কঠোরভাবে প্রয়োগ হচ্ছে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন : সম্পাদক পরিষদ

ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনকে সাংবাদিকদের ওপর নিপীড়ন ও নির্যাতনের হাতিয়ার হিসেবে ব্যবহার করা হচ্ছে বলে অভিমত দিয়েছে সম্পাদক পরিষদ। এর আগেও সংগঠনটি একই অভিমত দিয়েছিল। সংগঠনটি বলছে, আশঙ্কার চেয়েও কঠোরভাবে আইনটি প্রয়োগ করছে সরকার।

সংবাদপত্রের সম্পাদকদের প্রতিনিধিত্বকারী সংগঠনটি শনিবার (৫ মার্চ) এক বিবৃতিতে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে গ্রেপ্তার সকল সাংবাদিক, লেখক ও কার্টুনিস্টের মুক্তি ও ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের মামলা প্রত্যাহারের দাবি জানিয়েছে। সেই সঙ্গে সমালোচিত আইনটি পর্যালোচনা করার জন্য দ্রুত অধ্যাদেশ জারি ও তা কার্যকর করার আহ্বান জানিয়েছে সংগঠনটি।

ছবি- ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে আটকের পর কারাবন্দি অবস্থায় মৃত্যুবরণকারী লেখক মুশতাক আহমেদ

সম্পাদক পরিষদ বলেছে, আইনটি তৈরির সময়ই এর অপপ্রয়োগের যে আশঙ্কা করা হয়েছিল, কোনো কোনো ক্ষেত্রে সেই আশঙ্কার চেয়েও আইনটিকে কঠিনভাবে প্রয়োগ করা হচ্ছে। যার সাম্প্রতিক উদাহরণ মুক্তমনা লেখক মুশতাক আহমেদের জীবনাবসান।

বিবৃতিতে আরও বলা হয়েছে, ১০ মাস কারাবন্দী থাকার পর কার্টুনিস্ট আহমেদ কবির কিশোরকে জামিন দেওয়ায় আদালতকে ধন্যবাদ জানাচ্ছে সম্পাদক পরিষদ। তবে জামিন পেলেও তার সঙ্গে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী যে নির্দয় আচরণ করেছে তার তীব্র নিন্দা জানাচ্ছি।

এছাড়া সাংবাদিক শফিকুল ইসলাম কাজলের ‘নিখোঁজ’ হওয়া এবং দীর্ঘ কারাবাস সম্পর্কে উদ্বেগ জানিয়ে সম্পাদক পরিষদ বলেছে, ‘সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে একটি লেখা শেয়ার দেওয়ার কারণে সাংবাদিক কাজলকে দীর্ঘদিন নিখোঁজ থাকতে হয়েছে। তাকে মাসের মাস কারাগারে থাকতে হয়েছে। দীর্ঘদিন পর জামিন পেলেও তার বিরুদ্ধে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে মামলা চলমান রয়েছে। আর্থিক, শারীরিক ও মানসিকভাবে বিপর্যস্ত কাজলকে এখন মামলা মোকাবিলা করতে হচ্ছে।’

ছবি- ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের অপর এক মামলায় আটক সাংবাদিক শফিকুল ইসলাম কাজল

এদিকে যুক্তরাজ্যভিত্তিক মিডিয়া ওয়াজডগ বডি আর্টিকেল ১৯-এর তথ্য বলছে, ২০২০ সালে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের ১৯৮টি মামলায় ৪৫৭ জনকে বিচারের আওতায় এনেছে বাংলাদেশ সরকার। এসব মামলায় আসামিরা গ্রেপ্তারও হয়েছেন। এসব মামলায় ৪৫৭ জনের মধ্যে ৭৫ জনই পেশাদার সাংবাদিক। যাদের মধ্যে ৩২ জনকে বিচারের আওতায় আনা হয়েছে।

অপরদিকে সম্প্রতি ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন সংশোধনের ব্যাপারে আইনমন্ত্রীর বক্তব্যকে স্বাগত জানিয়েছে সম্পাদক পরিষদ। অনতিবিলম্বে অধ্যাদেশ জারি করে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে সংশোধন আনার দাবি জানিয়েছে সংগঠনটি।

পরিষদ আরও বলেছে, প্রথম দিকে যখন ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের খসড়া তৈরি, মন্ত্রিসভায় অনুমোদন, সংসদে বিল উত্থাপন ও রাষ্ট্রপতির সইয়ের আগে ও পরে সাংবাদিকদের বিভিন্ন সংগঠন, বিভিন্ন রাজনৈতিক দল, সম্পাদক পরিষদ এবং দেশীয় ও আন্তর্জাতিক বিভিন্ন সংগঠন ও সংস্থা আপত্তি তুলেছিল। সেসময় সরকারের পক্ষ থেকে কয়েকজন মন্ত্রী ও সংসদীয় কমিটির সদস্যরা সম্পাদক পরিষদের সঙ্গে বৈঠক করেছিল এবং আমাদের আপত্তিগুলো শুনেছিল।

ছবি- একই আইনে আটকের পর নির্মম নির্যাতনের শিকার কার্টুনিস্ট আহমেদ কবির কিশোর

কিন্তু শেষমেষ সকল পক্ষের দাবি উপেক্ষা করে সরকার নিজেদের মতো করে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন কার্যকর করেছিল। যা নিয়ে প্রথম থেকেই বিতর্ক সৃষ্টি করে। কারণ তখন সরকার কোনো পক্ষের পরামর্শ ও দাবি আমলে নেয়নি। সম্পাদক পরিষদ মনে করে, প্রথম দিকে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন নিয়ে আপত্তি ও সংক্ষুব্ধদের পরামর্শ গ্রহণ করলে দেশে এমন পরিস্থিতি তৈরি হতো না।

 

টাইমস/এসএন

Share this news on:

সর্বশেষ

img
জাহাজসহ জিম্মি নাবিকদের উদ্ধারে সরকার অনেক দূর এগিয়েছে : পররাষ্ট্রমন্ত্রী Mar 28, 2024
img
ঢাবির কলা ও সামাজিক বিজ্ঞান ইউনিটের ফল প্রকাশ, ৮৯.৯৩ শতাংশ ফেল Mar 28, 2024
img
একনেকে ৮ হাজার ৪২৫ কোটি টাকার ১১ প্রকল্প অনুমোদন Mar 28, 2024
img
রাজসিক সংবর্ধনায় দায়িত্ব নিলেন বিএসএমএমইউ'র নতুন উপাচার্য Mar 28, 2024
img
রোদে পোড়া ত্বকের যত্নে হলুদের ঘরোয়া প্যাক Mar 28, 2024
img
শহরের চেয়ে গ্রামে বিয়ে-তালাক বেশি Mar 28, 2024
img
ময়মনসিংহে বাস-অটোরিকশার সংঘর্ষে নিহত ২, আহত ৫ Mar 28, 2024
img
বাংলাদেশে মুক্ত গণতন্ত্র বাস্তবায়নে সমর্থন অব্যাহত থাকবে: ম্যাথিউ মিলার Mar 28, 2024
img
নিউইয়র্কে পুলিশের গুলিতে বাংলাদেশি তরুণ নিহত Mar 28, 2024
img
নিষেধাজ্ঞার ৩ দিনের মধ্যে ভারত থেকে পেঁয়াজ আমদানির প্রস্তাব অনুমোদিত Mar 27, 2024