ঘুমাতে সাহায্য করবে যেসব পানীয়

সুস্বাস্থ্যের জন্য রাতের গভীর ঘুম খুব প্রয়োজনীয়। বিশেষজ্ঞদের মতে, ১৮ থেকে ৬০ বছর বয়সী লোকদের প্রতিরাতে ৭-৯ ঘণ্টা টানা ঘুম প্রয়োজন।

খুব কম বা খুব বেশি ঘুম ডায়াবেটিস, বিষণ্ণতা, হৃদরোগ, এমনকি মৃত্যুর কারণ হয়েও দাঁড়াতে পারে। কিন্তু প্রতিরাতে ৭ ঘণ্টা ঘুমানো সবার জন্য এত সহজ ব্যাপার নয়।

তবে, আশার কথা হচ্ছে এমন কিছু পানীয় রয়েছে, যা আপনাকে ঘুমাতে সাহায্য করবে।

চলুন সেসব পানীয় সম্পর্কে জেনে নিই-

চেরি জুস
চেরি জুস একটি সুস্বাদু পানীয়। তবে জাতের উপর ভিত্তি করে এটি মিষ্টি, টক বা টক-মিষ্টি হতে পারে এবং লাল, হলুদ বা গাড় বেগুনি রঙের হয়ে থাকে।

চেরিতে থাকা ‘ট্রিপটোফ্যান’ শান্তির ঘুম নিশ্চিত করে। ট্রিপটোফ্যান একটি অ্যামিনো অ্যাসিড, যাকে ম্যালাটোনিন হরমোনের অগ্রদূত বলা হয়ে থাকে। যদিও মিষ্টি ও টক-মিষ্টি চেরিতে ম্যালাটোনিন থাকে, তবে টক-মিষ্টি চেরিতে এর পরিমাণ বেশি।

আমেরিকার ন্যাশনাল ইন্সটিটিউট অব হেলথের পাব মেড সেন্ট্রাল আর্কাইভের একটি গবেষণায় দেখা গেছে, প্রতিদিন দুই কাপ পর্যন্ত চেরি জুস খাওয়া যেতে পারে। দৈনিক ৪৮০ মি.লি. চেরি জুস পানে কোনো পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া হয় না।

অশ্বগন্ধা
অশ্বগন্ধা একটি শক্তিশালী ভেষজ, এটি ইন্ডিয়ান জিনসেং বা উইন্টার চেরি নামেও পরিচিত। অশ্বগন্ধা গাছের শিকড়, ফল, ও পাতার নির্যাস অস্থিরতাসহ বিষণ্ণতা উপশমে ব্যবহৃত হয়। অশ্বগন্ধা চিরাচরিতভাবে আয়ুর্বেদিক ওষুধ হিসেবে ব্যবহৃত হয়। এর শিকড়ে থাকা উপাদানগুলো ঘুমের ক্ষেত্রে খুবই উপকারী হিসেবে বিবেচিত।

একটি গবেষণায় দেখা গেছে, এতে থাকা গ্লাইসল এমন একটি উপাদান, যা ঘুমের ক্ষেত্রে খুবই উপকারী। এটি চোখের দ্রুত নড়াচড়া কমিয়ে দেয়, যা ঘুমাতে সাহায্য করে। এছাড়া ঘুমের সময় আমাদের দেহ কোষ এবং হাড়ের পুনঃ-সংস্কার হয়।

অশ্বগন্ধা দেহে বায়ু নিম্নমুখী করে এবং বিশ্রামের জন্য প্রস্তুত করে তোলে, যার ফলে ঘুমের উৎকর্ষতা বৃদ্ধি পায়। আপনি চাইলে অশ্বগন্ধা টি-ব্যাগও কিনে ব্যবহার করতে পারেন। এছাড়াও অশ্বগন্ধা গুড়ো দুধের সঙ্গে মিশিয়ে পান করা যেতে পারে।

পিপারমিন্ট চা
ঐতিহ্যগতভাবে পিপারমিন্ট ওষুধ হিসেবে দীর্ঘদিন ধরে ব্যবহার হয়ে আসছে। এতে অ্যান্টিভাইরাল, অ্যান্টিমাইক্রোবিয়াল ও অ্যান্টিঅ্যালার্জিক উপাদান রয়েছে। এটি ভালো ঘুমের ক্ষেত্রেও খুব উপকারী।

পিপারমিন্ট চা বানানো খুব সহজ। দুই কাপ পানি গরম করে তাতে পর্যাপ্ত পরিমাণ পিপারমিন্ট পাতা ছেড়ে দিলেই চা তৈরি হয়ে যাবে।

গরম দুধ
এটি পুরনো গল্প মনে হতে পারে, কিন্তু অনেক নামকরা সংস্থাই গরম দুধের কথা বলে থাকে। কারণ, গরম দুধে ট্রিপটোফ্যান থাকে। ট্রিপটোফ্যান প্রাকৃতিকভাবে সেরোটোনিনের পরিমাণ বৃদ্ধি করে। এটি একটি নিউট্রোট্রান্সমিটার, যা আনন্দ ও সুস্বাস্থ্যের জন্য পরিচিত। এছাড়াও সেরোটোনিন ঘুমের জন্য দায়ী মেলাটোনিন হরমোনের নিঃসরণ ঘটায়।

অতিসাধারণভাবে, ট্রিপটোফ্যান সেরোটোনিন বৃদ্ধি করে আর সেরোটোনিন মেলাটোনিন বৃদ্ধি ঘটায়।

হলুদ দুধ
হলুদের সঙ্গে দুধ মিশ্রিত করে খেলে রাতের ঘুম ভালো হয়। কারণ আমরা জানি দুধ আমাদের দেহে মেলাটোনিনের পরিমাণ বাড়ায় এবং হলুদে থাকে কারকিউমিন, যা একইসঙ্গে ঘুমের জন্য উপকারী। এটি প্রদাহনাশক হিসেবেও কাজ করে।

হলুদ চা বানাতে ২/১ কাপ গরম দুধে ১ চা চামচ হলুদ ছেড়ে দিতে হবে।

কাজু ও দুধ
কাজু একটি বিশেষ শ্রেণীর বাদাম, যা খাদ্য আঁশ, ভিটামিন ও মিনারেলে পরিপূর্ণ। আস্ত আলমন্ডও ঘুমের গভীরতা বাড়াতে পারে, তবে দুধের সঙ্গে মিশ্রণ ঘটালে এর কার্যকারিতা বাড়ে।

একটি গবেষণায় দেখা গেছে, যাদের ঘুমের সমস্যা আছে প্রতিদিন ১০টি কাজু খেলে দুই সপ্তাহে তাদের সমস্যা ৮.৪ শতাংশ পর্যন্ত হ্রাস পায়।

কাজু-কলার স্মুদি
কলা ম্যাগনেসিয়াম, ট্রিপটোফ্যান ও মেলাটোনিন সমৃদ্ধ। এতে উচ্চমাত্রার পটাসিয়ামও থাকে। পটাসিয়াম ও ম্যাগনেসিয়াম এমন দু’টি খনিজ উপাদান, যা পেশি শিথিল করতে কার্যকর।

কলা ও কাজুর তৈরি দুধ একত্রে মেশালে যে স্মুদি তৈরি হবে তাতে অনেক বেশি পরিমাণে ট্রিপটোফ্যান ও মেলাটোনিন পাওয়া যাবে। যা ঘুমের সমস্যা দূর করতে খুবই কার্যকর। তথ্যসূত্র: হেলথলাইন.কম

 

টাইমস/এনজে/জিএস

Share this news on: