আবরার হত্যা প্রসঙ্গে যা বললেন ব্যারিস্টার সুমন

বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বুয়েট) ছাত্র আবরার ফাহাদ হত্যাকাণ্ড প্রসঙ্গে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের প্রসিকিউটর ব্যারিস্টার সৈয়দ সায়েদুল হক সুমনের সঙ্গে কথা হয়েছে বাংলাদেশ টাইমস প্রতিবেদকদের।

বৃহস্পতিবার রাজধানীর পলাশীতে নেয়া সেই সাক্ষাৎকার পাঠকদের জন্য হুবহু তুলে ধরা হলো-

বাংলাদেশ টাইমস: সম্প্রতি বাংলাদেশ ও ভারতের মধ্যে যে চুক্তি হলো, সেটা নিয়ে আবরার হত্যার ঘটনা ঘটল। এ বিষয়ে আপনার বক্তব্য কি?

ব্যারিস্টার সৈয়দ সায়েদুল হক সুমন: আমি আশ্চর্য হলাম যে, বিবিসি বাংলায় বাংলাদেশ-ভারতে যে চুক্তি নিয়ে কথা বলল, পরবর্তীতে দেখা গেল এই চুক্তির ব্যাপারেই তারা সংশোধনী দিয়েছেন যে আমরা যা বলেছি তা ঠিক বলি নাই। এখানে অনেক সংশোধনী আছে। একটা চুক্তির ব্যাপারে না জেনেই কেউ যদি মন্তব্য করেন। এটার প্রকৃত তথ্য না দিয়েই বিবিসির মতো একটি সংবাদ মাধ্যম যখন সংশোধনী দিয়েছে, ঠিক তার আগেই আবরার এই বিষয়ে স্ট্যাটাস দেয়।

আবরার কিন্তু দেখে যেতে পারে নাই, সংশোধনীতে কি আসছে? একটা জিনিস আমি পুরোপুরি না জেনে যেমন ধরেন যে জিনিস আমি বুঝি না। বাংলাদেশে কিছু লোক আছে, সরকারি দল যখন বাজেট দেয়, তখন বাজেট না দেখেই ওরা বলে যে গণবিরোধী বাজেট। আর সরকারের দলও না পড়ে, মিছিল দিয়ে দেয় যে এটা গণমুখী বাজেট। আমরা ঠিক এ রকমই পড়েছি, যে ধরেন বাজেট বা চুক্তি বাদই দেন- একটা ছেলে যদি কোনো মতের সঙ্গে একমত না হয় তাই বলে কি আপনি তাকে পিটিয়ে মেরে ফেলবেন?

বাংলাদেশ টাইমস: যে আন্দোলন চলছে তার সাথে কি আপনি একমত?

ব্যারিস্টার সুমন: আজকে যেসব সংস্থাগুলো আছেন। তাদের কাজ তো এটাই। যে একটা অপরাধ হওয়ার সাথে সাথে এটা উনারা নিয়ন্ত্রণ করবেন। শাস্তির মুখোমুখি করবেন। ন্যায় বিচারের মুখোমুখি করবেন। আমি মনে করি আন্দোলনে উনারা যে দাবি করেছেন তা লজিক্যাল। তারা চেয়েছেন যে ভিসি স্যার আসবেন। তারা কথা বলবেন, আমি জানি না এই দাবিগুলো তারা বাড়াবেন কি না। উনারা বাড়ালে বিষয়টি আরো ডিফিক্যাল্ট হয়ে যেতে পারে।

আর আমার মনে হয় যারা এই আন্দোলন করছেন তারা কনক্রিট দাবির মধ্যে থাকবেন। আর তারা কি চান তা প্রশাসনের সাথে বসে আমার মনে হয় সেটেল করবেন এটাই তো কাজ। আর একদিনের মধ্যে আপনি তো বুয়েট দিয়ে সারা বাংলাদেশ চেঞ্জ করে ফেলতে পারবেন না। বুয়েটে যারা আবরারকে হত্যা করেছে এরা তো তারই সহপাঠী। আশ্চর্যের বিষয় হচ্ছে বুয়েটে তো আমি চান্সই পাইনি। আমার পরীক্ষা দেয়ার ক্যাপাসিটি ছিল না আমার মতো ব্যারিস্টারের।

এখানে পড়ে কারা? সবই তো ভালো ভালো শিক্ষার্থীরা। এরা যদি এত অমানবিক হয়। আমি তো মনে করি এই ছেলেগুলো যদি ইঞ্জিনিয়ার হয় তবে তো এরা দেশ নষ্ট কেরে ফেলত। আপনি দেখেন যে আমাদের বালিশের মামলায় কয়েকজন ইঞ্জিনিয়ারকে চাকরিচ্যুত করা হয়েছে। আমি তো মনে করি এদেরই প্রেতাত্মা এরা। তারা ইঞ্জিনিয়ার হওয়ার পরে দেশে লুটপাট চালাতো। দেখেন আপনি এর মানে কি? দেশে ইঞ্জিনিয়ার পাচ্ছি, ডাক্তার পাচ্ছি, ব্যারিস্টার পাচ্ছি, কিন্তু মানুষ পাচ্ছি না। নৈতিক মানুষ আমরা পাচ্ছি না। এদেরকে সাজা দিবেন সবই ঠিক আছে। কিন্তু নৈতিক মানুষগুলো যাবে কোথায়?

যাদেরকে দিয়ে আপনি বাংলাদেশ বাঁচাবেন। আপনি ডাক্তারদের কাছে যাবেন সেখানেও আকাম ওকাম হয়েছে। আপনি ইঞ্জিনিয়ারদের কাছে যান আমি ব্যারিস্টার, আমিও তো বাইরে নেই। সিস্টেমটা চেঞ্জ করা আসলে জরুরি। এটা ওপর থেকে আসতে হবে আসলে নৈতিক মানুষ দরকার। নৈতিক নেতা দরকার। তাতে দেখবেন কি, আস্তে আস্তে সব জায়গায় আপনি চেঞ্জ আনতে পারবেন। আমি ব্যারিস্টার সুমন এসে এখানে লাইভ করলাম ধরেন। লাইভ করে হয়তো বা বিচার তো যা হবার তা হচ্ছেই। এর মানে কি সব নির্যাতন বন্ধ হয়ে যাবে। আমি মনে করি বাংলাদেশের বিভিন্ন জায়গায় যেখানে ছাত্র-ছাত্রীর হল রয়েছে যাতে কিভাবে নির্যাতন বন্ধ করা যায়, যেভাবে নৈতিক নেতা তৈরি করা যায়। ছাত্র রাজনীতি বন্ধ করে দিলেই তো ভালো হয়।

বাংলাদেশ টাইমস: ছাত্ররাজনীতি বন্ধ করার বিষয়ে আপনার মতামত কি?

ব্যারিস্টার সুমন: ছাত্ররাজনীতি বন্ধ করলে তো আপনি ভালো মানের নেতা পাবেন না পরে। ছাত্র সংসদ থাকবে। ছাত্র রাজনীতি হবে আদর্শের ভিত্তিতে। লেজুড়বৃত্তির ভিত্তিতে তো না। আপনি যে আদর্শ ধারণ করেন। আমি তো যে আদর্শ ধারণ করি, তা তো কোনো আদর্শই মারার কথা বলে না। এভাবে আপনি কি কাউকে পিটিয়ে মারবেন? যেকোনো আদর্শই বলেন, খারাপ আদর্শকেই বলেন, সেখানেও তো আমি শুনি নাই যে আমার মতের সাথে মিল নাই হতে পারে। তাই বলে কি আপনি মানুষ পিটিয়ে মারবেন। আরএসএসকে তো আমরা ওই জন্যই দেখতে পারি না। আমার কথা হচ্ছে যে নৈতিক মানুষ দরকার। মানবিক মানুষ দরকার। নিরাপদ মানুষ দরকার।

 বাংলাদেশ টাইমস: আপনাকে ধন্যবাদ।

 ব্যারিস্টার সুমন: ধন্যবাদ।

 

টাইমস/এসআই

Share this news on:

সর্বশেষ

img
বল হাতে চমক, শামীম পাটোয়ারীর প্রশংসায় মিরাজ Jul 06, 2025
img
রাজনীতিতে ইলন মাস্কের আত্মপ্রকাশ, দলের নাম ‘আমেরিকা পার্টি’ Jul 06, 2025
img
লঙ্কানদের হারিয়ে র‌্যাঙ্কিংয়ে এক ধাপ এগিয়েছে বাংলাদেশ Jul 06, 2025
img
মেসির জোড়া গোলে এমএলএস-এ বড় জয় মায়ামির Jul 06, 2025
img
টেক্সাসে বন্যায় মৃতের সংখ্যা বেড়ে ৫০, উদ্ধার ৮৫০ Jul 06, 2025
img
‘কৃষ ৪’-এ ৩টি চরিত্রে দেখা যাবে হৃতিককে! Jul 06, 2025
img
যুদ্ধের পর প্রথমবারের মতো প্রকাশ্যে খামেনি Jul 06, 2025
img
জেনে নিন দেশের বাজারে আজকের স্বর্ণ ও রুপার দাম Jul 06, 2025
img
তামিল সিনেমায় জমে উঠেছে থ্রিলারের রাজত্ব Jul 06, 2025
img
আগস্টে নেটফ্লিক্সে আসছে ভিন্ন ঘরানার কনটেন্ট Jul 06, 2025
img
আশুরা উপলক্ষে রাজধানীতে সকাল ১০টায় তাজিয়া মিছিল Jul 06, 2025
img
মাদারীপুরে ৪ মাদক কারবারি গ্রেফতার Jul 06, 2025
img
ঢাকার বাতাস আজ সহনীয় Jul 06, 2025
img
সিভাসুর ১৯ জনকে হল থেকে বহিষ্কার, ২ শিক্ষার্থীর ছাত্রত্ব বাতিল Jul 06, 2025
img
টেক্সাসে বন্যায় মৃতের সংখ্যা বেড়ে ৪৩, জীবিতদের সন্ধানে উদ্ধারকারীরা Jul 06, 2025
img
দুপুরের মধ্যে ৭ অঞ্চলে ঝড়ের পূর্বাভাস Jul 06, 2025
img
চার সমুদ্রবন্দরে ৩ নম্বর সতর্ক সংকেত Jul 06, 2025
img
পারমাণবিক সহযোগিতা স্থগিতের পর ইরান ছাড়লেন আইএইএ পরিদর্শকরা Jul 06, 2025
img
আজ মেঘাচ্ছন্ন থাকবে ঢাকার আকাশ, হতে পারে বৃষ্টি Jul 06, 2025
img
শহীদ আব্দুল্লাহর অসুস্থ ভাইয়ের খোঁজ নিলেন তারেক রহমান Jul 06, 2025