পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী ও সেনাপ্রধানের প্রশংসায় পঞ্চমুখ ট্রাম্প

গাজা যুদ্ধ সমাপ্তির লক্ষ্যে প্রস্তাবিত শান্তি পরিকল্পনায় পাকিস্তানের পূর্ণ সমর্থনের প্রশংসা করেছেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। হোয়াইট হাউসে এক ব্রিফিংয়ে তিনি প্রধানমন্ত্রী শেহবাজ শরিফ ও সেনাপ্রধান ফিল্ড মার্শাল আসিম মুনিরকে “অসাধারণ মানুষ” হিসেবেও আখ্যা দেন।

মঙ্গলবার (৩০ সেপ্টেম্বর) এক প্রতিবেদনে এই তথ্য জানিয়েছে ভারতীয় সংবাদমাধ্যম এনডিটিভি।

সংবাদমাধ্যমটি বলছে, মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প গাজা শান্তি পরিকল্পনায় সমর্থনের জন্য পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী শেহবাজ শরিফ এবং দেশটির সেনাপ্রধান ফিল্ড মার্শাল আসিম মুনিরের প্রশংসা করেছেন। সোমবার হোয়াইট হাউসে এক ব্রিফিংয়ে ট্রাম্প তাদেরকে “অসাধারণ” মানুষ আখ্যা দিয়ে বলেন, ওয়াশিংটনের প্রস্তাবিত ২০ দফা পরিকল্পনার শুরু থেকেই ইসলামাবাদ পাশে ছিল।

ট্রাম্প বলেন, “পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী ও ফিল্ড মার্শাল শুরু থেকেই আমাদের সঙ্গে ছিলেন। তারা অসাধারণ। তারা এখন একটি বিবৃতি দিয়েছে যেখানে তারা এই চুক্তির প্রতি পূর্ণ আস্থা প্রকাশ করেছে। তারা শতভাগ সমর্থন জানিয়েছে এবং পুরোপুরি এই পরিকল্পনার পক্ষে।”

এ সময় তিনি গাজা যুদ্ধের অবসানে প্রস্তাবিত পরিকল্পনায় সমর্থন দেওয়ার জন্য বিভিন্ন মুসলিম ও আরব দেশের নেতাদের প্রতিও কৃতজ্ঞতা জানান।

ট্রাম্প বলেন, “আমি বহু আরব ও মুসলিম দেশের নেতাদের ধন্যবাদ জানাতে চাই তাদের অসাধারণ সহযোগিতার জন্য... আমার সৌদি আরব, কাতারের আমির, সংযুক্ত আরব আমিরাত, জর্ডানের বাদশাহ, তুরস্কের প্রেসিডেন্ট এরদোয়ান এবং ইন্দোনেশিয়ার প্রেসিডেন্টের সঙ্গে বৈঠক ও আলোচনা হয়েছে। আমরা একসঙ্গেই ছিলাম।”

সোমবার ঘোষিত ট্রাম্পের ‘গাজা সংঘাত সমাপ্তির সার্বিক পরিকল্পনা’ অনুযায়ী, গাজাকে সন্ত্রাসমুক্ত, নিরস্ত্রীকরণ ও প্রতিবেশীদের জন্য হুমকি সৃষ্টি করে না এমন একটি অঞ্চল হিসেবে গড়ে তোলা হবে এবং এর পুনর্গঠন করা হবে।

পরিকল্পনায় বলা হয়, উভয় পক্ষ প্রস্তাবে সম্মত হলে সঙ্গে সঙ্গে যুদ্ধ বন্ধ হবে। ইসরায়েলি বাহিনী নির্ধারিত সীমারেখায় সরে যাবে এবং বন্দি বিনিময়ের প্রস্তুতি শুরু হবে। এই সময় সব ধরনের সামরিক অভিযান- যেমন বিমান হামলা ও গোলাবর্ষণ- বন্ধ থাকবে এবং যুদ্ধের লাইন অপরিবর্তিত থাকবে।

চুক্তির শর্ত অনুযায়ী, ইসরায়েলকে ৭২ ঘণ্টার মধ্যে সব বন্দিকে (জীবিত বা মৃত) ফিরিয়ে দিতে হবে। বন্দিদের মুক্তির পর ইসরায়েল যাবজ্জীবন দণ্ডপ্রাপ্ত ২৫০ বন্দি এবং ২০২৩ সালের ৭ অক্টোবরের পর আটককৃত ১৭০০ গাজাবাসী- যার মধ্যে নারী ও শিশুরাও রয়েছে- মুক্তি দেবে।

এছাড়া প্রতিটি ইসরায়েলি বন্দির মৃতদেহ ফেরত দিলে ইসরায়েল ১৫ জন মৃত ফিলিস্তিনির মরদেহ ফেরত দেবে।

এদিকে এই প্রস্তাব ঘোষণার পর সৌদি আরব, জর্ডান, সংযুক্ত আরব আমিরাত, ইন্দোনেশিয়া, পাকিস্তান, তুরস্ক, কাতার ও মিসরের পররাষ্ট্রমন্ত্রীরা এক যৌথ বিবৃতিতে ট্রাম্পের “নেতৃত্ব” ও গাজা যুদ্ধ শেষ করার “সত্যিকার প্রয়াসকে” স্বাগত জানান।

এর আগে গত বৃহস্পতিবার ওভাল অফিসে শেহবাজ শরিফ ও আসিম মুনিরের সঙ্গে বৈঠক করেন ডোনাল্ড ট্রাম্প। সেই বৈঠকের কয়েকদিন পরই ট্রাম্প এই মন্তব্য করলেন। এছাড়া ওই বৈঠকের আগে যুক্তরাষ্ট্র ও পাকিস্তানের মধ্যে একটি বাণিজ্য চুক্তি হয়। এর কয়েক দিন আগে নিউইয়র্কে জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদের ফাঁকে ট্রাম্প শেহবাজ শরিফের সঙ্গে সংক্ষিপ্ত বৈঠক করেছিলেন এবং সেখানে আরবসহ বিভিন্ন দেশের নেতারাও উপস্থিত ছিলেন।

চলতি বছরের জানুয়ারিতে হোয়াইট হাউসে ফেরার পর থেকে ট্রাম্পের অধীনে ইসলামাবাদ-ওয়াশিংটন সম্পর্ক উষ্ণ হতে শুরু করেছে। গত মাসে যুক্তরাষ্ট্র পাকিস্তানের গুরুত্বপূর্ণ খনিজ ও রেয়ার আর্থ উপাদান সরবরাহে একটি চুক্তি স্বাক্ষর করে। এছাড়া একটি মার্কিন কোম্পানি পাকিস্তানের খনিজ খাতে ৫০ কোটি ডলার বিনিয়োগ করছে। এর আগে গত জুলাই মাসে ট্রাম্প পাকিস্তানের বিশাল তেলসম্পদ উন্নয়নে সহায়তার প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন।

অন্যদিকে বাণিজ্য চুক্তি অনুযায়ী, পাকিস্তান থেকে যুক্তরাষ্ট্রে পণ্য আমদানিতে ১৯ শতাংশ শুল্ক আরোপ হবে এবং ওয়াশিংটন পাকিস্তানের তেলসম্পদ উন্নয়নে সহযোগিতা করবে। ২০২৪ সালে যুক্তরাষ্ট্র-পাকিস্তানের পণ্য ও সেবা বাণিজ্যের পরিমাণ দাঁড়িয়েছে আনুমানিক ১০.১ বিলিয়ন ডলার, যা ২০২৩ সালের তুলনায় ৬.৩ শতাংশ (৫২৩ মিলিয়ন ডলার) বেশি।

কেএন/টিএ

Share this news on:

সর্বশেষ

img
বাংলাদেশের চলচ্চিত্র আমাকে ঠিকমতো ব্যবহার করতে পারেনি : বাপ্পী Sep 30, 2025
img
কালো শেরোয়ানিতে নজর কাড়লেন ঐশ্বরিয়া Sep 30, 2025
img

সাক্ষাৎকারে প্রধান উপদেষ্টা

এমন মানুষও আছেন যারা বলছেন ৫ বছর থাকুন, ১০ বছর থাকুন ৫০ বছর থাকুন Sep 30, 2025
img
দেশ-বিদেশি ষড়যন্ত্র তীব্রভাবে ক্রিয়াশীল হচ্ছে : রিজভী Sep 30, 2025
img
শাকিব-হানিয়া প্রসঙ্গে শিল্পীদের মূল্যায়ন নিয়ে ক্ষোভ প্রকাশ করলেন সেমন্তী Sep 30, 2025
img
যীশুকে অভিনয় ছেড়ে দিতে বারণ করেছিলেন অমিতাভ Sep 30, 2025
img
বর্তমানে খাগড়াছড়ির পরিস্থিতি শান্ত : স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা Sep 30, 2025
img
১৭ দিন ধরে নিখোঁজ ১৮ জেলে Sep 30, 2025
img
দেশে চাঁদাবাজি বেড়ে গেছে, রেটও বেড়েছে : মোস্তফা ফিরোজ Sep 30, 2025
img
এনসিএল টি-টোয়েন্টিতে আর খেলা হচ্ছে না মাহমুদউল্লাহ’র Sep 30, 2025
img
শিক্ষকরা অনৈতিক কাজ করতে বাধ্য হয়েছেন : এ্যানি Sep 30, 2025
img
কানাডা থেকে সুখবর পেলেন সাকিব Sep 30, 2025
img
সীমান্তে অপ্রীতিকর পরিস্থিতি ঠেকাতে সর্বোচ্চ সতর্ক বিজিবি: মহাপরিচালক Sep 30, 2025
img
ট্রাইব্যুনালে শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে সাক্ষ্যগ্রহণ শেষ, জেরা আগামী ৬ অক্টোবর Sep 30, 2025
img
মন্দির থেকে পুলিশের ব্যাগ চুরি, ওসি প্রত্যাহার ও ৭ পুলিশ বরখাস্ত Sep 30, 2025
img
নূরুল মজিদের হাতকড়া পরানো অবস্থায় মৃত্যু, এ কেমন অমানবিকতা : মান্না Sep 30, 2025
img
এনটিআরসিএ পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হতে এমসিকিউতে ৮০ নম্বর বাধ্যতামূলক Sep 30, 2025
img
আপনারা হয়তো আমার ফ্যামিলি সম্পর্কে জানেন না: সাদিয়া জাহান প্রভা Sep 30, 2025
img
গাজায় যুদ্ধবিরতি ও অন্তর্বর্তী সরকার প্রস্তাব: ট্রাম্পের পরিকল্পনাকে ঘিরে প্রশ্ন Sep 30, 2025
img
ডেঙ্গুতে একদিনে প্রাণ গেল ৩ জনের, হাসপাতালে ভর্তি ৫৫৬ Sep 30, 2025