মসংস্থান দেখেন! উল্টা ২৮ লাখ মানুষ বেকার হয়ে গেছে।
আপনি স্ট্যাটিস্টিক দেখেন, ২৮ শতাংশ মানুষ দারিদ্র্যসীমার নিচে চলে গেছে। সুতরাং খুব একটা চ্যালেঞ্জ যাচ্ছে অর্থনীতির মধ্যে। এগুলো আমরা ঠিকঠাক করতে পারছি না। সুতরাং আমাদের একটা নির্বাচন দরকার দ্রুত। যত দ্রুত সম্ভব নির্বাচন দরকার। ফেব্রুয়ারি বলছেন তো ফেব্রুয়ারির মধ্যে হলে ভালো। না হলে ডিসেম্বরে হলে আরো ভালো, অক্টোবরে হলে আরো ভালো। এটা আমার নাগরিক হিসেবে মতামত।’
কেএন/টিকে