গাজায় মানবিক সহায়তা পৌঁছানোর লক্ষ্যে শুরু হয়েছিল আন্তর্জাতিক উদ্যোগ ‘গ্লোবাল সুমুদ ফ্লোটিলা’। একাধিক দেশ থেকে আগত মানবাধিকার কর্মী, ত্রাণকর্মী ও স্বেচ্ছাসেবীরা সমুদ্রপথে একত্র হয়ে অবরুদ্ধ ফিলিস্তিনিদের জন্য খাদ্য, ওষুধ ও জরুরি সরঞ্জাম নিয়ে যাত্রা শুরু করেছিলেন। তবে এক মাসব্যাপী এই অভিযাত্রা শেষ পর্যন্ত ইসরায়েলি বাধা, আটক অভিযান এবং নিরাপত্তা ঝুঁকির কারণে থেমে গেছে।
গাজা উপত্যকায় দখলদার ইসরায়েলের নৌ অবরোধ ভাঙা এবং গাজার ক্ষুধার্ত মানুষের কাছে ত্রাণ পৌঁছে দিতে প্রায় ৪৫টি জাহাজে করে গাজার দিকে রওনা দিয়েছিলেন ৫০০ অধিকারকর্মী। তবে তাদের গাজায় যেতে দেয়নি ইসরায়েল। ফ্লোটিলার বেশিরভাগ নৌযান ইসরায়েলি দখলদার বাহিনী দ্বারা আটকে দেওয়া হয়। যাত্রীদের সঙ্গে যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে যায় এবং ধারণা করা হচ্ছে তারা সবাই বর্তমানে আটক অবস্থায় রয়েছেন।
আজ বৃহস্পতিবার (২ অক্টোবর) ইসরায়েলের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, গাজা অভিমুখী গ্লোবাল সুমুদ ফ্লোটিলার এই যাত্রা গাজায় পৌঁছানোর আগে শেষ হয়ে গেছে। এসব জাহাজ আটকাতে গিয়ে কোনো বড় ঘটনা ঘটেনি বলেও জানিয়েছে তারা।
এদিকে, বার্তাসংস্থা রয়টার্স আয়োজকদের বরাতে জানিয়েছে, ইসরায়েলি নৌ কমান্ডোরা এখন পর্যন্ত ৩৯টি জাহাজ আটক করেছে। কিন্তু একটি জাহাজ এখনও গাজার দিকে যাচ্ছে।
এর মধ্যেই আন্তর্জাতিক মহল উদ্বেগ প্রকাশ করেছে এবং আটককৃত মানবাধিকার কর্মীদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করার আহ্বান জানিয়েছে।
যুক্তরাজ্যভিত্তিক দাতব্য সংস্থা রিফিউজি বিরিয়ানি অ্যান্ড বানানাস–এর প্রতিষ্ঠাতা রুহি লরেন আখতার ছিলেন এ অভিযানের অন্যতম যাত্রী। তিনি সামাজিক মাধ্যমে জানান, তাদের নৌযানটি শেষ পর্যন্ত সাইপ্রাসে ফিরে যাওয়ার সিদ্ধান্ত নেয়। কারণ, জাহাজে থাকা কয়েকজন যাত্রী “উচ্চ ঝুঁকিতে” ছিলেন এবং আটক হওয়ার আশঙ্কা দেখা দিয়েছিল।
রুহি বলেন- “আমরা চাই আমাদের সহযাত্রীরা যারা ইতোমধ্যেই আটক হয়েছেন তাদের জন্য সোচ্চার হতে, আন্তর্জাতিক মহলে চাপ তৈরি করতে এবং গাজামুখী নৌযানগুলোর জন্য নিরাপদ করিডর নিশ্চিত করতে।”
যদিও ফ্লোটিলার প্রধান লক্ষ্য- গাজায় সরাসরি সহায়তা পৌঁছে দেওয়া- বাস্তবায়িত হয়নি, তবুও এই যাত্রা আন্তর্জাতিক মহলে ব্যাপক আলোড়ন সৃষ্টি করেছে। সংগঠকরা বলেন, “এটি কেবল একটি ত্রাণ মিশন নয়, বরং একটি বার্তা। গাজার অবরোধ আন্তর্জাতিক মানবাধিকারের সরাসরি লঙ্ঘন।”
ইউরোপীয় গ্রিন পার্টি ইতোমধ্যে ইসরায়েলের এই আটক অভিযানে তীব্র নিন্দা জানিয়েছে এবং একে “আন্তর্জাতিক আইন লঙ্ঘন” বলে অভিহিত করেছে। তারা জাতিসংঘ ও ইউরোপীয় ইউনিয়নসহ আন্তর্জাতিক সংস্থাগুলোর প্রতি আহ্বান জানিয়েছে আটক যাত্রীদের মুক্তি ও মানবিক সহায়তার নিশ্চয়তা দিতে।
উল্লেখ্য, ৩১ আগস্ট স্পেনের বার্সেলোনা থেকে গ্লোবাল সুমুদ ফ্লোটিলা যাত্রা শুরু করে। তার পরের ধাপে অন্যান্য নৌযানগুলি ৪ সেপ্টেম্বর তিউনিসিয়া ও সিসিলি থেকে যোগ দেয়।
কেএন/টিএ