তামিল সিনেমায় নীরব এক বিপ্লব ঘটছে- এবার মুখরতা নয়, বরং গল্প বলছে সবকিছু। একের পর এক বড় তারকাসমৃদ্ধ ছবি মুখ থুবড়ে পড়ছে বক্স অফিসে, আর সেই সময়েই দর্শকের হৃদয় দখল করে নিচ্ছে কম বাজেটের কনটেন্ট- চালিত থ্রিলার। চোখ ধাঁধানো প্রচার, নামী মুখ বা আকাশছোঁয়া বাজেটও আর দর্শক টানতে পারছে না, যদি না গল্পে থাকে টানটান উত্তেজনা ও বাস্তবতার ছোঁয়া।
এই চলমান রূপান্তরের অন্যতম উদাহরণ ‘মারগন’ এবং ‘ইলেভেন’। প্রচারের আলো না পেলেও বিজয় অ্যান্টনির ‘মারগন’ অদ্ভুত এক নীরবতায় দর্শক টেনে নিয়েছে হলে। ছোট দৈর্ঘ্য, গল্পের গতি আর বাস্তবঘন আবহ- সব মিলিয়ে দর্শকরা সিনেমাটি নিয়ে মুখর প্রশংসায়। শুধু তামিল নয়, তেলুগু ভাষাতেও ভালো ব্যবসা করেছে ছবিটি।
অন্যদিকে, নাভিন চন্দ্র অভিনীত ‘ইলেভেন’ থিয়েটারে তেমন সাড়া ফেলতে না পারলেও, ওটিটিতে মুক্তির পরই সিনেমাটি নিয়ে আলোচনা শুরু হয়। সমালোচকরা বলছেন, ‘ইলেভেন’ বক্স অফিসে ব্যর্থ হয়নি, ব্যর্থ ছিল তার মার্কেটিং। একবার যারা ছবিটি দেখেছেন, তারা সহজেই মুগ্ধ হয়েছেন গল্প ও নির্মাণভঙ্গিমায়।
এই দুই সিনেমার পাশাপাশি আরও কিছু কনটেন্টভিত্তিক থ্রিলার ধীরে ধীরে জায়গা করে নিচ্ছে দর্শকের মনে। এরই মধ্যে ‘ডিএনএ’, ‘টেন আওয়ার্স’-এর মতো ছবি স্লিপার হিট হিসেবে চমকে দিয়েছে ট্রেড অ্যানালিস্টদের। খবর রয়েছে, বর্তমানে তামিল ইন্ডাস্ট্রিতে অন্তত ২০টিরও বেশি থ্রিলার নির্মিত হচ্ছে, যা ভবিষ্যতের দর্শকধারণায় স্পষ্ট ইঙ্গিত।
উল্টো চিত্র বড় বাজেটের ছবিগুলোর ক্ষেত্রে। ‘রেট্রো’, ‘ঠাগ লাইফ’, ‘বিদামুয়ারচি’র মতো সিনেমা বড় নাম নিয়েও বক্স অফিসে মুখ থুবড়ে পড়েছে। এ থেকে স্পষ্ট যে তারকার মুখই আর দর্শকের হলমুখী হওয়ার একমাত্র কারণ নয়।
এই পরিবর্তনের পেছনে বড় ভূমিকা রাখছে ওটিটি যুগ। দর্শক এখন আর শুধু ভিজ্যুয়াল স্পেকট্যাকলে সন্তুষ্ট নয়, বরং খোঁজে বাস্তবঘন ও গল্পনির্ভর ছবি- যেখানে রোমাঞ্চ, রহস্য আর আবেগ একসঙ্গে ধরা দেয়। বাস্তব ঘটনা অবলম্বনে নির্মিত থ্রিলারগুলো দর্শকের মনে তৈরি করছে গভীর অভিজ্ঞতা, যা সিনেমা শেষ হওয়ার পরেও দীর্ঘক্ষণ থেকে যায়।
তাই তামিল সিনেমার ভবিষ্যৎ এখন কনটেন্টের হাতে। বড় বাজেট নয়, বড় গল্পই এখন রাজা- আর সেই রাজত্ব দখল করছে থ্রিলার, নিঃশব্দেই।
কেএন/টিকে