রাজনৈতিক বিশ্লেষক ডা. জাহেদ উর রহমান বলেছেন, ‘বাংলাদেশ মৌলবাদীদের হাতে চলে যাচ্ছে—এ ধরনের একটা ন্যারেটিভ খুব জোরেশোরে দাঁড় করানোর চেষ্টা চলছে।’ গতকাল ওস্তাদ আলাউদ্দিন খাঁর জন্মবার্ষিকী উপলক্ষে লালবাগ কেল্লায় একটি সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানে ক্লাসিক গানের আয়োজন ছিল। সেই আয়োজন ঠেকাতে গিয়েছিল বেশ কিছু মানুষ। তারা নাচ-গান করতে দেবে না।
এগুলো ফ্যাসিজম। পরে গান হয়েছে পুলিশের হস্তক্ষেপে। তবে পুলিশের বক্তব্যে একটি মারাত্মক ব্যাপার আছে। যেটা আমাদের ভবিষ্যৎ নিয়ে মারাত্মক আশঙ্কা তৈরি করেছে।
বৃহস্পতিবার (৯ অক্টোবর) ডা. জাহেদ উর রহমান তার ইউটিউব চ্যানেলে দেওয়া এক ভিডিওতে এসব কথা বলেন।
তিনি বলেন, ‘এগুলো যারা করার চেষ্টা করছে ইসলামের নামে, তৌহিদি জনতার নামে তারা দিনের শেষে আওয়ামী লীগ ও ভারতের ন্যারেটিভ এস্টাবলিস্ট করে।’
লালবাগ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মোস্তফা কামাল খানের উদ্বৃতি দিয়ে জাহেদ উর রহমান বলেন, ‘তারা (যারা গান থামাতে এসেছিলেন) মনে করেছিলেন এখানে নাচ ও গানের আয়োজন করা হয়েছে। পরবর্তীতে আমরা তাদের এই আয়োজন সম্পর্কে বিস্তারিত জানিয়েছি।
তারা বিষয়টি বুঝতে পেরে চলে গেছেন।’
জাহেদ উর রহমান বলেন, ‘ওসি তাদের বুঝিয়েছেন এখানে নাচ-গান হচ্ছে না। বোঝানোর পর তারা চলে গেছেন। ওসি মেনে নিচ্ছেন এখানে যদি নাচ-গান হতো তাহলে অনুষ্ঠানটা তারা বন্ধ করে দিতেন। অথচ ওসির বলা উচিত ছিল, এখানে কোনো অন্যায় কাজ হচ্ছে না।
এখানে বেআইনি কাজ হচ্ছে না। এখানে যা হচ্ছে তা বাংলাদেশের আইনে বেআইনি নয়। বাংলাদেশের আইনে বেআইনি কোনো কাজ যদি না হয়। সেটা কেউ বাধা দিতে পারবে না। ফুলস্টপ।’
রাজনৈতিক এই বিশ্লেষক বলেন, ‘এই যে যারা গতকাল গান বন্ধ করতে গেলেন এবং এসব স্লোগান দিলেন এসব বক্তব্য দিলেন শেখ হাসিনা থাকলে কি দিতেন-যেতেন? এই সাহস হতো? এই হ্যাডাম হতো না, হ্যাডাম কেন তৈরি হচ্ছে—আসলে এটা দেখা দরকার আছে। এটাই হলো সংকটের জায়গা। এটাই শেখ হাসিনা বা ভারত এস্টাবলিস্ট করতে চেয়েছে।’
তিনি আরো বলেন, ‘বাংলাদেশ এখন পর্যন্ত একটা কনস্টিটিউশনাল এবং লিগ্যালি একটা উদার গণতান্ত্রিক দেশ। এই গণতান্ত্রিক দেশে এমন কিছু ঘটবে, যেগুলো বেআইনি না। ধর্মীয় দৃষ্টিভঙ্গি থেকে অবস্থান থাকতে পারে। সেটাকে অ্যাভয়েড করতে পারেন। এমনকি সেটার বিপক্ষে ক্যাম্পেইন করতে পারেন।
প্রচুর ধর্মগুরু মিউজিকের বিরুদ্ধে নাচ-গানের বিরুদ্ধে ওয়াজ করছেন। সমস্যা নাই। তারা মানুষকে মোটিভেট করুক। যদি কেউ অনুপ্রাণিত হন যাবেন না। কিন্তু এগুলো হতে দেওয়া যাবে না। এগুলো হবে না। এগুলো ফ্যাসিজম। এগুলোর বিরুদ্ধে এই সরকারকে এবং ভবিষ্যৎ সরকারকে খুবই কঠোর অবস্থান নিতে হবে।’
আইকে/টিকে