জাতীয় খেলা কাবাডি। সেই কাবাডির বিশ্বকাপ আয়োজন করবে বাংলাদেশ। ১৫-২৫ নভেম্বর ঢাকার মিরপুরস্থ শহীদ সোহরাওয়ার্দী স্টেডিয়ামে ১৪ দেশ নিয়ে হবে নারী বিশ্বকাপের দ্বিতীয় আসর। আজ (বৃহস্পতিবার) দুপুরে বাংলাদেশ অলিম্পিক এসোসিয়েশনে এক সংবাদ সম্মেলনে আনুষ্ঠানিক ঘোষণা দিয়েছে বাংলাদেশ কাবাডি ফেডারেশন।
৩-১৩ আগস্ট ভারতের হায়দরাবাদে কাবাডি বিশ্বকাপ আয়োজন হওয়ার কথা ছিল। বাংলাদেশ সেই টুর্নামেন্টে খেলতে যাওয়ার জন্য সংবাদ সম্মেলন করার পর বিশ্বকাপ স্থগিত হয়। তিন মাস পর সেই বিশ্বকাপ বাংলাদেশে অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে।
ভেন্যু স্থানান্তিরত হওয়ার বিষয়ে কাবাডি ফেডারেশনের সাধারণ সম্পাদক এসএম নেওয়াজ সোহাগ বলেন, ‘ভারতে বিশ্বকাপ স্থগিত হওয়ার পরপরই আন্তর্জাতিক কাবাডি ফেডারেশন বাংলাদেশকে প্রস্তাব দেয়। কাবাডি ফেডারেশন সেটা ইতিবাচকভাবে গ্রহণ করে জাতীয় ক্রীড়া পরিষদ ও মন্ত্রণালয়ের সঙ্গে আলোচনা করে। সরকারের সিদ্ধান্ত ও অনুমোদনের পরই আমরা স্বাগতিক হিসেবে আনুষ্ঠানিক সম্মতি প্রকাশ করি। আন্তর্জাতিক কাবাডি ফেডারেশনও বাংলাদেশকে স্বাগতিক হিসেবে সম্মত হয়েছে।’
বিশ্বকাপের মতো আসর আয়োজন অনেক ব্যয়বহুল। কাবাডি ফেডারেশন ১৪ দেশের এই আয়োজনের জন্য ১০ কোটি টাকার বেশি বাজেট নির্ধারণ করেছে। এর মধ্যে ক্রীড়া মন্ত্রণালয় থেকে ৫ কোটি টাকা পাওয়ার নিশ্চয়তা পেয়েছে। বাকি টাকা স্পন্সরের মাধ্যমে জোগাড় করবে। এ নিয়ে সাধারণ সম্পাদক বলেন, ‘আন্তর্জাতিক ফেডারেশন অংশগ্রহণকারীদের বিমান ব্যয় বহন করবে। তারা ঢাকা বিমানবন্দরে আসার পর থেকে আবার দেশে ফেরা পর্যন্ত এয়ারপোর্ট পর্যন্ত সকল ব্যয় বহন করতে হবে কাবাডি ফেডারেশনকে। আমরা ফেডারেশনের গচ্ছিত ফান্ড ব্যবহার করব না। আমাদের লক্ষ্য পৃষ্ঠপোষকতা এনে আরও ফেডারেশনের রাজস্ব বৃদ্ধি করা।’
ফুটবল, ক্রিকেট বাদে দেশের অন্য সকল ফেডারেশনে আর্থিক সীমাবদ্ধতা অনেক। প্রতিভাবান দাবাড়ু, অ্যাথলেট, সাঁতারু দেশের বাইরে খেলতে যেতে পারেন না আর্থিক অসঙ্গতির কারণে। অনেক ফেডারেশনও আন্তর্জাতিক টুর্নামেন্ট আয়োজন করতে পারে না আর্থিক কারণে। কাবাডি বিশ্বকাপে ক্রীড়া মন্ত্রণালয় ৫ কোটি টাকা প্রদানের সিদ্ধান্ত খুব দ্রুতই দিয়েছে।
আজ সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত থাকা জাতীয় ক্রীড়া পরিষদের নির্বাহী পরিচালক কাজী নজরুল ইসলাম বলেন, ‘আমাদের আর্থিক সীমাবদ্ধতা রয়েছে নিঃসন্দেহে। এরপরও বিশ্বকাপের আলাদা একটি মর্যাদা ও গুরুত্ব রয়েছে যা অন্য সকল আন্তর্জাতিক টুর্নামেন্টের চেয়ে অবশ্যই ভিন্ন। কাবাডি ফেডারেশনের চাহিদার ভিত্তিতে জাতীয় ক্রীড়া পরিষদ প্রাথমিক মূল্যায়ন করেছে। এরপর ক্রীড়া মন্ত্রণালয় তাদের পর্যবেক্ষণ দিয়েছে এরপর অর্থ মন্ত্রণালয় এটা অনুমোদন দিয়েছে।’
বাংলাদেশ কাবাডি ফেডারেশন বিগত কয়েক বছর আমন্ত্রণমূলক আন্তর্জাতিক কাবাডি টুর্নামেন্ট করেছে। সেখানেও কয়েক কোটি টাকা ব্যয়ের পর দল চ্যাম্পিয়নও হয়েছে। কাবাডির মূল মঞ্চ এশিয়ান গেমসে বাংলাদেশ চরম ভরাডুবি করেছে। জাতীয় ক্রীড়া পরিষদের নির্বাহী পরিচালক ফেডারেশনগুলোর ফলাফলের ডাটাবেজের মাধ্যমে জবাবদিহিতার নিশ্চয়তার কথা জানিয়েছেন।
বিশ্বকাপের ভেন্যু মিরপুরের ইনডোর স্টেডিয়ামে রাষ্ট্রীয় কাজে ব্যবহৃত হচ্ছে। বিশ্বকাপ শুরুর আগে দলগুলোর অনুশীলন করতে পারবে এমন আশাবাদ ব্যক্ত করে ফেডারেশনের সহ-সভাপতি ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মোতাহের হোসেন বলেন, ‘আমরা আন্তর্জাতিক কাবাডি ফেডারেশনের নিরাপত্তা ও স্টেডিয়াম গাইডলাইন অনুসরণ করব। আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সঙ্গে আমাদের আলোচনা হয়েছে। খেলোয়াড়দের নিরাপত্তা সবার আগে। আমরা সেটা নিশ্চিত করব এবং স্টেডিয়াম আন্তর্জাতিক গাইডলাইন অনুসরণ করেই খেলা এবং অনুশীলন হবে।’
২০১২ সালের পর আবার নারী কাবাডি বিশ্বকাপ হচ্ছে। এই বিশ্বকাপে স্বাগতিক বাংলাদেশ ছাড়াও অংশগ্রহণ করবে ভারত, আর্জেন্টিনা, চাইনিজ তাইপে, জার্মানি, নেদারল্যান্ডস, ইরান, জাপান, কেনিয়া, দক্ষিণ কোরিয়া, নেপাল, থাইল্যান্ড, উগান্ডা এবং জাঞ্জিবার। পাকিস্তান ও পোল্যান্ড স্ট্যান্ডবাই হিসেবে রয়েছে। বাংলাদেশের লক্ষ্য সম্পর্কে সাধারণ সম্পাদক বলেন,‘নারী এশিয়া কাপ কাবাডিতে আমরা ব্রোঞ্জ জিতেছি সম্প্রতি। ফলে বিশ্বকাপেও আমাদের শীর্ষ তিনের মধ্যে থাকার সম্ভাবনা রয়েছে। ’
অংশগ্রহণকারী ১৪ দল দুই গ্রুপে রাউন্ড রবিন লিগ পদ্ধতিতে খেলার সম্ভাবনাই বেশি। টুর্নামেন্টের ২-৩ দিন আগে টুর্নামেন্ট ডিরেক্টর ড্র পদ্ধতি ঠিক করবেন।
টিজে/এসএন