পৃথিবীর বৈচিত্র্যময় বন: অ্যামাজন জঙ্গল

পৃথিবীর সব থেকে বড় রেইনফরেস্ট অ্যামাজনের অবস্থান দক্ষিণ আমেরিকার অ্যামাজন নদী বিধৌত অঞ্চলে। বনাঞ্চলটি অ্যামাজন অরণ্য, অ্যামাজন বন, অ্যামাজন জঙ্গল বা অ্যামাজন রেইনফরেস্ট প্রভৃতি নামে পরিচিত। প্রকৃতির লীলাভূমি এই বিশাল বনটিকে পৃথিবীর ফুসফুস বলেও ডাকা হয়ে থাকে।

অ্যামাজন জঙ্গল এতটাই বিশাল যে, তা পৃথিবীর সমস্ত রেইনফরেস্টের মোট আয়তনের প্রায় অর্ধেক। দ. আমেরিকার নয়টি দেশজুড়ে বিস্তৃত এই বিশাল বনভূমির আয়তন প্রায় ৫৫ লাখ বর্গ কিলোমিটার। বনের প্রায় ৬০ শতাংশের অবস্থান ব্রাজিলে, ১৩ শতাংশ পেরুতে এবং কলম্বিয়া, ভেনিজুয়েলা, ইকুয়েডর, বলিভিয়া, গায়ানা, সুরিনাম ও ফরাসি গায়ানা জুড়ে রয়েছে এর বাকি অংশ।

প্রায় ৭০ লাখ বর্গকিলোমিটার অববাহিকা পরিবেষ্টিত এলাকাটি মূলত আর্দ্র জলবায়ু দ্বারা প্রভাবিত। অ্যামাজনের বনরাজির বৈচিত্র্য পৃথিবীর যে কোনো অঞ্চলের থেকে বেশি। ইউএসএ টুডের তথ্য অনুযায়ী এ বনে আম, কলা, পেয়ারা, সুপারি প্রভৃতিসহ প্রায় ৪০ হাজার প্রজাতির গাছগাছালি রয়েছে।

এছাড়াও অ্যামাজনে রয়েছে বহু ঔষধি গাছের সমাহার। জীব বৈচিত্র্যের আধার এই বনটিতে প্রায় ৩০ হাজার প্রজাতির মাছ, ১ হাজার ২৯৪ প্রজাতির পাখি, ৪২৭ প্রজাতির স্তন্যপায়ী, ৪২৮ প্রজাতির উভচর এবং ৩৭৪ প্রজাতির সরীসৃপের বসবাস।

জগতে যত পাখি আছে, তার পাঁচ ভাগের এক ভাগ বসবাস করে দক্ষিণ আমেরিকার এই বনে। যার মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলো ঈগল, টুকান, হোয়াটজিন, দ্রুতগামী হামিং বার্ড এবং রং-বেরঙের নাম না জানা আরও অনেক পাখি। বনের উল্লেখযোগ্য স্তন্যপায়ী প্রাণীগুলো হলো- জাগুয়ার, গোলাপি ডলফিন, তামানডুয়া, তাপির, মানাতি, ইঁদুর, কাঠবিড়ালি, বাদুড় ইত্যাদি।

স্বাদু পানির অন্যতম বড় মাছ পিরারুকুর বসবাস অ্যামাজনের নদীতে। এ মাছটির ওজন প্রায় ১৫০ কেজি পর্যন্ত হয়ে থাকে। এছাড়াও মাংসাশী লাল পিরানহা ও বিপজ্জনক বৈদ্যুতিক ঈল এখানে উল্লেখযোগ্য। তাছাড়া রয়েছে কুমির, অ্যালিগেটর, কচ্ছপ প্রভৃতি।

উভচর প্রাণীর মধ্যে লাল চোখ বিশিষ্ট গেছ ব্যাঙের নাম না বললেই নয়। সরীসৃপের মধ্যে আছে বিখ্যাত সাপ ‘বোয়া’ যে তার শিকারকে পেঁচিয়ে ধরে শ্বাসরোধ করে মেরে ফেলে। এছাড়াও রয়েছে ‘অ্যানাকোন্ডা’ যার কথা কমবেশি সবাই শুনেছেন।

অ্যামাজনের জঙ্গল দীর্ঘদিন ধরে নানা আদিবাসী জনগোষ্ঠীর আশ্রয়স্থল। পত্রিকাটির মতে, ১৫০০ খৃষ্টাব্দের দিকে শুধু ব্রাজিলিয়ান আমাজনেই ৬০-৯০ লাখ লোকের বসবাস ছিল। কিন্তু, পশ্চিমা উপনিবেশায়নের সময় এদের অনেককেই হত্যা করা হয়, ফলে ১৯০০ শতকের দিকে সেখানে জনসংখ্যা নেমে এসেছিল মাত্র ১০ লাখে।

২০১১ সালের এক সমীক্ষা অনুযায়ী, ব্রাজিলের অ্যামাজনে আদিবাসীর সংখ্যা কমে প্রায় ২.৫ লাখে দাঁড়িয়েছে, যারা ২১৫টি জাতিগোষ্ঠীতে বিভক্ত এবং তাদের মধ্যে প্রায় ১৭০ ধরনের ভাষার প্রচলন রয়েছে।

তবে, সমগ্র অ্যামাজন অঞ্চল জুড়ে প্রায় ৩৫০টিরও বেশি জাতিগোষ্ঠীর লোকেদের বসবাস। যাদের অনেকেই এখন শহরে বা শহর সংলগ্ন এলাকায় বসবাস করে, তবে জীবন নির্বাহের জন্য এরা এখনও অ্যামাজনের উপর নির্ভরশীল।

আশংকার কথা হলো, প্রতিদিন প্রায় একটি ফুটবল মাঠের সমান বনভূমি অ্যামাজনের জঙ্গল থেকে উজাড় হয়ে যাচ্ছে। বিজনেস ইনসাইডার জানাচ্ছে, শুধু ২০১৯ সালের জুলাই মাসে অ্যামাজন জঙ্গলের প্রায় ১,৩৪৫ কি.মি. বনভূমি ধ্বংস হয়ে গেছে। যা এক মাসে অ্যামাজনের সব থেকে বেশি বনভূমি উজাড় হয়ে যাওয়ার রেকর্ড। বনভূমি ধ্বংসের অন্যতম কারণ হলো অগ্নিকাণ্ড।

সম্প্রতি ঘটে যাওয়া অগ্নিকান্ডের ফলে ‘অ্যামাজন জঙ্গলের বনভূমি উজাড়’ বিশ্ব জুড়ে আলোচনায় উঠে আসে। ১৫ই আগস্ট থেকে ভয়াবহ আগুনে পুড়ছে অ্যামাজনের জঙ্গল। চলতি বছরে এখন পর্যন্ত ব্রাজিলে প্রায় ৮০ হাজার আগুনের ঘটনা শনাক্ত হয়েছে। এর অর্ধেকেরও বেশি আগুনের ঘটনা ঘটেছে বিশ্বের মোট অক্সিজেনের ২০ শতাংশেরও বেশির যোগানদাতা এই জঙ্গলটিতে।

পেনিসিলভেনিয়া স্টেট বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিবেশ বিজ্ঞানের অধ্যাপক জেমস এলকক বিবিসিকে দেয়া এক সাক্ষাৎকারে আশংকা প্রকাশ করে বলেছেন যে, অ্যামাজন জঙ্গল আগামী ৫০ বছরের মধ্যে বিলীন হয়ে যেতে পারে। অপরিকল্পিত বন নিধনই হবে এর কারণ।

তবে আশার কথা হলো, কলম্বিয়ায় অনুষ্ঠিত এক সম্মেলনে অ্যামাজন বনভূমির সুরক্ষায় একত্রে কাজ করতে চুক্তিবদ্ধ হয়েছে বলিভিয়া, ব্রাজিল, কলম্বিয়া, ইকুয়েডর, গায়েনা, পেরু ও সুরিনাম। আর বিশ্ব জুড়ে পরিবেশ সচেতন মানুষের দাবি, পুরোপুরি ধ্বংস হয়ে যাবার আগেই বনটি সংরক্ষণে যথাযথ ব্যবস্থা গ্রহণ করা হোক। তথ্যসূত্র: ইউএসএ টুডে, ব্রিটানিকা.কম, উইকিপিডিয়া.কম, বিবিসি.কম।

 

টাইমস/এনজে/জিএস

Share this news on:

সর্বশেষ

img
ভারত কখনোই কোনো দেশ দখল করেনি : আরএসএস প্রধান Sep 15, 2025
img
ট্রেড লাইসেন্স নবায়ন ও গ্রহণে কিউআর কোড বাধ্যতামূলক করা হবে: গভর্নর Sep 15, 2025
img
নারী ফিফা রেফারি হওয়ার দৌড়ে খো খো অধিনায়ক Sep 15, 2025
img

এমি অ্যাওয়ার্ডস ২০২৫

এমির মঞ্চে এবার বাজিমাত করলো যারা Sep 15, 2025
img
টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপে খেলবেন উইলিয়ামসন Sep 15, 2025
img
আওয়ামী লীগ ও অঙ্গসংগঠনের আরও ৪ নেতাকর্মী গ্রেপ্তার Sep 15, 2025
img
বাংলাদেশে আরও সহযোগিতা বাড়াতে চায় আইএমএফ Sep 15, 2025
img
ডুয়া লিপার গায়ে পাকিস্তানের জার্সি! Sep 15, 2025
img
বেসরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় জাতীয়করণের দাবিতে আন্দোলন Sep 15, 2025
img
আমোরিমের অধীনে ইউনাইটেড ‘আরো খারাপ হয়েছে’: রুনি Sep 15, 2025
img
দেশে অবৈধ অস্ত্র প্রবেশ ঠেকাতে জরুরি বার্তা বিজিবির Sep 15, 2025
img
জাতীয় পার্টি ও ১৪ দলের কার্যক্রম নিষিদ্ধের দাবি জামায়াতের Sep 15, 2025
img
পাকিস্তানের বিপক্ষে প্রথমবার ছক্কা হজম করলেন বুমরাহ Sep 15, 2025
img
সেবায় নৈতিকতা-মানবিক মূল্যবোধকে প্রাধান্য দেওয়ার আহ্বান বিএমইউ ভিসির Sep 15, 2025
img
গাজা সিটিতে জাতিসংঘের ১০টি ভবন ধ্বংস করেছে ইসরাইল Sep 15, 2025
img
রামেকে ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়ে প্রাণ গেল ১ জনের, ২৪ ঘণ্টায় হাসপাতালে ভর্তি ১৩ Sep 15, 2025
img
ফিফার কাছে রেফারিদের বিরুদ্ধে নালিশ করবে রিয়াল মাদ্রিদ Sep 15, 2025
img
সারা দেশে শুরু হলো একাদশ শ্রেণির ক্লাস Sep 15, 2025
img

জুলাই গণঅভ্যুত্থান

আহত ও শহীদ পরিবারের আত্মকর্মসংস্থান সৃষ্টিতে সহযোগিতা করা হবে: আসিফ মাহমুদ Sep 15, 2025
img
পুলিশে ফের বড় রদবদল Sep 15, 2025