নিউইয়র্ক বিমানবন্দরের ঘটনা জাতীয় রাজনীতির অবক্ষয়ের নগ্ন বহিঃপ্রকাশ বলে মন্তব্য করেছেন এনসিপির সাবেক নেত্রী নীলা ইসরাফিল।
মঙ্গলবার সকাল সাড়ে ৭টার দিকে নিজের ফেসবুক অ্যাকাউন্টে দেওয়া এক পোস্টে তিনি এ মন্তব্য করেন।
তিনি লেখেন, ‘আমেরিকার এয়ারপোর্টে যা ঘটেছে, তা কেবলমাত্র একটি দুর্ঘটনা নয়, এটি আমাদের জাতীয় রাজনীতির অবক্ষয়ের নগ্ন বহিঃপ্রকাশ। বিদেশের মাটিতে, আন্তর্জাতিক দৃষ্টির সামনে আমরা যে নোংরা রাজনীতির চর্চা করে এসেছি, সেটিই আবার প্রকাশ পেল- অসহিষ্ণুতা, হিংসা, আর প্রতিহিংসার নগ্ন প্রদর্শনী।’
‘সবচেয়ে মর্মান্তিক ছিল নারীকে লক্ষ্য করে আক্রমণের চেষ্টা। একজন নারী সহযাত্রীকে যেন অসম্মান করা না হয়, সেই কথা কয়েকজন সৎ মানুষ উচ্চস্বরে চিৎকার করে বলছিলেন। (আপারে দিওনা, আক্তাররে দে) কিন্তু তবুও নারীকে ঘিরে যে বিশৃঙ্খলা তৈরি হলো, তা আমাদের সমাজ ও রাজনীতির নৈতিক দেউলিয়াত্বকেই প্রমাণ করে। নারীকে সম্মান দেওয়ার পরিবর্তে রাজনৈতিক প্রতিহিংসার হাতিয়ার বানানো হলো, যা ভীষণ লজ্জাজনক ও নিন্দনীয়।’
‘এখানে আরো কষ্টের বিষয় হলো, মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরের মতো একজন ভদ্র, শান্ত স্বভাবের, সম্মানিত নেতা, যাকে আমি ব্যক্তিগতভাবে কখনো উত্তেজিত হতে বা রাগতে দেখিনি; তাকেও এই নোংরা আক্রমণের শিকার হতে হলো। একজন ভদ্র মানুষ, যিনি সবসময় ধৈর্যের প্রতীক ছিলেন, তাকেও অপমানিত করা হলো। এটি শুধু একজন নেতাকে নয়, বরং পুরো জাতির রাজনৈতিক চেতনার উপর আঘাত।’
‘আর ড. ইউনূস, যিনি নোবেলজয়ী হয়ে সারা পৃথিবীতে বাংলাদেশের ভাবমূর্তি উজ্জ্বল করেছিলেন, তিনি নিজের নিরাপত্তার জন্য পালিয়ে গেলেন।
অথচ তার সহযাত্রী নারী, ড. জারাকে রাস্তায়, বিশৃঙ্খলার মাঝখানে অরক্ষিত অবস্থায় রেখে গেলেন। একজন সহযাত্রী নারীকে অরক্ষিত ফেলে চলে যাওয়া শুধু দায়িত্বজ্ঞানহীনতাই নয়, এটি নেতৃত্বের সবচেয়ে জঘন্যতম ব্যর্থতা।’
নীলা ইসরাফিল লেখেন, ‘বিস্ময়কর হলো, বাংলাদেশ থেকে বিমানে ওঠার সময় যত জাঁকজমকপূর্ণ ফটোসেশন হলো, সোশ্যাল মিডিয়ায় যত প্রচারণা চালানো হলো, সবই ছিল নিছক প্রদর্শনী। কিন্তু নামার সময় বাস্তব বিপদের মুখোমুখি হলে সেই নেতারাই সরে গেলেন নিরাপদ পথে। কর্মী আর সহযাত্রী রয়ে গেলেন বিশৃঙ্খলার কেন্দ্রে, আর নেতৃত্ব পালিয়ে গেল নিরাপত্তার আড়ালে।
এটাই বাংলাদেশের তথাকথিত নেতৃত্বের প্রকৃত চরিত্র।’
‘আজকের এ ঘটনায় জাতির সামনে স্পষ্ট হয়েছে আমাদের রাজনৈতিক নেতৃত্বের বড় অংশ সুবিধাবাদী, দায়িত্বজ্ঞানহীন ও ভণ্ড। যারা দুঃসময়ে নারীর নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে পারেন না, যারা সহযাত্রীকে রাস্তায় ফেলে চলে যেতে পারেন, তারা নেতৃত্ব দেওয়ার নৈতিক অধিকার হারিয়েছেন।’
‘আমার কাছে সবচেয়ে বেদনাদায়ক সত্য হলো, একজন মির্জা ফখরুলের মতো সম্মানিত ভদ্র মানুষকেও অপমানিত হতে হলো, আর একজন নারী সহযাত্রীকে অসম্মানের চরম ঝুঁকির মুখে ফেলে দেওয়া হলো। আর একজন নোবেলজয়ী মানুষ পালিয়ে গেলেন যেখানে তাকে এগিয়ে এসে দায়িত্ব নেওয়ার কথা ছিল। এই দৃশ্য কেবল ব্যক্তিগত অপমান নয়, পুরো জাতির জন্য এক কলঙ্কিত অধ্যায়।’
সবশেষে তিনি লেখেন, ‘এখন সময় এসেছে জাতিকে প্রশ্ন করার,আমরা কি এই ভণ্ড, দায়িত্বজ্ঞানহীন, নারীবিরোধী রাজনৈতিক সংস্কৃতিকে চিরতরে প্রত্যাখ্যান করবো, নাকি নীরব থেকে আগামী প্রজন্মকে আরো বড় অপমানের দিকে ঠেলে দেবো?’
কেএন/এসএন