টিকটক ও এক্স-এর ওপর নিয়ন্ত্রণ চান নেতানিয়াহু

গাজায় গণহত্যার মধ্যে মার্কিন জনমতকে প্রভাবিত করার জন্য সোশ্যাল মিডিয়াকে ‘অস্ত্র’ হিসেবে ব্যবহার করার কথা স্বীকার করেছেন ইসরাইলের প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু। তিনি বলেছেন, যুক্তরাষ্ট্রে ইসরাইলপন্থিদের প্রতি সমর্থন ধরে রাখার জন্য সোশ্যাল মিডিয়া প্ল্যাটফর্মগুলোকে ‘অস্ত্র’ হিসেবে দেখে তার সরকার।

জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদের অধিবেশনের ফাঁকে শুক্রবার (২৬ সেপ্টেম্বর) নিউইয়র্কে ইসরাইলের কনস্যুলেট জেনারেলে মার্কিন সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ব্যক্তিত্বদের সাথে এক বৈঠকে অংশ নিয়ে সোশ্যাল মিডিয়া নিয়ে এক মন্তব্যে নেতানিয়াহু বলেন, ‘(সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম) যুক্তরাষ্ট্রে আমাদের ঘাঁটি সুরক্ষিত করার জন্য সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ অস্ত্র।’

সেই অবস্থান থেকেই নেতানিয়াহু এবার চীনের মালিকানাধীন ভিডিও শেয়ারিং প্ল্যাটফর্ম টিকটক ও মার্কিন প্রযুক্তি উদ্যোক্তা ইলন মাস্ক মালিকানাধীন এক্স-এর (আগের নাম টুইটার) ওপর নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠার ইচ্ছা প্রকাশ করেন।

নিউইয়র্কের ওই বৈঠকে টিকটক ও এক্স নিয়ে খোলাখুলি কথা বলেন ইসরাইলি প্রধানমন্ত্রী। টিকটক নিয়ে তিনি বলেন, ‘সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ক্রয় যেটা এই মুহূর্তে চলছে সেটা হলো টিকটক। আমি আশা করি এটা ভালোভাবে শেষ হবে। কারণ এর ওপর নিয়ন্ত্রণ তাৎপর্যপূর্ণ হতে পারে।
নেতানিয়াহু এক্স-এর কথাও উল্লেখ করেন। বলেন, ‘আমাদের ইলনের (ইলন মাস্ক) সাথে কথা বলতে হবে। তিনি আমাদের শত্রু নয়, একজন বন্ধু।’

তিনি দাবি করেন, যদি টিকটক ও এক্স-এর ওপর প্রভাব নিশ্চিত করা যায়, তাহলে ইসরাইল ‘অনেক কিছু পাবে’।

টিকটকের যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক কার্যক্রম বিক্রির উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। গত বৃহস্পতিবার (২৫ সেপ্টেম্বর) মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প এই মর্মে একটি নির্বাহী আদেশে স্বাক্ষর করে এ–সংক্রান্ত পরিকল্পনার কথা জানান। নির্বাহী আদেশে বলা হয়েছে, যুক্তরাষ্ট্রসহ বিশ্বের বিভিন্ন বিনিয়োগকারীদের কাছে টিকটক বিক্রি করা হবে।

এরপর মার্কিন ভাইস প্রেসিডেন্ট জেডি ভ্যান্স জানান, চীন থেকে যুক্তরাষ্ট্রের মালিকানায় আসার পর টিকটকের মূল্য নির্ধারণ করা হবে ১৪ বিলিয়ন ডলার (১ হাজার ৪০০ কোটি)। যদিও বিশ্লেষকেরা যেমনটি ধারণা করছিলেন, তার থেকে এই মূল্য বেশ কম।

টিকটক বিক্রির লক্ষ্যে একটি আইন কার্যকরের সময় ২০ জানুয়ারি পর্যন্ত পিছিয়ে দেয়া হয়েছে বলে জানিয়েছেন ট্রাম্প। ওই আইন অনুযায়ী, চীনা মালিকেরা টিকটক বিক্রি নিয়ে আপত্তি জানালে প্ল্যাটফর্মটি নিষিদ্ধ করা হবে। এরই মধ্যে টিকটকের যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক কার্যক্রমকে এর বৈশ্বিক প্ল্যাটফর্ম থেকে আলাদা করা, বিনিয়োগকারী সংগ্রহ করা এবং চীন সরকারের অনুমোদন পাওয়ার চেষ্টা চলবে।

টিকটক বিক্রির পরিকল্পনায় চীনের প্রেসিডেন্ট শি জিনপিংয়ের অনুমোদনের ইঙ্গিত দিয়েছেন বলে দাবি করেছেন ট্রাম্প। তিনি বলেন, ‘আমি প্রেসিডেন্ট সির সঙ্গে কথা বলেছিলাম। আমাদের মধ্যে ভালো আলোচনা হয়েছিল। আমরা কী করছি, তা তাকে জানিয়েছিলাম। তিনি এই পরিকল্পনা এগিয়ে নিতে বলেছিলেন।’

অপরদিকে গত শুক্রবার এক সংবাদ সম্মেলনে চীনের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র গুও জিয়াকুন বলেন, ‘আমরা আশা করি, যুক্তরাষ্ট্রে যেসব চীনা প্রতিষ্ঠান বিনিয়োগ করছে, তাদের জন্য মার্কিন সরকার একটি উন্মুক্ত, ন্যায়সঙ্গত ও বৈষম্যহীন ব্যবসায়িক পরিবেশ নিশ্চিত করবে।’ তবে ট্রাম্পের পরিকল্পনা নিয়ে তাৎক্ষণিকভাবে কোনো মন্তব্য করেনি টিকটক।

যুক্তরাষ্ট্রে টিকটকের ১৭ কোটি ব্যবহারকারী রয়েছেন। গত বছর যুক্তরাষ্ট্রে প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে এই প্ল্যাটফর্ম তাকে জয় পেতে সহায়তা করেছিল বলে উল্লেখ করেছেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট। তার নিজের ব্যক্তিগত টিকটক অ্যাকাউন্টে দেড় কোটি অনুসারী রয়েছে। এ সবকিছু যুক্তরাষ্ট্রের নিয়ন্ত্রণে পরিচালনা করতে চান ট্রাম্প।

টিকটকের ক্রেতা কে হতে পারে, তারও একটি ধারণা দিয়েছেন ট্রাম্প। তিনি বলেন, প্রযুক্তি প্রতিষ্ঠান ডেল টেকনোলজিসের প্রধান নির্বাহী রুপার্ট মারডক সম্ভাব্য চার থেকে পাঁচজন বিনিয়োগকারীর একজন হতে পারেন। মারডক ফক্স নিউজের মালিক প্রতিষ্ঠান ফক্স কর্প এবং সংবাদপত্র প্রকাশক নিউজ কর্পের ইমেরিটাস চেয়ারম্যান। দ্য গার্ডিয়ান জানিয়েছে, আবুধাবির রাজপরিবার টিকটকের যুক্তরাষ্ট্রের ব্যবসায় অংশীদার হতে যাচ্ছে।

তথ্যসূত্র: আনাদোলু এজেন্সি, রয়টার্স ও দ্য গার্ডিয়ান 

এমআর/টিকে 


Share this news on:

সর্বশেষ

img
জ্যাকি চ্যানের মৃত্যু নিয়ে ভুয়া গুজব, ভক্তদের আতঙ্ক Nov 13, 2025
img
জুলাই বিপ্লবকে স্বীকৃতি দেওয়া অস্বীকারটা করলো কে?: জিল্লুর রহমান Nov 13, 2025
img
সরকারে শাটডাউন অবসানে মার্কিন কংগ্রেসে বিল পাস Nov 13, 2025
img
শুভ জন্মদিন কথার জাদুকর Nov 13, 2025
img
রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে নির্বাচন কমিশনের সংলাপ শুরু হচ্ছে আজ Nov 13, 2025
img
দীর্ঘ আট মাস পর মসজিদুল হারামের ইমামতিতে ফিরলেন শাইখ ড. ফয়সাল Nov 13, 2025
img
নিখুঁত মুহূর্তের অপেক্ষা নয়, আজ থেকেই শুরু করুন : শেফালী শাহ Nov 13, 2025
img
বগুড়ায় যৌথবাহিনীর অভিযানে বিপুল পরিমাণ মাদক জব্দ Nov 13, 2025
img
রাজপথের আওয়ামী লীগ অধিক শক্তিশালী ও জনপ্রিয় : রিচি সোলায়মান Nov 13, 2025
img
নতুন প্রজন্মকে প্রেরণা দিলেন প্রেম চোপড়া Nov 13, 2025
img
কাজ মানসিক অফিসের মত, ঘরেই শান্তি: মনোজ বাজপেয়ী Nov 13, 2025
img
‘ভিলেন না থাকলে হিরোর কোনো দাম নেই’ - অমরিশ পুরী Nov 13, 2025
img
টাকা নয়, সততাই সাফল্যের আসল শক্তি: পঙ্কজ ত্রিপাঠী Nov 13, 2025
img
দিল্লির গাড়ি বিস্ফোরণ ঘটনা ‘সন্ত্রাসী হামলা’ কি না স্পষ্ট করলো ভারত Nov 13, 2025
img
হিট হলে আমি জিনিয়াস, ফ্লপ হলে কিছুই জানি না: দুলকার সালমান Nov 13, 2025
img
আলভারেজকে ঘিরে দুই ক্লাবের দ্বন্দ্ব, নতুন সিদ্ধান্তে আতলেতিকো Nov 13, 2025
img
খ্যাতির চেয়ে মানুষের মুখে হাসি ফোটানোই পালাক মুছালের জীবনের সবচেয়ে বড় অর্জন! Nov 13, 2025
img
হাসিনার বিরুদ্ধে রায়ের তারিখ জানানো হবে আজ Nov 13, 2025
img
সাবেক মহিলা ভাইস চেয়ারম্যানসহ চারজন আটক Nov 13, 2025
img
মিসরে আন্তর্জাতিক কোরআন প্রতিযোগিতায় প্রথম বাংলাদেশি তরুণী Nov 13, 2025