জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় শিক্ষার্থী সংসদ (জাকসু) নির্বাচনের জন্য কেনা ওএমআর ফরম (ব্যালট পেপার) যে প্রতিষ্ঠান থেকে সরবরাহ করা হয়েছে সেটি জামায়াত নয়, বরং বিএনপি সমর্থিত ব্যক্তির প্রতিষ্ঠান থেকে কেনা হয়েছে বলে দাবি করেছেন শিবির সমর্থিত সমন্বিত শিক্ষার্থী জোট প্যানেলের সাধারণ সম্পাদক (জিএস) প্রার্থী মাজহারুল ইসলাম।
বৃহস্পতিবার (১১ সেপ্টেম্বর) বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর অফিসের সামনে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে তিনি এ দাবি করেন। এ সময় তিনি কিছু প্রমাণও হাজির করেন।
মাজহারুল ইসলাম বলেন, অনেকে বলেছে ওএমআর ফরম যে প্রতিষ্ঠান থেকে আনা হয়েছে সেটি জামায়াতের প্রতিষ্ঠান বলে অভিযোগ করা হয়েছে। আমরা আপনাদের বলতে চাই, এই ফরম যে প্রতিষ্ঠান থেকে আনা হয়েছে সেটির নাম এইচআর সফট বিডি, যার চিফ এক্সিকিউটিভ অফিসার রোকনুজ্জামান রনি। তার ফেসবুক পোস্টে দেখুন খালেদা জিয়া, তার আইনজীবি সানাউল্লাহকে প্রমোট, তারেক রহমান ও ড. ইউনূসের ছবি পোস্ট করা আছে। এছাড়া খালেদা জিয়ার ছবি বিকৃত করা নিয়ে ফেসবুক পোস্টে প্রতিবাদও জানিয়েছেন। তাহলে তিনি কিভাবে জামায়াত হন? কেন এতো মিথ্যাচার করা হলো?
জাকসু এই জিএস প্রার্থী আরও বলেন, আমাদের কথা হলো ব্যক্তি যেই হোক বা মেশিনটা কোন প্রতিষ্ঠান থেকে আনা হয়েছে, সেটা কোনো ফ্যাক্ট হওয়ার কথা না। মেশিনে যদি কোনো ত্রুটি থাকে সেটি নিয়ে কথা ওঠা উচিত। আমরা যদি বলি বর্তমান ভিসি জাতীয়তাবাদী শিক্ষক ফোরামের সভাপতি ছিলেন। তাহলে কি বিশ্ববিদ্যালয়টি বিএনপির হয়ে গেছে? আপনারা মিথ্যাচার বন্ধ করুন। শিক্ষার্থীদের অধিকার আদায়ের পক্ষে কথা বলুন।
এর আগে, বুধবার (১০ সেপ্টেম্বর) রাতে বিশ্ববিদ্যালয়ে সরবরাহ করা ওএমআর ফরম জামায়াতের প্রতিষ্ঠান থেকে সরবরাহ করা হয়েছে বলে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে প্রচার করতে থাকেন শাখা ছাত্রদলের নেতাকর্মীরাসহ বিভিন্ন প্যানেলের প্রার্থীরা।
পরে বৃহস্পতিবার (১১ সেপ্টেম্বর) বেলা পৌনে ৪টায় ভাসানী হলে আয়োজিত এক জরুরি সংবাদ সম্মেলনে- জাকসু নির্বাচনে জামায়াতে ইসলামী সংশ্লিষ্ট ব্যক্তির কোম্পানি থেকে নেওয়া ব্যালটের মাধ্যমে ভোটগ্রহণ করা হচ্ছে এবং তাতে কারচুপির পাঁয়তারা চলছে বলে অভিযোগ করেন ছাত্রদল সমর্থিত জিএস পদপ্রার্থী তানজিলা হোসাইন বৈশাখী।
পাশাপাশি জাকসু নির্বাচন বর্জনেরও ঘোষণা দেন তিনি।
সংবাদ সম্মেলনে ভোট বর্জনের ঘোষণা দিয়ে তিনি বলেন, ক্রয় প্রক্রিয়া অনুসরণ না করে নির্বাচন কমিশন জামায়াতে ইসলামীর কোনো এক অখ্যাত কোম্পানি থেকে ব্যালট পেপার ও ওএমআর মেশিন সরবরাহ করে। ছাত্রশিবির সমর্থিত প্যানেলকে বিজয়ী করার লক্ষ্যে ভোট গণনায় কারচুপির বিষয়টি জানাজানি হলে শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের চাপের মুখে নির্বাচন কমিশন তাৎক্ষণিকভাবে ওএমআর মেশিনে ভোট গণনার পরিবর্তে ম্যানুয়ালি ভোট গণনার সিদ্ধান্ত নিয়ে প্রজ্ঞাপন জারি করে। কিন্তু একই কোম্পানির ব্যালট পেপার দিয়ে নির্বাচন অনুষ্ঠিত হচ্ছে।
ফলে কারচুপির মাধ্যমে ছাত্রশিবিরের সমর্থিত প্রার্থীদের জয়ী হওয়ার জন্য নীলনকশা করা হচ্ছে মনে করছেন জাকসু নির্বাচনের এই প্রার্থী। সংবাদ সম্মেলনে তানজিলা হোসাইন বৈশাখী আরও অভিযোগ করেন, ব্যালট পেপারের মাধ্যমে ভোট গ্রহণের দাবি জানালে নির্বাচন কমিশন আমাদের দাবি না মেনে জামায়াতে ইসলামীর কোম্পানির ব্যালট দিয়েই ভোট গ্রহণের সিদ্ধান্ত নেয়।
নির্বাচন কমিশনের এমন ‘পক্ষপাতমূলক আচরণের’ জন্য তীব্র ক্ষোভ ও নিন্দা প্রকাশ করে ভোট বর্জন করে ছাত্রদল।
জামায়াত-শিবিরের অনেক নেতাকর্মী ক্যাম্পাসের আশেপাশে অবস্থান করছে, এমন তথ্য শোনা যাচ্ছে বলেও জানান বৈশাখী।
এদিকে জাকসুর নির্বাচনের ভোটগ্রহণ বৃহস্পতিবার সকাল ৯টায় শুরু হয়। যা চলবে বিকাল ৫টা পর্যন্ত।
এবারের নির্বাচনে মোট ১১ হাজার ৮৯৭ জন শিক্ষার্থী ভোটাধিকার প্রয়োগ করবেন। কেন্দ্রীয় সংসদের ২৫ পদের বিপরীতে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন ১৭৭ জন প্রার্থী। বামপন্থি, শিবির, ছাত্রদল ও স্বতন্ত্রদের সমর্থিত মিলিয়ে সর্বমোট আটটি প্যানেল হয়েছে।
ইউটি/টিএ