চীনের প্রেসিডেন্ট শি জিনপিং ও যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের মধ্যে আজ শুক্রবার (১৯ সেপ্টেম্বর) টেলিফোনে কথা হয়েছে। প্রেসিডেন্ট হিসেবে দায়িত্ব নেওয়ার পর এটি ট্রাম্প ও শির মধ্যে দ্বিতীয় ফোনালাপ। যদিও ফোনালাপের বিস্তারিত প্রকাশ করা হয়নি, ধারণা করা হচ্ছে—টিকটকের মালিকানা হস্তান্তর, দুই দেশের শুল্কনীতি এবং আসন্ন এক শীর্ষ বৈঠক ছিল আলোচনার মূল বিষয়বস্তু। চীনের রাষ্ট্রীয় সম্প্রচারমাধ্যম সিসিটিভি এবং বার্তা সংস্থা শিনহুয়ার বরাতে এসব তথ্য জানা গেছে।
ফোনালাপের আগের দিন বৃহস্পতিবার (১৮ সেপ্টেম্বর) ফক্স নিউজকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে ট্রাম্প বলেন, তারা টিকটক ও বাণিজ্য বিষয়ক আলোচনায় “চুক্তির খুব কাছাকাছি পৌঁছেছেন” এবং চীনের সঙ্গে তার সম্পর্ক “খুব ভালো অবস্থায় রয়েছে।”
এর আগে গত ৫ জুন ট্রাম্প জানান, প্রেসিডেন্ট শি জিনপিং তাকে চীন সফরে আমন্ত্রণ জানিয়েছেন এবং তিনিও পাল্টা আমন্ত্রণ হিসেবে শিকে যুক্তরাষ্ট্র সফরের আহ্বান জানিয়েছেন। তবে এখন পর্যন্ত কোনো সফরের আনুষ্ঠানিক ঘোষণা আসেনি।
বিশ্লেষকরা বলছেন, সর্বশেষ ফোনালাপে শি জিনপিং হয়তো আবারও ট্রাম্পকে চীন সফরের আমন্ত্রণ জানিয়েছেন।
টিকটক চুক্তির অগ্রগতি
টিকটকের মালিকানা হস্তান্তর নিয়ে আলোচনা শুরু হয়েছিল ট্রাম্পের প্রথম মেয়াদেই। দ্বিতীয় মেয়াদে বিষয়টি আবারও আলোচনার কেন্দ্রে চলে আসে। গত সোমবার স্পেনের মাদ্রিদে বৈঠকে মার্কিন অর্থমন্ত্রী স্কট বেসেন্ট এবং চীনের বাণিজ্য উপমন্ত্রী লি চেংগ্যাং টিকটক বিক্রির একটি প্রাথমিক কাঠামোতে একমত হন।
প্রস্তাব অনুযায়ী, মার্কিন বিনিয়োগকারীরা টিকটকের অন্তত ৮০ শতাংশ শেয়ার কিনবেন এবং বাকি ২০ শতাংশ থাকবে চীনা বিনিয়োগকারীদের হাতে।
মার্কিন প্রযুক্তি ও ভেঞ্চার ক্যাপিটাল কোম্পানি—ওরাকল, আন্দ্রেসেন হোরোভিৎজ, সিলভার লেকসহ আরও কয়েকটি প্রতিষ্ঠান এতে বিনিয়োগ করবে বলে জানা গেছে।
নতুন গঠিত কনসোর্টিয়ামের পরিচালনা পর্ষদে যুক্তরাষ্ট্রের সংখ্যাগরিষ্ঠতা থাকবে এবং ট্রাম্প প্রশাসনের একজন প্রতিনিধি বোর্ড সদস্য হিসেবে থাকবেন।
২০২৪ সালের শুরুর দিকে মার্কিন কংগ্রেসে পাশ হওয়া এক দ্বিদলীয় আইনে বলা হয়েছিল, যুক্তরাষ্ট্রে কার্যক্রম চালিয়ে যেতে চাইলে টিকটককে অন্তত ৮০ শতাংশ মালিকানা মার্কিন প্রতিষ্ঠানের কাছে হস্তান্তর করতে হবে। তবে আইন কার্যকরের আগেই ট্রাম্প একাধিকবার সময়সীমা বাড়িয়ে বিকল্প সমাধানের চেষ্টা চালান।
প্রথমদিকে চীনভিত্তিক কোম্পানি বাইটড্যান্স তাদের শেয়ার ছাড়তে রাজি না হলেও সাম্প্রতিক বাণিজ্য উত্তেজনা ও মার্কিন চাপের মুখে কিছুটা নমনীয় হয়েছে। সম্ভাব্য বৈঠক ও ভবিষ্যতের দিকনির্দেশনা
মার্কিন কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, এই চুক্তি দুই দেশের শীর্ষ নেতাদের বৈঠকের পথ সুগম করতে পারে। অক্টোবরের শেষ দিকে ট্রাম্পের এশিয়া সফরের সময় শি জিনপিংয়ের সঙ্গে একটি আনুষ্ঠানিক বৈঠক হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। যদিও চুক্তির চূড়ান্ত শর্তাবলি এখনো প্রকাশ করা হয়নি, হোয়াইট হাউস জানিয়েছে, আনুষ্ঠানিক ঘোষণার আগ পর্যন্ত যেকোনো তথ্যকে অনুমান হিসেবেই বিবেচনা করা উচিত।
ট্রাম্প সাংবাদিকদের জানিয়েছেন, তিনি আশা করেন টিকটক চুক্তি চূড়ান্ত হবে এবং এটি সফল হলে টিকটক হবে “মার্কিন মালিকানাধীন একটি শক্তিশালী কোম্পানি।”
শুল্কনীতি নিয়ে আলোচনা
দুই অর্থনৈতিক পরাশক্তি সম্প্রতি পারস্পরিক শুল্কহার বাড়ানোয় বিশ্ব বাণিজ্যে প্রভাব পড়েছে। উভয় দেশ এখন একটি সমঝোতায় পৌঁছাতে কাজ করছে, যাতে বৈশ্বিক বাজারে স্থিতিশীলতা ফেরানো যায়।