২২ বছর বয়সী সাবেক ক্রিকেটার প্রান্তিক নওরোজ নাবিল সাবেক ওপেনার তামিম ইকবালকে নিয়ে বলেছেন যে তামিম বাংলাদেশের ব্যাটিংয়ের পথপ্রদর্শক। নাবিলের বক্তব্য অনুযায়ী, তামিম ইকবাল শুধু একজন জনপ্রিয় ক্রিকেটারই নন, বরং একজন অনুপ্রেরণাদায়ক ব্যক্তিত্ব, যিনি পুরো একটি প্রজন্মকে ব্যাট হাতে সাহসী হতে শিখিয়েছেন।
নাবিল জোর দিয়ে বলেছেন যে ব্যক্তিগত পছন্দ-অপছন্দের ঊর্ধ্বে উঠে তামিমের অবদানকে মূল্যায়ন করা উচিত। তিনি মনে করেন, বাংলাদেশের এমন কোনো তরুণ ব্যাটসম্যান নেই যে তামিমকে দেখে উৎসাহিত হননি। আধুনিক ক্রিকেটে এখনকার ব্যাটসম্যানরা বড় বড় ছক্কা মারলেও, তামিমই প্রথম শিখিয়েছেন কীভাবে আন্তর্জাতিক পর্যায়ে ব্যাটিং করতে হয়। তার মতে, এই শিক্ষাটা চিরন্তন এবং কখনোই বদলে যাবে না।
গণমাধ্যমের সাথে আলাপচারিতাকালে নাবিল বলেন, "যে সময়ে আমরা বড় হয়েছি, তখন বাংলাদেশের কোন ব্যাটসম্যান তামিমকে দেখে উৎসাহিত হননি? ব্যক্তিগতভাবে আপনি তাকে পছন্দ করেন নাকি করেন না সেটা আলাদা ব্যাপার। তিনি আলাদা ছিলেন অন্যদের থেকে। এখন হয়ত ব্যাটসম্যানরা অনেক বড় বড় ছয় মারবে, অনেক কিছু করবে আধুনিক ক্রিকেটে। কিন্তু তামিম ইকবাল শিখিয়েছে বাংলাদেশকে কীভাবে ব্যাটিং করতে হয়, এটা কখনোই পরিবর্তন হবে না।"
২০০৭ বিশ্বকাপে ভারতের শক্তিশালী বোলিং আক্রমণের বিরুদ্ধে তামিমের সেই ঐতিহাসিক ইনিংসের কথা বিশেষভাবে উল্লেখ করেছেন নাবিল। ওই ম্যাচে জহির খানের একটি বাউন্সার তামিমের গলায় আঘাত করেছিল, কিন্তু সেই আঘাত তাকে দমাতে পারেনি। বরং, সেখান থেকেই তিনি ঘুরে দাঁড়ান এবং পরের বলেই ডাউন দ্য উইকেটে এসে একটি বিশাল ছক্কা হাঁকান। নাবিলের কাছে এই ঘটনাটি শুধু একটি ছক্কা মারার বিষয় ছিল না, বরং সাহসিকতার এক অনন্য দৃষ্টান্ত।
নাবিল আরও বলেন, "ভারতের সেরা বোলিং আক্রমণের সামনে একজন ১৭-১৮ বছর বয়সী ব্যাটসম্যান... আমরা শুধু ওই ছক্কাগুলোর কথা বলি। কিন্তু একজন খেলোয়াড় হিসেবে আমি যেই জিনিসগুলো দেখতাম বা যেই জিনিসগুলো আমাকে উৎসাহিত করত, জহির খানকে ওই ছয় মারার আগে জহির খানের একটা বাউন্সার তামিম ভাইয়ের গলায় লেগেছিল। সেখান থেকেই উনি ঘুরে দাঁড়ান।"
নাবিল ব্যাখ্যা করেছেন যে ২০০৭ সালের প্রেক্ষাপটে, যখন বাংলাদেশ তুলনামূলকভাবে দুর্বল দল ছিল এবং প্রতিপক্ষের বোলাররা অনেক জোরে বোলিং করত, তখন একজন তরুণ ক্রিকেটারের মনে নার্ভাসনেস আসা খুবই স্বাভাবিক। এমন পরিস্থিতিতে অভিজ্ঞতা ছাড়াই সামনে এগিয়ে এসে ছক্কা মারা ছিল এক অসাধারণ সাহসের পরিচয়।
নাবিল মনে করেন, তামিমের এই সাহসী মানসিকতাই বাংলাদেশকে শিখিয়েছে কীভাবে নির্ভয়ে বড় দলের সামনে ব্যাট করতে হয়। তার সেই ইনিংস নাবিলসহ পুরো দেশের অসংখ্য তরুণ ক্রিকেটারকে অনুপ্রাণিত করেছে।
তিনি আরও বলেন, "এটা শুধু ছয় হাঁকানোর ব্যাপার না। ওরকম একটা বোলিং আক্রমণের সামনে আপনি যখন আন্ডারডগ দল হিসেবে খেলতে যাবেন তাও ২০০৭ সালে, একজন খেলোয়াড় হিসেবে তখন অনেক সময় আপনার মাথার ভেতরে এরকম নার্ভাসনেস আসতে পারে যে ওরা তো অনেক জোরে বোলিং করে, কী করব আমি। কারণ আপনার তো অভিজ্ঞতাই নেই। ওই মুহূর্তে ডাউন দ্য উইকেটে এসে ছয় মারা...উনি তখন সে সাহসটা দেখিয়েছেন তা মূলত উনি বাংলাদেশকে শিখিয়েছেন কীভাবে ব্যাটিং করতে হয়। আমাকে তো অবশ্যই উৎসাহী করেছে, সবাইকেই করেছে।"