রংপুরের পীরগাছায় যাত্রীবাহী পদ্মরাগ কমিউটার ট্রেনের ছয়টি বগি লাইনচ্যুত হওয়ার ঘটনার কারণ অনুসন্ধানে চার সদস্যের তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। ট্রেন চলাচল স্বাভাবিক করতে সেখানে উদ্ধার কাজ অব্যাহত রয়েছে। রিলিফ ট্রেন ঘটনাস্থলে পৌঁছলে উদ্ধার কাজে গতি বাড়বে বলে আশা করা হচ্ছে।
এদিকে, বগি লাইনচ্যুত কারণে সারা দেশের সঙ্গে রংপুর অঞ্চলের তিন জেলার আন্তঃনগর, লোকাল ও মেইল ট্রেন সম্পূর্ণ এবং চার জেলার আংশিক রেল যোগাযোগ বন্ধ হয়ে গেছে।
করতোয়া ও দোলনচাপা ট্রেনসহ একাধিক ট্রেন পথে আটকা পড়েছে। হঠাৎ এ দুর্ঘটনায় কয়েকশ যাত্রী চরম দুর্ভোগে পড়েছেন।
মঙ্গলবার (১৬ সেপ্টেম্বর) দুপুর ১২টা ৪০ মিনিটে ট্রেনটি লাইনচ্যুত হয়।
রেলওয়ে কর্তৃপক্ষ জানায়, সান্তাহার থেকে লালমনিরহাটের উদ্দেশে ছেড়ে আসা ট্রেন ‘পদ্মরাগ’ দুপুর সাড়ে ১২টার দিকে রংপুরের পীরগাছা রেলওয়ে স্টেশনে পৌঁছায়। এ সময় পঞ্চগড় থেকে সান্তাহারগামী ‘দোলনচাঁপা এক্সপ্রেস’ একই স্টেশনে আসায় ‘পদ্মরাগ’ ট্রেনটি দুই নম্বর লাইনে অবস্থান করে।
পরে দোলনচাঁপা পীরগাছা ছেড়ে গেলে লালমনিরহাটের উদ্দেশে যাত্রা শুরু করে ‘পদ্মরাগ’ ট্রেনটি। এ সময় এক নম্বর লাইনে থেকে দুই নম্বর লাইনে ক্রসিংয়ের সময় ‘পদ্মরাগ’ ট্রেনের ৬টি বগি লাইনচ্যুত হয়। এতে নারী ও শিশুসহ অন্তত ২০ যাত্রী আহত হয়েছেন। আহতদের পীরগাছা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সসহ স্থানীয় বিভিন্ন ক্লিনিকে ভর্তি করা হয়েছে।
প্রত্যক্ষদর্শীরা জানিয়েছেন, ট্রেনটি পীরগাছা স্টেশন অতিক্রম করার সময় হঠাৎ বিকট শব্দে বগিগুলো লাইনচ্যুত হয়। এতে বড় ধরনের দুর্ঘটনা না ঘটলেও লাইন ও সিগন্যালের ক্ষতি হয়েছে। যাত্রীরা আতঙ্কিত হয়ে তাড়াহুড়া করে নামার চেষ্টা করলে অনেকে আহত হন। অনেকেই রাস্তায় দাঁড়িয়ে বিকল্প যানবাহনের খোঁজ করতে থাকেন।
এ দিকে, বগুড়ার সান্তাহার থেকে আসা লালমনিরহাটের হাতীবান্ধা এলাকার ভ্রাম্যমাণ ব্যবসায়ী আতিকুল ইসলাম বলেন, পীরগাছা স্টেশন থেকে লালমনিহাটের উদ্দেশে ছেড়ে ক্রোসিংয়ের সময় ‘পদ্মরাগ’ ট্রেনটির ছয়টি বগি লাইনচ্যুত হয়ে যায়। এতে ট্রেনটির মধ্যে বড় ধরনের একটি ধাক্কা লাগায় যাত্রীরা আতঙ্কিত হয়ে পড়ে এবং দ্রুত ট্রেন থেকে নেমে পড়েন।
ওই ট্রেনে থাকা বাদাম বিক্রেতা মুকবুল মিয়া বলেন, পীরগাছা থেকে লালমনিরহাটের দিকে যাওয়ার সময় হঠাৎ ট্রেনটি লাইনের নিচে পড়ে যায়। এ সময় ট্রেনটি একদিকে কাত হয়ে যাওয়ায় যাত্রীরা সবাই বগির একদিকে পড়ে যাই। কয়েকজন যাত্রী আহত হয়েছে।
ভুক্তভোগী যাত্রী রফিকুল ইসলাম বলেন, হঠাৎ করেই ট্রেনটা থেমে যায়। পরে শুনলাম বগি লাইনচ্যুত হয়েছে। আমরা আতঙ্কে পড়ে যাই। শেষমেশ পায়ে হেঁটে রাস্তায় উঠে বিকল্প পথে গন্তব্যে যেতে হচ্ছে।
এদিকে, দুর্ঘটনার কারণ অনুসন্ধানে ঊর্ধ্বতন রেলওয়ে কর্মকর্তারা ঘটনাস্থলে পৌঁছেছেন।
এ বিষয়ে পীরগাছা রেলওয়ে স্টেশন মাস্টার জেনারুল ইসলাম বলেন, আপাতত ট্রেন যোগাযোগ বন্ধ রয়েছে। উদ্ধারকাজে লোক আসছে। লালমনিরহাট থেকে রিলিফ ট্রেন রওনা দিয়েছে। আজ এই রুটে ট্রেন চলাচল স্বাভাবিক হওয়ার সম্ভাবনা খুবই কম। তবে রাতের মধ্যে লাইন সচল করার চেষ্টা করা হবে।
লালমনিরহাট রেলওয়ের ডিভিশনাল ইঞ্জিনিয়ার শিপন আলী বলেন, পীরগাছায় রেলক্রসিংকালে লাইনচ্যুত হওয়ার ঘটনায় সাময়িকভাবে রংপুর, লালমনিরহাট ও কুড়িগ্রামের সঙ্গে রেল যোগাযোগ বন্ধ রয়েছে। চলাচল স্বাভাবিক করতে সেখানে উদ্ধারকাজ অব্যাহত রয়েছে।
তিনি আরও বলেন, রিলিফ ট্রেন আসলে দ্রুতই উদ্ধার কাজ সম্পন্ন হয়ে রেল যোগাযোগ সচল হবে। দুর্ঘটনার কারণ অনুসন্ধানে লালমনিরহাট লে ডিভিশন চার সদস্যের একটি তদন্ত কমিটি গঠন করেছে। লাইনচ্যুত বগিগুলো সরিয়ে নিলে পুনরায় ট্রেন চলাচল স্বাভাবিক হবে।
এসএন