আইন উপদেষ্টা

রাষ্ট্রপতি কখনোই স্বাধীনভাবে প্রধান বিচারপতি নিয়োগ করেননি

আইন উপদেষ্টা ড. আসিফ নজরুল বলেছেন, রাষ্ট্রপতি কখনোই স্বাধীনভাবে প্রধান বিচারপতি নিয়োগ করেননি। সব সময় প্রধানমন্ত্রীর ইচ্ছায় হয়েছে বলেও উল্লেখ করেন তিনি।

শনিবার (১১ অক্টোবর) রাজধানীর একটি হোটেলে ‘খসড়া জাতীয় মানবাধিকার কমিশন অধ্যাদেশ ২০২৫’ বিষয়ক জাতীয় পরামর্শ সভায় তিনি এমন মন্তব্য করেন।

তিনি বলেন, ‘ভালো আইন হচ্ছে একটি ভিত্তি। কিন্তু এটি নিয়ে বেশি আশার করার কিছু নেই। আশা করবো হিউম্যান রাইটসের যে আইনটা হয়েছে, সেটি যেন একটি প্রতিষ্ঠানে পরিণত হয়।’
‘কিছু কিছু প্রতিষ্ঠানকে অত্যন্ত শক্তিশালী হিসেবে গড়ে তুলতে হবে। সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ উচ্চ আদালত এবং সংসদীয় কমিটি’। যোগ করেন আসিফ নজরুল।

একই অনুষ্ঠানে আইন উপদেষ্টা বলেন, উপদেষ্টা হিসেবে আমাদের সেফ এক্সিটের প্রয়োজন নেই। তবে জাতি হিসেবে আমাদের সেফ এক্সিটের প্রয়োজন রয়েছে।

তিনি বলেন, আমরা হয়তো খুব ভালো ভালো কিছু করে যাচ্ছি। ভালো ল’ করা মানেই পুরা দেশটা চেঞ্জ হয়ে যাবে। এটা মানে আশা করার মতো বয়স আমার আর নাই। অনেক তো দেখলাম অনেক ভালো ভালো আইনও করা হয়। কিন্তু আল্টিমেটলি প্রতিষ্ঠান দাঁড়ায় না। আইন করার ক্ষেত্রে আমাদের কিন্তু ব্যর্থতার ইতিহাস কম। আমরা অনেক অনেক ভালো ভালো আইন করি। প্রতিষ্ঠান করার ক্ষেত্রে আমাদের ব্যর্থতা সীমাহীন।

রাষ্ট্রপতি কখনোই স্বাধীনভাবে প্রধান বিচারপতি নিয়োগ করেননি

তিনি বলেন, এটা প্রায়ই মনে হয় আমাদের ৭২ এর সংবিধানে কিছু সীমাবদ্ধতা ছিল, কিছু ভালো জিনিসও ছিল। একটা খুব ভালো বিধান ছিল রাষ্ট্রপতি প্রধান বিচারপতিকে স্বাধীনভাবে নিয়োগ করবে। আপনারা জানেন এটা এই উদ্দেশ্যেই করা হয়েছিল যেন এখানে রাজনৈতিক প্রভাব না থাকে। রাষ্ট্রপতি স্বাধীনভাবে দুইটা কাজ করতে পারে- তার মধ্যে আসলে একটা কাজ করতে পারে সেটা হচ্ছে প্রধান বিচারপতিকে নিয়োগ করা। কিন্তু আপনারা সবাই জানেন রাষ্ট্রপতি কখনই প্রধান বিচারপতিকে স্বাধীনভাবে নিয়োগ করেননি। প্রধানমন্ত্রীর ইচ্ছা অনুযায়ী বাংলাদেশে সব সময় প্রধান বিচারপতি নিয়োগ পেয়েছেন।

উপদেষ্টা বলেন, আমরা এ ক্ষেত্রে এমন প্রধান বিচারপতিও পেয়েছি যারা মানবাধিকার লঙ্ঘনের ক্ষেত্রে নেতৃত্ব দিয়েছেন। দেশের নির্বাচন ব্যবস্থা ধ্বংস করার ক্ষেত্রে নেতৃত্ব দিয়েছেন। দেশের গণতন্ত্র ধ্বংস করার ক্ষেত্রে নেতৃত্ব দিয়েছেন। এবং যারা গুম ও বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ড এসব নিজের চোখে দেখে উপেক্ষা করেছেন।

আইন উপদেষ্টা বলেন, আমরা ইনস্টিটিউশনাল রিফর্মের পথে কিছুদূর অগ্রসর হয়েছি। পুরোটা করতে পারিনি। পরের যারা ইলেক্টেড গভর্নমেন্ট আসবে তাদের কাছে এই দায়িত্বটা থাকবে।

তিনি আরও বলেন, আপনারা জানেন এখন সেইফ এক্সিট নিয়ে নানা কথা হচ্ছে। আমরা উপদেষ্টারা খুব নিশ্চিতভাবে জানি আমাদের কারও কোনো সেইফ এক্সিটের প্রয়োজন নেই, তবে বাংলাদেশের হিসেবে আমাদের সেফ এক্সিটের প্রয়োজন আছে। আমরা এই যে গত ৫৫ বছর দুঃশাসন দেখলাম, গুম দেখলাম, বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ড, ব্যাংক লুট করে ফেলে জনগণের সাধারণ মানুষের আমানতের রাখা টাকা এস আলমের গ্রুপের কাজের লোক, ড্রাইভার, এদের শেয়ারহোল্ডার বানিয়ে লুট করে নিয়ে যাচ্ছে। এই ভয়াবহ অসুস্থ আত্ম ধ্বংসী রাষ্ট্র থেকে আমাদের সেফ এক্সিট প্রয়োজন। এটার জন্য আমাদের কিছু কিছু প্রতিষ্ঠানকে অত্যন্ত শক্তিশালীভাবে গড়ে তুলতে হবে।

আসিফ নজরুল বলেন, আমি মনে করি এর মধ্যে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ হচ্ছে উচ্চ আদালত এবং সংসদীয় কমিটি। এর সঙ্গে সঙ্গে আরও কিছু প্রতিষ্ঠানের জবাবদিহি। কিছু প্রতিষ্ঠানকে আমাদের অত্যন্ত শক্তভাবে দাঁড় করাতে হবে। তার মধ্যে সবচেয়ে উল্লেখযোগ্য হচ্ছে- জাতীয় মানবাধিকার কমিশন। এটা যদি আমরা করতে ব্যর্থ হই, তাহলে আমাদের বিদেশি বন্ধুরা ছাড়া বাংলাদেশে যে মানুষজন আছে তারা যে কেউ যে কোনো সময় গুরুতর হিউম্যান রাইটস লঙ্ঘনের শিকার হতে পারেন।

এসময় গৃহায়ন ও গণপূর্ত এবং শিল্প উপদেষ্টা আদিলুর রহমান খান বলেন, আগামী নির্বাচনের আগে মানবাধিকার নিয়ে সঠিক কাজগুলো আমাদের করে যেতে হবে। আজকের বাংলাদেশ, রক্তের বিনিময়ে নতুন বাংলাদেশ। আগামী দিনের জন্য দেশকে নতুন করে তৈরি করতে হবে।

অনুষ্ঠানে পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন এবং পানি সম্পদ বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান এবং লেজিসলেটিভ বিভাগের সচিব ডা. হাফিজ আহমেদ চৌধুরী, ইউএনডিপির আবাসিক প্রতিনিধি স্টিফেন লিলার প্রমুখ বক্তব্য রাখেন।

ইএ/টিকে

Share this news on:

সর্বশেষ

img
বিএনপি সরকারে এলে জিডিপির ৫ শতাংশ শিক্ষা খাতে ব্যয় করবে : শামা ওবায়েদ Oct 11, 2025
img
জুলাই অভ্যুত্থানের পর সাংবাদিকদের অবারিত স্বাধীনতা দেয়া হয়েছে: আজাদ মজুমদার Oct 11, 2025
img

সামান্তা শারমিন

শিক্ষা ব্যবস্থার সমস্যাগুলোকে আইডেন্টিফাই করতে হবে Oct 11, 2025
img
রোববার থেকে দেশে প্রথমবারের মতো টাইফয়েড টিকাদান ক্যাম্পেইন শুরু Oct 11, 2025
img
মাচাদোকে নোবেল শান্তি পুরস্কার দেওয়ায় তীব্র নিন্দা ইরানের Oct 11, 2025
img
জামায়াত সৎ মানুষদের মনোনয়ন দিয়েছে : এটিএম আজহার Oct 11, 2025
img

জিল্লুর রহমানের বিশ্লেষণ

আবারও ভেল্কিবাজি, রাজনীতিতে কালো ছায়া Oct 11, 2025
img
যুক্তরাষ্ট্রের বিরুদ্ধে পাল্টা পদক্ষেপ নিলো চীন Oct 11, 2025
img
গাজায় চালু হচ্ছে ব্যাংকিং কার্যক্রম Oct 11, 2025
অনুশীলনের মাঝেই ৬ কোটি টাকার ক্ষতি রোহিতের Oct 11, 2025
ব্যারিস্টার নুসরাতের হাতে আংটি পরালেন ইশরাক Oct 11, 2025
কি কারণে রাকসু নির্বাচন থেকে সরে দাঁড়ালেন ক্রীড়া সম্পাদক প্রার্থী? Oct 11, 2025
নির্বাচন ও গণভোট একই দিনে হলে ভিন্নমত বিশেষজ্ঞদের! Oct 11, 2025
চাকরি হারিয়ে যা বলছেন ব্যাংক কর্মকর্তারা! Oct 11, 2025
img
এনসিপি দ্বায়িত্বে এলে দুর্নীতিবাজদের মুখোশ উন্মোচন করা হবে: সারজিস Oct 11, 2025
img
৩ ট্রিলিয়ন ডলারের হালাল বাজারেও পিছিয়ে বাংলাদেশ Oct 11, 2025
img
আওয়ামী লীগকে দলে ভেড়াতে সব দল উঠেপড়ে লেগেছে : ডিআইজি পলাশ Oct 11, 2025
img
ফুটবল খেলা শেষ হতেই যুক্তরাষ্ট্রে বন্দুক হামলায় নিহত ৪ Oct 11, 2025
img

প্রেস সচিব

প্রতিরক্ষা বাহিনীর আর কোনো সেনা কর্মকর্তার বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানার পরিকল্পনা নেই Oct 11, 2025
img
ভেনেজুয়েলার বিপক্ষে মেসির না খেলার কারণ Oct 11, 2025