দেশে মুক্তিযোদ্ধারা নিজেদের পরিচয় দিতে ভয় পান : মাসুদ কামাল

আওয়ামী লীগের উপদেষ্টা পরিষদের সদস্য ও ভোলা-১ আসনের সাবেক সংসদ সদস্য তোফায়েল আহমেদের মৃত্যু নিয়ে ধোঁয়াশা ও দেশের মূলধারার পত্রিকাগুলো এ নিয়ে সংবাদ প্রকাশ না করার অভিযোগ তুলে জ্যেষ্ঠ সাংবাদিক ও রাজনৈতিক বিশ্লেষক মাসুদ কামাল বলেছেন, তোফায়েল আহমেদ কোথায় আছেন? বেঁচে আছেন? না কি মরে গেছেন?- খবরটা নিয়ে কেন এত আলোচনা হচ্ছে? আলোচনাটা হচ্ছে এই কারণে- এর আগে গত এক সপ্তাহের মধ্যে সাবেক শিল্পমন্ত্রী নূরুল মজিদ মাহমুদ হুমায়ূন মারা গেছেন। উনার মৃত্যুটা কিভাবে হয়েছে, আপনারা সবাই দেখেছেন। সেটাও কিন্তু খুব একটা গুরুত্ব পায়নি। উনি একজন বীর মুক্তিযোদ্ধা ছিলেন।

এখন আমাদের দেশের বাস্তবতাটা এমন দাঁড়িয়েছে, ‘মুক্তিযোদ্ধা’ কথাটা বলতেও লোকে ভয় পায়। আমি যে মুক্তিযোদ্ধা ছিলাম, তাহলে কি আমি অপরাধ করেছি? যিনি আল বদর ছিলেন, তিনি বুক ফুলিয়ে বলেন, আমি আল বদর ছিলাম। কোনো সমস্যা নাই। কিন্তু যিনি মুক্তিযোদ্ধা ছিলেন, উনি ভয় পান।

যিনি রাজাকার ছিলেন, উনি বুক ফুলিয়ে বলেন, আমি রাজাকার ছিলাম। কিন্তু যিনি মুক্তিযোদ্ধার কমান্ডার ছিলেন, উনি বলতে ভয় পান, আমি মুক্তিযোদ্ধার কমান্ডার ছিলাম। এই বাস্তবতা এই দেশে কে তৈরি করেছে? দেশটা যারা স্বাধীন করল, তাদের ব্যাপারে এরকম নেগেটিভ কথাবার্তা বলার যে মানসিকতাটা- এটা কী করে দেশে তৈরি হলো? এই প্রশ্নের মুখোমুখি একদিন দায়িত্বপ্রাপ্ত যারা আছেন, তাদেরকে হতে হবে।

শনিবার (৪ অক্টোবর) ‘কথা’ নামের নিজের ইউটিউব চ্যানেলে প্রকাশিত এক ভিডিওতে এসব কথা বলেন তিনি। মাসুদ কামাল বলেন, নূরুল মজিদ মাহমুদ হুমায়ূনের বাড়ি নরসিংদী। উনি মারা গেছেন। উনি শিল্পমন্ত্রী ছিলেন। উনি কীভাবে মারা গেলেন? কেউ জিজ্ঞাসা করেছেন? মৃত্যুর সময় আমরা একটা ছবি দেখলাম, ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের বেডে, কোনো কেবিনে নয়। একটা অপরিচ্ছন্ন বিছানার উপর উনি পড়ে আছেন। পাশে একটা আধা-খাওয়া পানির বোতল এবং উনার হাতে হাতকড়া। যার হাতে হাতে হাতকড়া, তিনি মৃত। মৃত মানুষের হাতে হাতকড়া, কেউ দেখেছেন কখনো? এই জীবনে আমরা দেখলাম। উনার কী হয়েছিল? জানেন কেউ? উনি অসুস্থ হয়ে মারা গেছেন, কী রোগ হয়েছিল উনার? কেউ জানেন? জাস্ট এই সময় যে রোগটা হচ্ছে প্রচন্ডভাবে, ডেঙ্গু রোগ হয়েছিল।

তিনি বলেন, পৃথিবীর যেকোনো দেশে যখন ডেঙ্গু হয়, যে শহরগুলোতে ডেঙ্গু হয়েছে প্রচুর, কলকাতায় হয়েছে, সিঙ্গাপুরে একসময় ডেঙ্গু ছিল, ডেঙ্গুর জন্য মূলত দায়ী থাকে সেই দেশে, সেই শহরের যারা সিটি করপোরেশনের দায়িত্বপ্রাপ্ত ব্যক্তি, তারা। কারণ ডেঙ্গুটা হয় মশা দ্বারা এবং মশা যখন না মারেন, মশা যখন প্রচুর পরিমাণে ছড়িয়ে যায়, তখন ডেঙ্গু হয়। আমাদের ঢাকায় দুইটি সিটি করপোরেশন আছে, দুই সিটি করপোরেশনেই যারা মশা মারার দায়িত্বে আছেন, তারা মারেন না। দুই সিটি করপোরেশন স্থানীয় সরকারের অধীনে। একটাতে তো ইশরাক সাহেবকে মেয়র বানানো নিয়ে বিরাট ঝামেলা। দেবেন না।

 উনি উনার নিজের পছন্দের ব্যক্তিকে দেবেন। আরেক জায়গায় উনি চিঠি লিখে পাঠিয়েছেন যে উনি খুব ভালো মানুষ উনাকে দেওয়া হোক এবং দুই মেয়র এবং ভারপ্রাপ্ত প্রশাসকের পাল্লায় পড়ে ঢাকা শহরে ডেঙ্গু অতীতের যেকোনো সময়ের চেয়ে এখন বেশি। অন্যকোনো সরকার থাকলে হইচই হতো, তিনি ডেঙ্গুতে মারা গেছেন। রোগটা হওয়ার পর উনাকে ৩-৪ বার এই যে মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয় যেটা আছে আমাদের, যেটার আগে নাম ছিল বঙ্গবন্ধু মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়, এখন নাম হয়েছে বাংলাদেশ মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়, নাম পরিবর্তন হয়েছে, এখানে আনা হয়েছে, প্রতিবারই তাকে ফেরত পাঠানো হয়েছে।

তিনি আরো বলেন, একজন ডাক্তার একজন রোগীকে ফেরত পাঠাতে পারে, এটা এই ঘটনা না দেখলে কেউ বুঝত না। তাকে তিন-চারবার বিভিন্ন নাটকের মাধ্যমে (বিস্তারিত নাটকগুলো আমি জানি, এগুলো বলে আর আমি আপনাদেরকে ভাড়াক্রান্ত করতে চাই না। শুনেছি বিভিন্নভাবে।) ফেরত পাঠানো হয়েছে। উনি অসুস্থ হয়েছেন। সর্বশেষ উনাকে পাঠানো হয়েছে ঢাকা মেডিক্যালে এবং সেখানে উনার মৃত্যু হয়েছে। তার মানে উনি একজন গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তি নন। উনি একজন অগুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তি। সবই সত্য! গুরুত্বহীন, অগুরুত্বপূর্ণ, দোষী- এখনো তো সাজা হয়নি, বিচারও হয়নি। 

ধরে নিলাম দোষী, ধরে নিলাম উনি মৃত্যুদণ্ড পাওয়ার মতো দোষ করেছেন, সবই সত্য ধরে নিলাম, তাকেও কি আপনি এভাবে অবহেলায় মারতে পারেন? আমরা মনে করি, পৃথিবীর সব দেশেই আপনি যখন মুক্ত থাকবেন, তখন আপনার দায়-দায়িত্ব আপনার কাছে। আপনার অসুখ-বিসুখ হলে আপনার ফ্যামিলির উপর দায়িত্ব আপনাকে টিকিয়ে রাখা। যখন আপনি সরকারের কাস্টডিতে থাকবেন, তখন আপনাকে টিকিয়ে রাখার দায়িত্ব সরকারের। সরকার কি উনার ক্ষেত্রে সে দায়িত্বটা পালন করতে পেরেছেন? পারেননি। সরকার প্রমাণ করার চেষ্টা করেছে, উনি একজন ঘৃণিত ব্যক্তি।


ইউটি/টিএ

Share this news on:

সর্বশেষ

img
জীবনের দুঃসময় নিয়ে মুখ খুললেন অভিনেত্রী জাহ্নবী Nov 20, 2025
img
রাবির সাবেক ছাত্রলীগ নেতাসহ ২ শিক্ষার্থীকে তুলে নিয়ে মারধর Nov 20, 2025
img
রাজধানীর সংসদ ভবন এলাকায় বিচারকের মোবাইল ছিনতাই Nov 20, 2025
img
৪ দিনের সফরে আজ ঢাকায় আসছেন কমনওয়েলথ মহাসচিব Nov 20, 2025
img
আগামী সংসদ নির্বাচনে তরুণরা বেশি গুরুত্ব পাবে : চাঁদপুরের ডিসি Nov 20, 2025
img
বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের ৬১তম জন্মদিন আজ Nov 20, 2025
img
নিষিদ্ধ ছাত্রলীগের সহসভাপতি গ্রেপ্তার Nov 20, 2025
img
সুষ্ঠু নির্বাচন নিয়ে জনগণের মধ্যে শঙ্কা রয়েছে: ড. দেবপ্রিয় ভট্টাচার্য Nov 20, 2025
img
হামজার আগমন বাংলাদেশকে অনেকদূর নিয়ে যাবে বলে বিশ্বাস আমিনুলের Nov 20, 2025
img

মোরসালিন

‘গোল আমার নয়, শতভাগ অবদান রাকিব ভাইয়ের’ Nov 20, 2025
img
শ্রীলঙ্কার কাছে হার, গ্রুপ চ্যাম্পিয়ন হয়ে সেমিতে বাংলাদেশ Nov 20, 2025
img
প্রত্যেক জেলায় পৃথক জেলা ক্রিকেট সংস্থা গড়ে তোলা হবে : আসিফ আকবর Nov 20, 2025
img
সৌদি যুবরাজের নৈশভোজে হোয়াইট হাউজে রোনালদো, প্রশংসা করলেন ট্রাম্প Nov 20, 2025
img
ফের পেছাল বিপিএলের নিলাম Nov 20, 2025
img
ব্রাহ্মণবাড়িয়া-৪ আসনে বিএনপির মনোনয়ন পুনর্বিবেচনার দাবিতে মশাল মিছিল Nov 20, 2025
img
ইউরোপকে পারমাণবিক অস্ত্র অর্জনের আহ্বান জানাল এয়ারবাস চেয়ারম্যান Nov 20, 2025
img
ড. ইউনূসকে বিশ্বাসের চরম মূল্য দিতে হবে বিএনপিকে : এম এ আজিজ Nov 20, 2025
img
চাঁদপুর-২ আসনে বিএনপির মনোনয়ন পরিবর্তনের দাবিতে মশাল মিছিল Nov 20, 2025
img
ভারতকে হারিয়ে র‍্যাঙ্কিংয়ে ৩ ধাপ এগিয়েছে বাংলাদেশ Nov 20, 2025
img
গুন্ডামি-সন্ত্রাস করে আর কেউ জনপ্রতিনিধি হতে পারবে না : নুরুল হক নুর Nov 20, 2025