মাদাগাস্কারের প্রেসিডেন্ট অন্দ্রি রাজোয়েলিনা ব্যাপক বিক্ষোভের মুখে সরকার ভেঙে দেওয়ার পর এবার নতুন প্রধানমন্ত্রী হিসেবে সেনাবাহিনীর জেনারেল রুফিন ফর্চুনাত জাফিসাম্বোকে নিয়োগ দিয়েছেন। তিনি সাবেক প্রধানমন্ত্রী ক্রিশ্চিয়ান ন্তসাইয়ের স্থলাভিষিক্ত হচ্ছেন।
সোমবার এক ঘোষণায় প্রেসিডেন্ট রাজোয়েলিনা বলেন, দেশ এখন এমন একজন প্রধানমন্ত্রীর প্রয়োজন, যিনি ‘আইনশৃঙ্খলা পুনঃপ্রতিষ্ঠা ও জনগণের আস্থা ফিরিয়ে আনতে সক্ষম।’
গত তিন সপ্তাহ ধরে চলমান বিদ্যুৎ ও পানির সংকটবিরোধী বিক্ষোভ ক্রমেই সহিংস আকার ধারণ করছে।
গত সপ্তাহে মন্ত্রিসভা বিলুপ্ত ঘোষণা করলেও আন্দোলন থামেনি। বিক্ষোভকারী এখন প্রেসিডেন্টের পদত্যাগও দাবি করছেন।
২৫ সেপ্টেম্বর থেকে শুরু হওয়া এসব বিক্ষোভের সূত্রপাত ঘটে সারাদেশে ব্যাপক বিদ্যুৎ বিভ্রাট ও পানি সংকটের কারণে। পুলিশ বিক্ষোভকারীদের ছত্রভঙ্গ করতে টিয়ার গ্যাস ও রাবার বুলেট ব্যবহার করছে। বিভিন্ন শহরে দোকানপাটে লুটপাট ও হামলার ঘটনাও ঘটেছে। রাজধানী আন্তানানারিভোতে রাত্রিকালীন কারফিউ জারি করা হয়েছে এবং প্রধান সড়কগুলোতে ব্যারিকেড বসানো হয়েছে, তবু অস্থিরতা থামেনি।
‘জেন জি মাদাগাস্কার’ নামে তরুণদের নেতৃত্বে গড়ে ওঠা আন্দোলনের ব্যানারে হাজার হাজার মানুষ রাজধানী ও বিভিন্ন শহরে রাস্তায় নেমেছেন। তাদের স্লোগান— ‘রাজোয়েলিনা আউট,’ ‘আমরা গরিব, ক্ষুব্ধ ও অসুখী,’ ‘মাদাগাস্কার আমাদের।’
রাষ্ট্রীয় টেলিভিশন টেলেভিজোনা মালাগাসি-তে দেওয়া ভাষণে প্রেসিডেন্ট রাজোয়েলিনা বলেন, বিদ্যুৎ বিভ্রাট ও পানির সংকটের কারণে জনগণের ক্ষোভ, কষ্ট ও দুর্ভোগ আমি বুঝতে পারছি। আমি তাদের ডাকে সাড়া দিচ্ছি এবং তাদের যন্ত্রণা অনুভব করছি।
রাজোয়েলিনা ২০০৯ সালে এক অভ্যুত্থানের মাধ্যমে ক্ষমতায় আসেন। প্রায় পাঁচ বছর অন্তর্বর্তী প্রশাসন পরিচালনার পর ২০১৮ সালে নির্বাচিত প্রেসিডেন্ট হন তিনি। ২০২৩ সালের নির্বাচনে তিনি পুনরায় নির্বাচিত হন, যদিও সে সময়ও বিক্ষোভ ও বিরোধীদের বর্জন ছিল। ক্ষমতায় থেকে তিনি শিল্পায়ন, বিদ্যুতায়ন ও মৌলিক সেবার সম্প্রসারণের মাধ্যমে ‘একটি শক্তিশালী ও সমৃদ্ধ মাদাগাস্কার’ গড়ার প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন।
তবে সাম্প্রতিক বিক্ষোভ মাদাগাস্কারের বাইরেও তরুণ প্রজন্মের অসন্তোষের প্রতিফলন বলে বিশ্লেষকরা মনে করছেন। মরক্কোর মতো দেশেও ‘GenZ 212’ ও ‘Morocco Youth Voices’-এর মতো সংগঠনের নেতৃত্বে দুর্বল সরকারি সেবার বিরুদ্ধে অনলাইন ও সড়কে প্রতিবাদ চলছে, যা পরিণত হয়েছে সহিংসতা ও সরকারি স্থাপনায় হামলায়।
সূত্র: রয়টার্স
ইউটি/টিকে