সংগীত আমাদের দৈনন্দিন জীবনের প্রতিটি অংশের সঙ্গে সম্পর্কিত। আমাদের ধর্মীয় আচার পরিচালিত হয় সংগীতের দ্বারা, শিশুরা গানে গানে বর্ণমালা শিখে, এমনকি আমাদের দোকানপাট, শপিংমল ইত্যাদিও গান-বাজনায় কোলাহলপূর্ণ থাকে।
কিন্তু আমাদের দৈনন্দিন জীবনে গানের উপস্থিতি এবং এর প্রভাব ব্যক্তিগত আচরণ ও মনোভাবকে কীভাবে প্রভাবিত করে?
গবেষণা বলছে, সংগীত আমাদের জীবনকে বিভিন্নভাবে প্রভাবিত করতে পারে। অসুস্থতা, হতাশা, জীবনযাত্রার ব্যয়, কর্মক্ষমতা ও জগত সম্পর্কে আমাদের উপলব্ধিকেও সংগীত প্রভাবিত করে।
আবার কিছু কিছু গবেষণা বলছে, আমাদের আক্রমণাত্মক ও রক্ষণশীল মনোভাব গড়ে তুলতেও গানের ভূমিকা রয়েছে, যা আমাদেরকে অপরাধ করতে উৎসাহিত করে।
সম্প্রতি যুক্তরাজ্যের একটি গবেষণায় দেখা গেছে, ভীতি প্রদর্শনমুলক ছন্দ বিশিষ্ট র্যাপ গান বা ড্রিল মিউজিকয়ের সঙ্গে অপরাধ প্রবণতার সম্পর্ক রয়েছে। যেখানে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমগুলোর বিকাশের ফলে এই প্রবণতা আরও ব্যাপক হয়েছে।
যুক্তরাজ্যের ইউনিভার্সিটি কলেজ বার্মিংহামের অপরাধ বিজ্ঞানী ক্রেইগ পিংকনে বলেন, সাধারণত ড্রিল মিউজিকের বা র্যাপ গানের বিষয়বস্তু দলীয় বিদ্বেষমুলক হয়ে থাকে। এ কারণে অন্যান্য রীতির গানে না হলেও এ ধরনের গানের ক্ষেত্রে শিল্পী গানের কথায় কী বলছে শ্রোতারা তা বিচার করে।
সংগীতের পাশাপাশি সহিংসতা সৃষ্টিতে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমের ভূমিকা সম্পর্কেও এই গবেষণায় আলোকপাত করা হয়েছে। দেখা যায়, সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমের সাহায্যে বিভিন্ন দলীয় বিদ্বেষমুলক মন্তব্য ছড়িয়ে পড়ে। এটা তার সমর্থক ও বিরোধীদেরকে বিভিন্ন মন্তব্য করতে উৎসাহিত করে, যা মিশ্র প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি করে।
তবে কেবল সংগীতের কারণেই নয়, অপরাধ প্রবণতা বৃদ্ধির জন্য আরও অনেকগুলো কারণ রয়েছে বলে গবেষক ক্রেইগ পিংকনে মনে করেন।
তিনি বলেন, দরিদ্রতা, হতাশা, বর্ণবাদ, দুর্বল নেতৃত্ব, বাণিজ্যিক বিনিয়োগের অভাব, সম্পদ ও সুযোগের অপ্রতুলতা ইত্যাদি উপাদান অপরাধ প্রবণতার জন্য দায়ী।
কানাডার ম্যাকগ্রিল বিশ্ববিদ্যালয়ের মনোবিজ্ঞানী অধ্যাপক ড্যানিয়েল ল্যাভিটিন বলেন, সংগীত সহিংসতা সৃষ্টি করে কিনা তা বিশ্লেষণ করা অনেক কঠিন। কারণ বিভিন্ন গবেষণায় মিশ্র ফলাফল পাওয়া গেছে, যেখানে অধিকাংশ গবেষণায় সুনিয়ন্ত্রিত পরীক্ষণের পরিবর্তে পর্যবেক্ষণমুলক পদ্ধতি অনুসরণ করা হয়েছে।
তিনি ব্যাখ্যা করে বলেন, যারা আগে থেকেই বিভিন্ন সহিংসতার সঙ্গে জড়িত তারাও সংগীতের প্রতি আকৃষ্ট হতে পারে। এর মানে এই নয় যে, যারাই সংগীত শুনবে তারাই সহিংস হয়ে যাবে।
এদিকে ২০০৩ সালে জার্নাল অব পারসোনালিটি অ্যান্ড সাইকোলজিতে প্রকাশিত এক গবেষণায় দেখা গিয়েছিল যে, সংগীত আক্রমণাত্মক চিন্তা ও মনোভাব বৃদ্ধি করতে পারে। গবেষণামুলক পাঁচটি পরীক্ষায় দেখা যায়, যারা একই শিল্পীর অহিংস গান শুনেছিল তাদের থেকে যারা সহিংস গান শুনেছিল তারা বেশি শত্রুভাবাপন্ন।
তবে সহিংস রীতির গানের বিপরীতে অহিংস ধারার গানগুলো অপরাধ প্রবণতা হ্রাস করতে পারে বলে বিশেষজ্ঞরা মনে করেন।
টাইমস/এএইচ/জিএস