বিশ্ববাজারে লাফিয়ে লাফিয়ে বাড়ছে স্বর্ণের দাম। এতে ইতিহাসে প্রথমবারের মতো প্রতি আউন্স স্বর্ণের দাম ৩ হাজার ৯৫০ ডলার ছাড়িয়েছে।
বার্তা সংস্থা রয়টার্সের এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, সোমবার (৬ অক্টোবর) স্পট মার্কেটে স্বর্ণের দাম প্রতি আউন্সে ১ দশমিক ৮ শতাংশ বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৩ হাজার ৯৫৬ দশমিক ১৯ ডলারে, যা সেশনের শুরুতে পৌঁছেছিল রেকর্ড ৩ হাজার ৯৬৯ দশমিক ৯১ ডলারে। একই সময়ে ডিসেম্বর ডেলিভারির জন্য মার্কিন স্বর্ণের ফিউচার ১ দশমিক ৭ শতাংশ বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৩ হাজার ৯৭৬ দশমিক ৩০ ডলারে।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, চলতি মাসে ফেডারেল রিজার্ভের সুদের হার কমানোর ক্রমবর্ধমান প্রত্যাশা এবং যুক্তরাষ্ট্র, ফ্রান্স ও জাপানে অর্থনৈতিক ও রাজনৈতিক অনিশ্চয়তার কারণে নিরাপদ বিনিয়োগ হিসেবে স্বর্ণের চাহিদা হঠাৎ বেড়ে গেছে।
ম্যারেক্স বিশ্লেষক এডওয়ার্ড মেইর বলেন, ‘ফ্রান্সের রাজনৈতিক অস্থিরতা, মুদ্রাস্ফীতি নিয়ে উদ্বেগের মধ্যে জাপানের উৎপাদন বৃদ্ধি এবং চলমান মার্কিন সরকারি অচলাবস্থা- সব মিলিয়ে স্বর্ণের দাম বাড়ছে।’
ফ্রান্সে নতুন প্রধানমন্ত্রী সেবাস্তিয়ান লেকর্নু ও তার সরকার দায়িত্ব নেয়ার কয়েক ঘণ্টা পর পদত্যাগ করেছেন, যা দেশের রাজনৈতিক সংকটকে আরও গভীর করেছে। মার্কিন সরকারের অচলাবস্থা এরমধ্যেই ষষ্ঠ দিনে প্রবেশ করেছে এবং হোয়াইট হাউস ফেডারেল কর্মীদের চাকরি ছাঁটাইয়ের হুমকি দিয়েছে।
এছাড়া ফেডের সুদের হার কমানোর আশা, নিরাপদ বিনিয়োগের চাহিদা এবং ডলারের দুর্বলতার কারণে এ বছর স্বর্ণের দাম প্রায় ৫০ শতাংশ বেড়েছে। মার্চে প্রথমবারের মতো প্রতি আউন্সের দাম ৩ হাজার ডলার অতিক্রম করেছিল, এবং সেপ্টেম্বরের শেষের দিকে তা ৩ হাজার ৮০০ ডলারে পৌঁছায়। মেইর আরও বলেন, ‘এখন আমরা ৪ হাজার ডলার প্রতি আউন্সের কাছাকাছি। কিছু তহবিল হয়ত এই লক্ষ্য পূরণের জন্য দামকে আরও বাড়াচ্ছে।’
কেসিএম ট্রেডের প্রধান বাজার বিশ্লেষক টিম ওয়াটারার বলেন, 'জাপানের এলডিপি নির্বাচনের পর ইয়েনের দুর্বলতা বিনিয়োগকারীদের আত্মবিশ্বাস কমিয়ে দিয়েছে। ফলে অনেকেই নিরাপদ বিকল্প হিসেবে স্বর্ণের দিকে ঝুঁকছেন। অন্যদিকে মার্কিন সরকারের অচলাবস্থা দেশটির অর্থনীতি ও জিডিপি নিয়ে অনিশ্চয়তা তৈরি করেছে। এই অবস্থায় স্বর্ণ এখন বিনিয়োগকারীদের কাছে সবচেয়ে নির্ভরযোগ্য সম্পদ।'
ওয়াটারার আরও বলেন, 'ফেড যদি চলতি মাসে আবার সুদের হার কমায়, তাহলে স্বর্ণের চাহিদা আরও বাড়বে। কম সুদের পরিবেশে স্বর্ণই সবচেয়ে লাভজনক বিনিয়োগে পরিণত হয়।'
কম সুদের হারের পরিবেশ এবং অর্থনৈতিক অনিশ্চয়তার সময়ে স্বর্ণের চাহিদা বেড়ে যায়। বিনিয়োগকারীরা আশা করছেন, এই মাসে ফেডারেল রিজার্ভ ২৫ বেসিস পয়েন্ট সুদ কমাতে পারে, এবং ডিসেম্বরে আরও ২৫ বেসিস পয়েন্ট কমানোর সম্ভাবনা রয়েছে। এ কারণেই স্বর্ণের দাম বৃদ্ধি পাচ্ছে। ইউবিএস জানিয়েছে, সোনার দাম বাড়ার কারণগুলো মৌলিক ও বাজারের গতির দুইদিকেই রয়েছে। আশা করা যাচ্ছে বছরের শেষ নাগাদ দাম ৪ হাজার ২০০ ডলার প্রতি আউন্স পর্যন্ত যেতে পারে।’
এছাড়া অন্যান্য ধাতুও দামের ঊর্ধ্বগতি দেখাচ্ছে। স্পট রুপার দাম ১ দশমিক ৪ শতাংশ বেড়ে প্রতি আউন্স ৪৮ হাজার ৬৬ ডলারে পৌঁছেছে। এছাড়া প্লাটিনাম ১ দশমিক ৪ শতাংশ বেড়ে ১ হাজার ৬২৬ দশমিক ৭৫ ডলার, এবং প্যালাডিয়াম ৪ দশমিক ৩ শতাংশ বেড়ে ১ হাজার ৩১৫ দশমিক ১৭ ডলারে দাঁড়িয়েছে।
পিএ/টিকে