রাজ্যের মর্যাদার দাবিতে কয়েকদিন ধরেই উত্তাল ভারতের লাদাখ। এই আন্দোলনের অন্যতম অ্যাক্টিভিস্ট হচ্ছেন সোনম ওয়াংচুক। ভারতের বহুল আলোচিত ‘থ্রি ইডিয়টস’ সিনেমার অন্যতম মুখ্য চরিত্র ‘ফুনসুখ ওয়াংড়ু’ তার চরিত্রেই নির্মিত। আন্দোলনকে উসকে দেয়ার অভিযোগে ইতোমধ্যেই তাকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে।
শনিবার (২৭ সেপ্টেম্বর) এনডিটিভির খবরে বলা হয়, ইতোমধ্যেই তাকে রাজস্থানের যোধপুর কারাগারে স্থানান্তরিত করা হয়েছে। এই কারাগারটি তিন স্তরের কঠোর নিরাপত্তার জন্য বিশেষভাবে পরিচিত। সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, সেখানে ওয়াংচুককে একটি নির্জন কক্ষে রাখার কথা রয়েছে, যা সিসিটিভি দ্বারা ক্রমাগত পর্যবেক্ষণ করা হবে।
ব্রিটিশ আমলের যোধপুর জেলে বছরের পর বছর ধরে অনেক উচ্চপদস্থ ব্যক্তিকে বন্দী করা হয়। যেমন- ১৯৯৮ সালের কৃষ্ণসার হরিণ শিকার মামলায় দোষী সাব্যস্ত বলিউড অভিনেতা সালমান খান এবং ধর্ষণের অভিযোগে অভিযুক্ত স্বঘোষিত ধর্মগুরু আশারাম বাপু। ইন্ডিয়ান মুজাহিদিনের অনেক সন্ত্রাসী এবং জম্মু ও কাশ্মীরের বিচ্ছিন্নতাবাদী নেতা আব্দুল গনি লোনকে কারাগারটিতে রাখা হয়েছিল।
১৯৬৫ সালে পাকিস্তানের সঙ্গে যুদ্ধের সময় এই কারাগারটিতে হামলা হয়। এর কারণে কারাগারটির ভেতরে ৩০ জনেরও বেশি মানুষ প্রাণ হারিয়েছিল। বর্তমানে কারাগারটিতে রয়েছে ১,৪০০ বন্দী।
যদিও কর্মকর্তারা ওয়াংচুককে কেন যোধপুর কারাগারে রাখার সিদ্ধান্ত নিয়েছিলেন তা বলেননি, তবে লাদাখ থেকে তার সমর্থকদের ব্যাপক বিক্ষোভ এড়াতে এটি করা হয়েছে বলে মনে করা হচ্ছে। ওয়াংচুককে কড়া নিরাপত্তা মোতায়েন করে একটি বিশেষ বিমানে কারাগার কেন্দ্রে নিয়ে যাওয়া হয়।
নিরাপত্তা সত্ত্বেও, আজ সকালে কারাগারের বাইরে তীব্র নাটকীয়তা দেখা গেছে, যখন ৫০ বছর বয়সী একজন কর্মী বিজয়পাল ওয়াংচুকের গ্রেপ্তারের প্রতিবাদে অনশনে যাওয়ার হুমকি দেন। কর্মকর্তাদের মতে, বিজয়পাল সকাল ১০টা ২০ মিনিট নাগাদ কারাগারের গেটে পৌঁছান এবং “ভারত মাতা কি জয়” স্লোগান দিতে থাকেন। স্থানীয় পুলিশ তাকে তাড়িয়ে দেয়ার চেষ্টা করলে, তিনি হুমকি দেন যে যদি তাকে জোর করে ঘটনাস্থল থেকে সরিয়ে দেয়া হয় তবে তিনি জেলের বাইরে অনশনে যাবেন।
তবে পুলিশ তাকে আটক করে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য রতনদা থানায় নিয়ে যায়। পুলিশ সূত্র এনডিটিভিকে জানিয়েছে, বিজয়পাল এর আগে মদের দোকান খোলার বিরুদ্ধে প্রতিবাদ করেছিলেন।
লাদাখে রাজ্যের মর্যাদা এবং সাংবিধানিক সুরক্ষার দাবিতে এ পর্যন্ত সহিংস বিক্ষোভে চারজন নিহত এবং নিরাপত্তা কর্মীসহ ৫০ জন আহত হওয়ার দুই দিন পর - শুক্রবার ওয়াংচুককে গ্রেপ্তার করা হয়। গ্রেপ্তারের একদিন আগে ওয়াংচুক বলেছিলেন যে এ কারণে যে কোনও সময় গ্রেপ্তার হলে তিনি খুশি হবেন।
স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় ফরেন কন্ট্রিবিউশন (রেগুলেশন) অ্যাক্ট বা এফসিআরএ, ২-১- এর অধীনে বিদেশ থেকে তহবিল গ্রহণের জন্য ওয়াংচুকের অলাভজনক স্টুডেন্টস এডুকেশনাল অ্যান্ড কালচারাল মুভমেন্ট অফ লাদাখের নিবন্ধন বাতিল করার পর এই ঘটনা ঘটে। এই সপ্তাহের শুরুতে সহিংসতায় চারজন নিহত এবং নিরাপত্তা কর্মী সহ ৫০ জনেরও বেশি আহত হন।
ওয়াংচুক এনডিটিভিকে বলেছিলেন, ‘তারা এটিকে বিদেশি অনুদান হিসেবে ভুল ভেবেছিল। আমি তাদের (কেন্দ্রের) ভুল মনে করি। এটাকে যে বিদেশি অনুদান হিসেবে ভাবা হয়েছিল, তা ঠিক নয়।’
লাদাখের অধিকারের জন্য পাঁচ বছর ধরে চলা আন্দোলনের একজন গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিত্ব ওয়াংচুকের গ্রেপ্তারের ঘটনায় বিরোধী নেতারা তীব্র প্রতিক্রিয়া জানিয়েছেন এবং পরিস্থিতি মোকাবেলায় কেন্দ্রীয় সরকারের ভূমিকাকে দায়ী করেছেন। এছাড়া জম্মু ও কাশ্মীরের মুখ্যমন্ত্রী ওমর আবদুল্লাহ এই গ্রেপ্তারকে “দুর্ভাগ্যজনক” বলে অভিহিত করেছেন।
ইএ/টিকে