৩ কোটি টাকার ধান বীজ আত্মস্বাত প্রচেষ্টার অভিযোগে ৪ কর্মকর্তা বরখাস্ত

তিন কোটি টাকা মূল্যের ধান বীজ মজুদের তথ্য গোপন করার দায়ে ঝিনাইদহের মহেশপুরের দত্তনগর কৃষি খামারের চার উপ-পরিচালককে চাকরি থেকে সাময়িকভাবে বরখাস্ত করা হয়েছে।বরখাস্তকৃত ওই চার কর্মকর্তা ধান বীজ গায়েব করার পরিকল্পনা করছিলেন বলে প্রাথমিকভাবে নিশ্চিত হতে পেরেছে কর্তৃপক্ষ।

বাংলাদেশ কৃষি উন্নয়ন কর্পোরেশন (বিএডিসি) সচিব আব্দুল লতিফ মোল্লা সাক্ষরিত এক পত্রে এ আদেশ দেয়া হয়েছে। বিএডিসির ওয়েবসাইট থেকে এ তথ্য জানা গেছে।

সাময়িক বরখাস্তকৃত ৪ উপ-পরিচালক হলেন দত্তনগর কৃষি খামারের গোকুলনগর ইউনিটের উপ-পরিচালক তপন কুমার সাহা, করিঞ্চা খামারের উপ-পরিচালক ইন্দ্রজিৎ চন্দ্র শীল ও পাথিলা কৃষি খামারের উপ-পরিচালক আক্তারুজ্জামান তালুকদার ও যশোর বীজ প্রক্রিয়াজাত কেন্দ্রের উপ-পরিচালক মো. আমিন উল্যা।

সাময়িক বরখাস্তের আদেশ পত্রে উল্লেখ করা হয়েছে, দায়িত্ব পালনে অবহেলা, অসদাচারণ, চুরি, আত্মসাৎ, তহবিল তছরুপ ও প্রতারণা করেছেন ওই কর্মকর্তারা।

বরখাস্ত করা ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে করা অভিযোগ তদন্তে প্রায় ৩ কোটি টাকা মূল্যের ১২৯ মেট্রিক টন ধান বীজ খামারে মজুদ করার তথ্য গোপন করে আত্মসাতের প্রমাণিত হয়েছে।

বরখাস্ত হওয়া কর্মকর্তাদের কাছে পাঠানো পৃথক পৃথক স্মারকের চিঠি সূত্রে জানা গেছে, বিধি বহির্ভূতভাবে ঝিনাইদহের মহেশপুর উপজেলার দত্তনগরের, গোকুল নগর, পাথিলা ও করিঞ্চা বীজ উৎপাদন খামারে ২০১৮-১৯ উৎপাদন বর্ষে অতিরিক্ত ১২৯.২২ মেট্রিক টন এসএল-৮এইচ হাইব্রিড জাতের ধান বীজ গুদামে মজুদ করা হয়। বিপুল অংকের টাকা হাতিয়ে নেয়ার জন্য এ মজুদের তথ্য গোপন রাখা হয়। এমনকি প্রক্রিয়াজাত বীজ গুদামে রাখার চালানের কোনো তথ্য প্রমাণও স্ব স্ব খামারের উপ-পরিচালকের দফতরে রাখা হয় না।

হঠাৎ করে এ বিষয়টি বিএডিসির ওপর মহলে জানাজানি হলে উচ্চ পর্যায়ে তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়। তদন্তে বেরিয়ে আসে দুর্নীতির সেই খবর।

তদন্ত কমিটির প্রধান মহা-ব্যবস্থাপক বীজ (বিএডিসি) নুরুননবী সর্দার সম্প্রতি এ সংক্রান্তে একটি প্রতিবেদন দাখিল করেন। ওই প্রতিবেদনে অবৈধভাবে ধান বীজ গুদামে মজুদ রাখার বিষয়টি ফুটে উঠে। সে অনুযায়ি সোমবার ৯ সেপ্টেম্বর বিএডিসি সচিব সাক্ষরিত পত্রে উল্লেখিত কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়।

সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানায়, যশোর বীজ প্রক্রিয়াজাত কেন্দ্রের উপ-পরিচালক মো. আমিন উল্যা দত্তনগর কৃষি খামারের গোকুলনগর, করিঞ্চ, পাথিলা ইউনিটের উপ-পরিচালকদের সঙ্গে যোগসাজসে নিজ দায়িত্বে থাকা গুদামে ১২৯.২২ মেট্রিক টন এসএল-৮এইচ হাইব্রিড জাতের ধান বীজ মজুদ রেখে দেন। যার বাজার দর প্রায় ৩ কোটি টাকা। সুযোগ বুঝে এ বীজ বাজারে বিক্রির করে দেয়ার পরিকল্পনা ছিল তাদের।

অভিযোগ করা হয়েছে, প্রতি বছর সরকারি অর্থে উৎপাদিত বিপুল পরিমাণ অতিরিক্ত ধান বীজ অভিনব কৌশলে খামার থেকে বিক্রি করে দেয়া হয়। একটি সংঘবদ্ধ চক্র এ কাজের সঙ্গে প্রত্যক্ষভাবে জড়িত। নিরাপদে নিরবে বছরের পর বছর ধরে চলে আসছে এ ধরনের দুর্নীতির ঘটনা।

প্রসঙ্গত, ঝিনাইদহ জেলা শহর থেকে অন্তত ৭০ কিলোমিটার পশ্চিমে ভারত সীমান্তের কাছে অবস্থিত এশিয়ার সব চেয়ে বড় সবুজে ঘেরা দত্তনগর কৃষি খামার।খামার এলাকাটি বিশাল হওয়ায় সেখানে প্রশাসনের নজরদারি খুব বেশি শক্তিশালী নয়।

 

টাইমস/এমএস 

Share this news on: