বুয়েটের সেই অমিত সাহার বাবা-মা ভারতে, বাসা তালাবদ্ধ!

বাংলাদেশ প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের (বুয়েট) ছাত্র সমালোচিত ছাত্রলীগ নেতা অমিত সাহার বাবা-মা ভারতে চলে গেছেন। নেত্রকোনায় তাদের বাসা এখন তালাবদ্ধ রয়েছে।

বুয়েট ছাত্র আবরার হত্যার ঘটনায় মঙ্গলবার সকালে অমিত সাহাকে আটক করেছে গোয়েন্দা পুলিশের সদস্যরা। যদিও এজহারে তার নাম নেই। অথচ অমিতের কক্ষে আবরারকে পিটিয়ে হত্যা করা হয়।

এজহারে নাম না থাকায় আবরারের বাবাও ক্ষোভ প্রকাশ করেন। এছাড়া বুয়েটেও অমিতের সহপাঠীরা তার বিরুদ্ধে নির্যাতনের নানা তথ্য তুলে ধরেন। সেই রাতে অমিত সাহা আবরারকে নির্যাতন করেছিল বলেও অভিযোগ আনা হয়। আবরার যে হলে আছেন সেটা অমিতই অন্যদের জানান এবং খুনিদের ডেকে আনেন। পরে তার কক্ষেই আবরারকে মারধর করা হয়। এ সময় অমিত ওই কক্ষে আবরারকে বেধড়ক পিটিয়েছেন বলেও অভিযোগ উঠে। অমিত আটকের পর পুলিশ এ বিষয়ে প্রাথমিক সত্যতাও পেয়েছে।

জানা গেছে, শৈশব থেকেই মেধাবী ছাত্র ছিলেন অমিত। পঞ্চম ও অষ্টম শ্রেণিতে বৃত্তি পেয়েছেন। তবে বুয়েটে এসে পাল্টে যান অমিত। রাজনীতিতে যোগ দিয়ে চলে যান বিপথে। জুনিয়রদের ডেকে নিয়ে নির্যাতনসহ নানা অভিযোগ রয়েছে তার বিরুদ্ধে। তার আটকের পর, এক এক করে বিভিন্ন তথ্য বেরিয়ে আসতে শুরু করেছে। সামাজিক যোগাযোগের মাধ্যমে অমিত সাহার নামে নানা তথ্য তুলে ধরছেন বুয়েট শিক্ষার্থীরা।

জানা গেছে, অমিতের বাবা একজন ধানের আড়ৎদার। দীর্ঘদিন ধরেই তিনি ব্যবসা করেন। বর্তামানে থাকেন নেত্রকোনা শহরের আখড়া মোড় এলাকায় নিজস্ব বাসায়। অমিত জেলা শহরের আঞ্জুমান আদর্শ সরকারি উচ্চ বিদ্যালয় থেকে এসএসসি ও নেত্রকোনা সরকারি কলেজ থেকে এইচএসসি পাশ করেছেন। তাদের গ্রামের বাড়ি নেত্রকোনা সদরের ঠাকুরাকোনা বাজারের স্বাস্থ্য ক্লিনিকের পাশে।

অমিতের মা দেবী রাণী সাহা ও বাবা রঞ্জিত সাহা গত ১৯ সেপ্টেম্বর ভারতের তীর্থে যান। এখনো তারা সেখানেই অবস্থান করছেন। ছোট বোন ঐশ্বরিয়া সাহাও মেধাবী। এদিকে অমিত গ্রেপ্তারের পর বুয়েট শিক্ষার্থীদের কাছ থেকে উঠে আসছে নানা চাঞ্চল্যকর তথ্য। শিক্ষার্থীদের অভিযোগ অমিত সাহা বুয়েটের জুনিয়রদের ওপর বেশি আগ্রাসী ছিলেন। তার মারধরের শিকার হয়েছেন বেশ কয়েকজন। এ কারণে অমিত সাহাকে আতঙ্ক হিসেবেই জানত জুনিয়র ব্যাচের শিক্ষার্থীরা। অমিত বুয়েটের সিভিল ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের ১৬তম ব্যাচের ছাত্র।

মেধাবী শিক্ষার্থী হিসেবে বুয়েটে ভর্তি হলেও পরে তিনি জড়িয়ে পড়েন রাজনীতিতে। বিশ্ববিদ্যালয় কমিটিতে পদ পেতে নিজেকে আগ্রাসী হিসেবে পরিচিত করেন ক্যাম্পাসে। ফলও পান দ্রুত। স্বল্প সময়ে বনে যান বুয়েট শাখা ছাত্রলীগের উপ-আইন বিষয়ক সম্পাদক।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক ১৭ ব্যাচের শিক্ষার্থীরা জানান, তাদের ব্যাচের অধিকাংশ শিক্ষার্থী সিনিয়রদের মধ্যে একজনকে পেছন থেকে সবচেয়ে বেশি গালমন্দ করতেন। তিনি হচ্ছেন অমিত সাহা। তাকে সব সময় আগ্রাসী ও মারমুখী দেখা যেত। তাকে কেউ দেখতে না পারলেও সামনাসামনি কেউ কিছু বলার সাহস পাননি। আবরার হত্যাকাণ্ডের সঙ্গে অমিতের সংশ্লিষ্টতা নিয়ে প্রশ্ন ওঠার পর সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে অমিত সাহার নির্যাতনের বিভিন্ন ঘটনা প্রকাশ পায়। ঘটনার দিন সন্ধ্যায় অমিত সাহা আবরারের এক বন্ধুকে ইংরেজি অক্ষরে 'আবরার ফাহাদ হলে আছে কিনা' মেসেজ দেন। মেসেজের এক ঘণ্টার মধ্যেই শেরেবাংলা হলের ছাত্রলীগ নেতারা আবরারকে ১০১১ নম্বর কক্ষ থেকে ডেকে নিয়ে যায়। ২০১১ নম্বর কক্ষে এনে তাকে লাঠি, স্টাম্প ইত্যাদি দিয়ে পেটায়। সূত্র বলছে, ৬ অক্টোবর রাতে অমিত সাহার রুমে প্রথম দফায় মারধরের নেতৃত্ব দেন ছাত্রলীগ বুয়েট শাখার সাধারণ সম্পাদক মেহেদী হাসান রাসেল। তার সঙ্গে মারধর শুরু করেন বুয়েট ছাত্রলীগের বহিষ্কৃত সাংগঠনিক সম্পাদক মেহেদী হাসান রবিন ও উপ-সমাজসেবা সম্পাদক ইফতি মোশাররফ সকাল।

মঙ্গলবার বুয়েট ক্যাম্পাসের সামনে ১৫তম ব্যাচের শিক্ষার্থী হেলালউদ্দিন বলেন, ২০১১ নম্বর কক্ষটি অমিত সাহার। ঘটনার সময় তার নেতৃত্বে ছাত্রলীগের কর্মীরা আবরারকে বেদম মারধর করেন। পরে তিনিসহ অন্যরা বেরিয়ে যান।

 

টাইমস/এনকে/টিএইচ

Share this news on:

সর্বশেষ

img
সিরিয়ার ওপর থেকে যাবতীয় নিষেধাজ্ঞা তুলে নিলেন প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প Jul 01, 2025
img
হোয়াটসঅ্যাপে যুক্ত হলো ডকুমেন্ট স্ক্যানের নতুন ফিচার! Jul 01, 2025
img
ছাত্রদল নেতার হাতে প্রাণ গেল কৃষকের Jul 01, 2025
img
আমিরের দিকেও হাত বাড়িয়েছিল মাফিয়া চক্র! Jul 01, 2025
img
১৯ বছর পর আবারও অ্যাওয়ার্ড নাইট চালু করার ঘোষণা দিল বিসিবি Jul 01, 2025
img
ইন্টার মিলানকে হারিয়ে শেষ আটে ব্রাজিলের ক্লাব ফ্লুমিনেন্স Jul 01, 2025
img
জামায়াত ক্ষমতায় এলে হিন্দুরা সবচেয়ে বেশি সুবিধা পাবে : রফিকুল ইসলাম Jul 01, 2025
img
গুলশানের হলি আর্টিজান হামলার ৯ বছর আজ Jul 01, 2025
img
বিশ্বে বায়ুদূষণে শীর্ষ শহর বাগদাদ, ঢাকার অবস্থান ১৪তম Jul 01, 2025
img
আজ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় দিবস Jul 01, 2025
img
গাজায় ইসরায়েলি বাহিনীর বিমান হামলায় প্রাণ গেল ৯৫ জনের Jul 01, 2025
img
দেশের বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ বেড়ে ৩১.৬৮ বিলিয়ন মার্কিন ডলার Jul 01, 2025
img
এনবিআর আন্দোলন: উপদেষ্টা পরিষদের সিদ্ধান্তের সঙ্গে প্রজ্ঞাপনের মিল নেই Jul 01, 2025
img
দেশের ৮ জেলায় ৬০ কি.মি. বেগে ঝড়ের পূর্বাভাস Jul 01, 2025
img
মুন্সীগঞ্জে সড়ক দুর্ঘটনায় প্রাণ গেল ১ জনের Jul 01, 2025
img
বাংলাদেশের মানুষ এখনো ভোটের অধিকার ফেরত পায়নি : অমিত Jul 01, 2025
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় নিয়ে যে স্মৃতি চারণ করলেন রুহুল কবির রিজভী Jul 01, 2025
জুলাই কর্মসূচিতে থাকবে খালেদা জিয়া ও তারেক রহমানের বার্তা, জানালেন রিজভী Jul 01, 2025
১০ মিনিটে সারা বিশ্বের সর্বশেষ খবর Jul 01, 2025
শান্তর ক্যাপ্টেন্সি ছেড়ে দেয়ার বিষয়ে যা বললেন বিসিবি সভাপতি Jul 01, 2025