৩২ বছর পর অবশেষে খুলে দেওয়া হয়েছে ঢাকা কলেজ ছাত্র সংসদের (ঢাকসু) কার্যালয়। শিক্ষার্থীদের দীর্ঘদিনের দাবির পরিপ্রেক্ষিতে মঙ্গলবার (১৬ সেপ্টেম্বর) দুপুরে কলেজ কর্তৃপক্ষ ভবনের তালা খুলে দেয়। এতে শিক্ষার্থীরা উচ্ছ্বাস প্রকাশ করে।
কলেজ প্রশাসন সূত্রে জানা গেছে, ঢাকা কলেজের বর্ণাঢ্য ইতিহাস ও ঐতিহ্যের ধারক এই ছাত্র সংসদ ভবনটি ১৯৯০ সালে প্রতিষ্ঠা করা হয়। তবে ১৯৯৪ সালের পর থেকে কার্যালয়টি তালাবদ্ধ ছিল। দীর্ঘ তিন দশকেরও বেশি সময় ছাত্র সংসদ নির্বাচন না হওয়ায় ভবনটি পরিত্যক্ত অবস্থায় পড়েছিল।
সরেজমিনে দেখা গেছে, কার্যালয়ের ভেতরে ধুলোবালি, পুরোনো কাগজের স্তূপ এবং এলোমেলোভাবে ছড়িয়ে ছিটিয়ে রয়েছে চেয়ার-টেবিল।
ঢাকা কলেজের অর্থনীতি বিভাগের শিক্ষার্থী রোমান জাবির বলেন, আমার জন্মের আগে থেকেই এ ভবনে তালা ঝুলছে। এর ভেতরের অবস্থা দেখে বোঝা যায় না যে এটি কোনো ছাত্র সংসদের কার্যালয়। আমরা চাই, এই মাসের মধ্যে প্রশাসন ঢাকা কলেজ ছাত্র সংসদ নির্বাচনের একটি রোডম্যাপ প্রকাশ করুক।
কলেজের অধ্যক্ষ অধ্যাপক এ কে এম ইলিয়াস জানান, ছাত্র সংসদ নির্বাচন আয়োজনের জন্য তিন সদস্যের একটি কমিটি গঠন করা হবে। এই কমিটি চলতি সপ্তাহের মধ্যে ছাত্র সংসদের গঠনতন্ত্র প্রকাশ করবে এবং রাজনৈতিক ছাত্র সংগঠনগুলোর সঙ্গে বসে তা সংস্কারের কাজ শুরু করবে।
ইতিহাস থেকে জানা যায়, ১৯৩২-৩৩ মেয়াদে ঢাকা কলেজ ছাত্র সংসদের সাধারণ সম্পাদক (জিএস) ছিলেন নুরুল হুদা। সে সময় জিএস ছিল সর্বোচ্চ পদ। পরে সহ-সভাপতি বা ভিপি সর্বোচ্চ পদ হিসেবে যুক্ত হয়। পঞ্চাশের দশকে ৮টি, ষাটের দশকে ৭টি, সত্তরের দশকে ৩টি, আশির দশকে একটি এবং নব্বই দশকে চারটি ছাত্র সংসদ গঠিত হয়।
সর্বশেষ ঢাকা কলেজ ছাত্র সংসদ নির্বাচন হয়েছিল ১৯৯৩ সালে, যেখানে জাতীয়তাবাদী ছাত্রদলের হারুন-জাবেদ প্যানেল জয়ী হয়েছিল।
এদিকে, আগামী ১০ কার্যদিবসের মধ্যে ছাত্র সংসদ নির্বাচনের রোডম্যাপ ঘোষণার জন্য শিক্ষার্থীরা আবেদনপত্র ও স্বাক্ষরলিপি কলেজ অধ্যক্ষের মাধ্যমে শিক্ষা উপদেষ্টার কাছে পাঠিয়েছেন। কলেজ প্রশাসন জানিয়েছে, এ বিষয়ে শিক্ষা উপদেষ্টা প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেবেন।
অন্যদিকে, আগামী ১৮ সেপ্টেম্বরের মধ্যে তফসিল ঘোষণা না হলে আন্দোলনের হুঁশিয়ারি দিয়েছেন শিক্ষার্থীরা। তারা জানিয়েছে, তাদের দাবি পূরণ না হলে আগামী ২২ সেপ্টেম্বর থেকে কলেজ প্রশাসনিক ভবনের সামনে চার ঘণ্টা অবস্থান কর্মসূচি পালন করবে।
এক জরুরি সংবাদ সম্মেলনে শিক্ষার্থী রোমান জাবির বলেন, ঢাকা কলেজ এই উপমহাদেশের প্রাচীন ও ঐতিহ্যবাহী শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোর মধ্যে অন্যতম। এখানকার ছাত্রসমাজ বরাবরই গণতান্ত্রিক আন্দোলন ও অধিকার আদায়ের ইতিহাসে অগ্রণী ভূমিকা রেখেছে। বর্তমানে দেশের বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্র সংসদ নির্বাচন হলেও ঢাকা কলেজ প্রশাসন নীরব ভূমিকা পালন করছে।
তিনি আরও বলেন, ছাত্র সংসদ শিক্ষার্থীদের গণতান্ত্রিক চর্চা ও নেতৃত্ব বিকাশের প্রধান প্ল্যাটফর্ম। আমাদের চব্বিশের গণঅভ্যুত্থানের বিজয়কে প্রাতিষ্ঠানিক রূপ দিতে হলে ছাত্র সংসদের নিয়মিত কার্যক্রম অত্যন্ত জরুরি। এরপরও যদি প্রশাসন নির্বাচন না দেয়, তাহলে শিক্ষার্থীদের সঙ্গে নিয়ে আন্দোলনের ঘোষণা দেওয়া হবে।
এবি/টিকে