ঢাকা-চট্টগ্রাম ও ঢাকা-সিলেট মহাসড়কে তীব্র যানজটের সৃষ্টি হয়েছে। বুধবার (১ অক্টোবর) দিনভর এই দুই মহাসড়কে ভোগান্তি পোহাতে হচ্ছে যাত্রী ও চালকরা। মাত্র ২০ কিলোমিটার পথ পাড়ি দিতে সময় লাগছে প্রায় সাড়ে ৫ ঘণ্টা। দীর্ঘ যানজটের কারণে যাত্রী, ব্যবসায়ী ও স্থানীয়দের জীবনযাত্রা ব্যাহত হচ্ছে। এই পরিস্থিতির জন্য যাত্রী ও ব্যবসায়ীরা হাইওয়ে পুলিশের কার্যক্রমের অভাব এবং সড়কের সংকটজনিত সীমাবদ্ধতাকে দায়ী করছেন।
বুধবার (১ অক্টোবর) সকাল ১০টা থেকে ঢাকা-চট্টগ্রাম ও ঢাকা-সিলেট মহাসড়কের বিভিন্ন অংশে যান চলাচল প্রায় স্থবির হয়ে পড়েছে। বিকেল সাড়ে ৪টায় শেষ খবর পাওয়া পর্যন্ত ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের সাইনবোর্ড থেকে আশারির চর পর্যন্ত দীর্ঘ ২০ কিলোমিটার এবং ঢাকা সিলেট মহাসড়কের কাঁচপুর থেকে রূপগঞ্জ পর্যন্ত ৫ কিলোমিটার যানজট রয়েছে।
সরেজমিনে দেখা যায়, চিটাগাং রোডের কাউন্টারগুলোতে এখনো যাত্রীদের উপচে পড়া ভিড়। যানজট ও বাস সংকটের কারণে অনেক যাত্রীকে বাসের জন্য অপেক্ষা করতে দেখা গেছে।
যাত্রীদের অভিযোগ, হাইওয়ে পুলিশের পর্যাপ্ত উপস্থিতি নেই। ফলে গাড়ি চলাচল নিয়ন্ত্রণ করতে ব্যর্থ হয়েছে পুলিশ। নারায়ণগঞ্জ থেকে চট্টগ্রামের উদ্দেশ্যে যাত্রা করা ব্যবসায়ী রফিকুল ইসলাম বলেন, সকাল ৯টা থেকে আমরা এই সড়কে আটকা। মাত্র ২০ কিলোমিটার পথ পাড়ি দিতে বিকেল ৩টা হয়ে গেছে। হাইওয়ে পুলিশ কার্যকরভাবে দায়িত্ব পালন করছে না।
আফরোজা নামে এক যাত্রী বলেন, বেলা ১১টার দিকে সিলেটের উদ্দেশ্যে ঢাকা থেকে গাড়ি ছেড়েছে, এখন ৩টা বাজে, আমি কাঁচপুর পার হতে পারিনি। সড়কে ছোট ছোট গাড়ি, ট্রাক সব একত্র হয়ে বিশাল যানজট তৈরি করেছে। কেউ নেই যিনি পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণ করবেন।
কাঁচপুর হাইওয়ে থানা পুলিশের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আব্দুল কাদের জিলানী বলেন, বৈরী আবহাওয়া ও ছুটির কারণে মহাসড়কে স্বাভাবিক সময়ের তুলনায় কয়েক গুণ বেশি গাড়ির চাপ বেড়েছে। এতে যানবাহনের গতি কমে গিয়ে দীর্ঘ যানজট তৈরি হয়েছে। এখন যানবাহন চলাচল করছে। ধীরে ধীরে যানজট স্বাভাবিক অবস্থায় কমে আসবে।
শিমরাইল হাইওয়ে পুলিশের ইনচার্জ টিআই জুলহাস উদ্দিন জানান, সোনারগাঁয়ের দড়িকান্দিসহ দুটি স্থানে গাড়ি বিকল হওয়ায় যানজট ছড়িয়ে পড়ে। এ যানজট মূলত সাইনবোর্ড থেকে টোলপ্লাজা পর্যন্ত ছড়িয়ে পড়েছে। ভোরেও কিছুটা যানজট ছিল, তবে সকাল ১০টার সময় তীব্র যানজট ছিল। এখন যানবাহন চলাচল পুনরায় শুরু হয়েছে।
যানজটের কারণে যাত্রীদের ভোগান্তি মারাত্মক। শিশু ও বৃদ্ধদের জন্য এটি আরও কষ্টদায়ক হয়ে দাঁড়িয়েছে। অনেক যাত্রী জানান, খাবার ও পানি শেষ হয়ে গেছে।
চট্টগ্রামগামী বাসের যাত্রী সেলিম আহমেদ বলেন, আমরা বাসে বসে প্রায় ৫ ঘণ্টা পার করে দিয়েছি। খাওয়ার জন্য কিছু নেই। হাইওয়ে পুলিশ কোথায় ছিল, কেউ জানে না।
যানজট শুধু যাত্রীদের জন্য নয়, ব্যবসায়ীদের জন্যও সমস্যা তৈরি করেছে। মহাসড়কের পাশে থাকা দোকানদার এবং হকাররা জানান, দীর্ঘ সময় গাড়ি আটকা থাকায় তাদের ব্যবসা ব্যাহত হচ্ছে।
কাউন্টার মালিকরা বলেন, ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের ট্রাফিক ব্যবস্থা এখনো পর্যাপ্ত নয়। সড়কের সম্প্রসারণ, পর্যাপ্ত ট্রাফিক নিয়ন্ত্রণ এবং প্রযুক্তি ব্যবহার ছাড়া দীর্ঘ যানজট এড়ানো সম্ভব নয়। দেশের লাইফ লাইন খ্যাত এই সড়কে মিনিটে প্রায় ৫০টি গাড়ি চলাচল করে। সামান্য সময়ের জন্য রাস্তা বন্ধ হলে গাড়ির দীর্ঘ সারি তৈরি হয়।
নোয়াখালীগামী যাত্রী মারুফ খন্দকার হাইওয়ে পুলিশ ও সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের প্রতি ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন। তিনি বলেন, কোনো জরুরি অবস্থায় আমরা কীভাবে চলব? শিশুদের খাবার শেষ, অনেকের ওষুধ আছে। এই ভোগান্তি গ্রহণযোগ্য নয়।
আইকে/টিএ