গাজায় যুদ্ধবিরতির জন্য মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের প্রস্তাবিত ২০ দফা পরিকল্পনায় অনেক অস্পষ্ট শর্ত রয়েছে, যা ফিলিস্তিন ও পুরো অঞ্চলের ভবিষ্যৎ নির্ধারক হয়ে উঠতে পারে।
হোয়াইট হাউসে সোমবার ইসরায়েলি প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহুর পাশে দাঁড়িয়ে পরিকল্পনাটি উপস্থাপন করেন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। তিনি একে ‘ঐতিহাসিক’ বলে আখ্যা দেন। তবে বাস্তবে পরিকল্পনার কিছু ধাপ কিভাবে কার্যকর হবে, সেটিই এর প্রয়োগে সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ হয়ে উঠতে পারে।
পাঁচটি অমিমাংসিত প্রশ্ন ঘিরে চলছে জল্পনা।
গাজা কিভাবে শাসিত হবে?
পরিকল্পনায় বলা হয়েছে, গাজার প্রশাসনিক দায়িত্ব নেবে ‘অস্থায়ী টেকনোক্রেটিক, রাজনৈতিকভাবে নিরপেক্ষ এক ফিলিস্তিনি কমিটি’। কিন্তু এই কমিটি কীভাবে গঠিত হবে বা কারা সদস্য বাছাই করবে, তা বলা হয়নি।
এ ছাড়া পরিকল্পনায় উল্লেখ আছে, ট্রাম্প ও যুক্তরাজ্যের সাবেক প্রধানমন্ত্রী টনি ব্লেয়ার একটি ‘শান্তি বোর্ডকে’ নেতৃত্ব দেবেন, যা ওই কমিটির তত্ত্বাবধান করবে।
তবে বোর্ড ও কমিটির সম্পর্কের ধরন কিংবা দৈনন্দিন সিদ্ধান্ত নেওয়ার ক্ষমতা কার হাতে থাকবে সে বিষয়ে কোনো ব্যাখ্যা নেই।
ফিলিস্তিনি কর্তৃপক্ষ যুক্ত হবে কি?
ট্রাম্পের পরিকল্পনায় বলা হয়েছে, ফিলিস্তিনি কর্তৃপক্ষের সংস্কার সম্পন্ন হওয়া পর্যন্ত এবং তারা গাজার দায়িত্ব নিরাপদে ও কার্যকরভাবে নিতে সক্ষম না হওয়া পর্যন্ত অস্থায়ী কর্তৃপক্ষ নিয়ন্ত্রণে থাকবে।
কিন্তু ফিলিস্তিনি কর্তৃপক্ষ যে সংস্কার শেষ করেছে সেটি কে নির্ধারণ করবে, কিংবা কোন মানদণ্ডে তাদের ‘প্রস্তুত’ হিসেবে ধরা হবে তা স্পষ্ট নয়। কোনো সময়সীমাও নির্ধারণ করা হয়নি, শুধু অস্পষ্ট ঘোষণা দেওয়া হয়েছে।
এ ছাড়া প্রস্তাবে গাজাকে ফিলিস্তিনের অংশ হিসেবে নয়, বরং একটি স্বতন্ত্র সত্তা হিসেবে বিবেচনা করা হয়েছে যা পরবর্তীতে ফিলিস্তিনের অন্যান্য দখলকৃত অঞ্চলের সঙ্গে একীভূত হতে হবে।
প্রস্তাবে সম্মত হওয়া নেতানিয়াহু স্পষ্ট জানিয়ে দিয়েছেন, গাজায় ফিলিস্তিনি কর্তৃপক্ষ ফিরতে পারবে না। তিনি বলেন, ‘হামাস বা ফিলিস্তিনি কর্তৃপক্ষ গাজা প্রশাসন করবে না।’
আন্তর্জাতিক বাহিনী গঠিত হবে কিভাবে?
প্রস্তাবে বলা হয়েছে, গাজার নিরাপত্তা দেবে ‘অস্থায়ী আন্তর্জাতিক স্থিতিশীলতা বাহিনী’। কিন্তু এ বাহিনী কোথা থেকে আসবে বা তাদের এখতিয়ার কী হবে তা অনিশ্চিত।
কোন দেশ সেনা পাঠাতে আগ্রহী হবে, আর কোনগুলো গ্রহণযোগ্য হবে এ ব্যাপারেও কোনো ব্যাখ্যা নেই।
এ ছাড়া সম্ভাব্য শান্তিরক্ষীদের দায়িত্ব ও ভূমিকা নিয়েও কিছু বলা হয়নি। তাদের কি সেনা, পুলিশের ভূমিকা নিতে হবে নাকি শুধু পর্যবেক্ষকের? তাদের কি হামাসের বিরুদ্ধে লড়াই করতে হবে? তারা কি ইসরায়েলি সেনাদের বিরুদ্ধেও ফিলিস্তিনিদের রক্ষা করতে লড়তে পারবে?
৪. ইসরায়েল কখন প্রত্যাহার হবে?
প্রস্তাবে বলা হয়েছে, ‘মানদণ্ড, মাইলফলক ও নিরস্ত্রীকরণের সঙ্গে যুক্ত সময়সীমার ভিত্তিতে’ ইসরায়েল গাজা থেকে সরে যাবে। কিন্তু কবে বা কী শর্তে ইসরায়েল সরে যাবে, তার কোনো নির্দিষ্ট সময়সূচি দেওয়া হয়নি। উল্টো এতে বলা হয়েছে, ইসরায়েল গাজায় একটি ‘নিরাপত্তা বেষ্টনী’ বজায় রাখবে যতক্ষণ না অঞ্চলটি ‘সন্ত্রাসী হুমকি থেকে যথেষ্ট নিরাপদ’ হয়।
তবে এই শর্ত পূর্ণ হয়েছে কি না তা শেষ পর্যন্ত কে নির্ধারণ করবে, সে প্রশ্নও রয়ে গেছে।
৫. ফিলিস্তিনি রাষ্ট্র কি আসবে?
সংবাদ সম্মেলনে সোমবার ট্রাম্প বলেন, তার কয়েকজন মিত্র ‘হঠকারীভাবে ফিলিস্তিন রাষ্ট্রকে স্বীকৃতি দিয়েছে… কিন্তু আসলে তারা শুধু চলমান পরিস্থিতিতে ক্লান্ত হয়ে এ কাজ করছে।’
প্রস্তাবে ফিলিস্তিনি রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার প্রসঙ্গ আছে, কিন্তু তা শর্ত আর অনিশ্চয়তার ঘন দেয়ালের আড়ালে।
প্রস্তাবে বলা হয়েছে, ‘গাজা পুনর্গঠন অগ্রসর হলে এবং ফিলিস্তিনি কর্তৃপক্ষের সংস্কার কর্মসূচি নিষ্ঠার সঙ্গে সম্পন্ন হলে, তখন হয়তো ফিলিস্তিনিদের আত্মনিয়ন্ত্রণ ও রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার জন্য একটি বিশ্বাসযোগ্য পথ তৈরি হতে পারে, যা আমরা ফিলিস্তিনি জনগণের আকাঙ্ক্ষা বলে স্বীকার করি।’
অর্থাৎ গাজার উন্নয়ন ও ফিলিস্তিনি কর্তৃপক্ষের সংস্কারকে শর্ত হিসেবে রাখা হয়েছে। এমনকি সেগুলো পূরণ হলেও রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার আলোচনা ‘হতে পারে’ কোনো নিশ্চয়তা নেই।
এ ছাড়া প্রস্তাবে ফিলিস্তিনিদের রাষ্ট্রের অধিকার স্বীকৃতি দেওয়া হয়নি, বরং রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠাকে তাদের এক ধরনের ‘আকাঙ্ক্ষা’ হিসেবে উল্লেখ করা হয়েছে।
এবি/টিকে