'রাজনৈতিক দলগুলোকে শান্তিপূর্ণভাবে সংস্কারের প্রতি অঙ্গীকার দেখাতে হবে'

বিশ্বব্যাপী গণতন্ত্রের অবনতির সময়েও বাংলাদেশ একটি গণতান্ত্রিক উত্তরণের পথে এগিয়ে যাচ্ছে। এই উত্তরণ প্রক্রিয়াকে এগিয়ে নিতে দেশটি বিভিন্ন সংস্কারমূলক উদ্যোগ গ্রহণ করেছে।

তবে এই পথ চলায় রাজনৈতিক দলগুলোকে শান্তিপূর্ণ উপায়ে সংস্কারের প্রতি সুস্পষ্ট প্রতিশ্রুতি প্রদর্শন করতে হবে এমন মন্তব্য উঠে এসেছে ইউরোপীয় পার্লামেন্টের মানবাধিকার-বিষয়ক উপকমিটির সাম্প্রতিক প্রতিবেদনে।

চলতি সেপ্টেম্বর মাসে বাংলাদেশ সফর করে যাওয়া ইউরোপীয় পার্লামেন্টের পাঁচ সদস্যের একটি প্রতিনিধি দল বুধবার ইউরোপীয় পার্লামেন্টের সদরদপ্তরে তাদের পর্যবেক্ষণ প্রতিবেদন উপস্থাপন করে। উপকমিটির বৈঠকে সভাপতিত্ব করেন সফরকারী দলের প্রধান মৌনির সাতৌরি।

সাতৌরি বলেন, আমাদের সফরের মূল লক্ষ্য ছিল অন্তর্বর্তী সরকারের অধীনে চলমান সংস্কার কার্যক্রম পর্যালোচনা এবং গণতান্ত্রিক উত্তরণে মানবাধিকার পরিস্থিতি মূল্যায়ন। পাশাপাশি আমরা প্রায় উপেক্ষিত হয়ে যাওয়া রোহিঙ্গা সংকট নিয়েও গুরুত্ব দিয়ে আলোচনা করেছি।

তিনি আরও বলেন, রোহিঙ্গা ইস্যুটিকে ইইউর রাজনৈতিক এজেন্ডায় পুনরায় অন্তর্ভুক্ত করা প্রয়োজন, যাতে এটি আন্তর্জাতিকভাবে গুরুত্ব হারিয়ে না ফেলে। সংস্কার প্রক্রিয়ায় কিছু চ্যালেঞ্জ এখনো রয়েছে, তবে এই পথ চলায় আমরা সহযোগিতার প্রস্তাব দিয়েছি।

প্রতিনিধি দলের সদস্য ইজাবেল উইসেলার-লিমা আশা প্রকাশ করে বলেন, বাংলাদেশে সামনে প্রতিযোগিতামূলক নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে এবং অন্তর্বর্তী সরকার সেই লক্ষ্যে কাজ করে যাচ্ছে।

রোহিঙ্গা পরিস্থিতি নিয়ে তিনি উদ্বেগ প্রকাশ করে বলেন, বিশ্বের বৃহত্তম শরণার্থী শিবির এখন বাংলাদেশে। কিন্তু সাম্প্রতিক ইউক্রেন যুদ্ধ ও গাজা সংকটের কারণে রোহিঙ্গাদের অবস্থা ধীরে ধীরে ভুলে যাওয়া হচ্ছে, যা মোটেই কাম্য নয়। মিয়ানমার তাদের দায়িত্ব এড়িয়ে যাচ্ছে, যা পরিস্থিতিকে আরও জটিল করে তুলছে।

অন্য এক সদস্য আরকাদিউজ মুলারজিক বলেন, রোহিঙ্গা সংকটে মুসলিম বিশ্ব এবং ভারত কার্যত মুখ ফিরিয়ে নিয়েছে। ইউরোপীয় দেশগুলো এখন সবচেয়ে বেশি মানবিক সহায়তা দিচ্ছে, যেখানে একসময় যুক্তরাষ্ট্র অগ্রণী ভূমিকা রাখত। মুসলিম দেশগুলোর অবদান অত্যন্ত সীমিত, যা হতাশাজনক ও অগ্রহণযোগ্য।

বাংলাদেশের সাম্প্রতিক রাজনৈতিক পরিস্থিতি নিয়ে প্রতিনিধি দলের সদস্য ক্যাটারিনা ভিয়েরা বলেন, দেশটি একটি গুরুত্বপূর্ণ রূপান্তরের মধ্য দিয়ে যাচ্ছে। এটা সত্যিকারের অগ্রগতির সুযোগ। সামনে সম্ভাব্য নির্বাচন রয়েছে, যা জনগণের প্রত্যাশা অনুযায়ী স্বচ্ছ ও অংশগ্রহণমূলক হওয়া দরকার। এ চাওয়া কেবল রাজনৈতিক দলগুলোর নয় নাগরিক সমাজ, শিক্ষার্থী ও যুব আন্দোলন থেকেও এসেছে। তারা সক্রিয়ভাবে সংলাপে অংশ নিচ্ছে।

তবে তিনি আক্ষেপ করে বলেন, ধর্মীয়, লিঙ্গ ও নৃতাত্ত্বিক সংখ্যালঘুদের এবং নারীদের অংশগ্রহণ এখনো আশানুরূপ নয়। এই ক্ষেত্রে উন্নয়নের প্রচুর সুযোগ রয়েছে।

ভিয়েরা আরও বলেন, বাংলাদেশের সংস্কার প্রক্রিয়ায় যারা অগ্রণী ভূমিকা রাখছেন, তাদের প্রতি সংহতি জানিয়ে এবং গণতান্ত্রিক কাঠামোর মধ্যে গঠনমূলক সহায়তা দিয়ে ইউরোপীয় ইউনিয়ন (ইইউ) একটি কার্যকর ভূমিকা রাখতে পারে। আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের সহায়তায় বাংলাদেশ সামনে গুরুত্বপূর্ণ অগ্রগতি অর্জন করবে বলেও আমরা আশাবাদী।

গত ১৬ থেকে ১৮ সেপ্টেম্বর ইউরোপীয় পার্লামেন্টের মানবাধিকার উপকমিটির প্রতিনিধি দলটি ঢাকা সফর করে। এ সময় তারা অন্তর্বর্তী সরকারের প্রতিনিধি, বিভিন্ন রাজনৈতিক দল, এনজিও, নাগরিক সমাজের প্রতিনিধি, শ্রমিক সংগঠন এবং মাঠ পর্যায়ে কাজ করা বিভিন্ন আন্তর্জাতিক সংস্থার সঙ্গে মতবিনিময় করেন। এছাড়াও তারা কক্সবাজারে অবস্থিত রোহিঙ্গা শিবির পরিদর্শন করেন।

এমকে/এসএন

Share this news on:

সর্বশেষ

img
মালদ্বীপে খালেদা জিয়ার গায়েবানা জানাজা অনুষ্ঠিত Dec 31, 2025
img
শাহজাহান চৌধুরীর হাতে নগদ ১ কোটি ৩৪ লাখ টাকা, হলফনামায় ৭১ মামলা Dec 31, 2025
img
২ দেশের সম্পর্ক সমৃদ্ধ হবে তারেক রহমানের নেতৃত্বে, আশা নরেন্দ্র মোদীর Dec 31, 2025
img
নতুন বছরে নির্বাচন ও গণভোট আয়োজন গণতান্ত্রিক অগ্রযাত্রাকে আরো বেগবান করবে : প্রধান উপদেষ্টা Dec 31, 2025
img
‘হ্যাপি ২০৩০’ লিখে ট্রলের শিকার বাদশা Dec 31, 2025
img
নতুন বছরে দেশ সুবিচারের পথে আরও এগিয়ে যাবে: গোলাম পরওয়ার Dec 31, 2025
img
নববর্ষের অঙ্গীকার হবে-অবাধ, সুষ্ঠু নির্বাচনে জবাবদিহিমূলক সরকার গঠন: তারেক রহমান Dec 31, 2025
img
চীনে খালেদা জিয়ার গায়েবানা জানাজা অনুষ্ঠিত Dec 31, 2025
img
দেশে বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ ছাড়াল ৩৩ বিলিয়ন ডলার Dec 31, 2025
img
গণতন্ত্র পুনরুদ্ধারের আন্দোলনে আপসহীন যোদ্ধা ছিলেন মাহমুদুল হাসান: তারেক রহমান Dec 31, 2025
img
দুঃসংবাদ দিয়ে বছর শেষ হলো এমবাপ্পের! Dec 31, 2025
img
গোপনে মেয়ের বিয়ে দিলেন পাকিস্তানের সেনাপ্রধান Dec 31, 2025
img
১৫ বছরের কম বয়সীদের জন্য সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম নিষিদ্ধের উদ্যোগ নিল ফ্রান্স Dec 31, 2025
img
৫০তম ছবিতে সমাজসেবকের ভূমিকায় নতুন চ্যালেঞ্জে দেব Dec 31, 2025
img
মির্জা ফখরুলের জন্য মনটা কাল থেকে খুব বিষণ্ন হয়ে আছে: প্রেস সচিব Dec 31, 2025
img
লিখে নিন, এবার পশ্চিমবঙ্গে আমাদেরই সরকার: অমিত শাহ Dec 31, 2025
মন প্রশান্ত করার উপায় | ইসলামিক টিপস Dec 31, 2025
img
বিতর্কের মুখে শচীন টেন্ডুলকারের কন্যা সারা! Dec 31, 2025
img
তারেক রহমানের সঙ্গে শ্রীলঙ্কার পররাষ্ট্রমন্ত্রীর সৌজন্য সাক্ষাৎ Dec 31, 2025
img
জার্মানিতে ব্যাংক ডাকাতি, লুট প্রায় ১৩০০ কোটি টাকা Dec 31, 2025